মালদা, 6 অক্টোবর: যুগ পালটেছে ৷ প্রথাও পালটেছে ৷ তবে কিছু কিছু রীতি এখনও অপরিবর্তিত ৷ গতকাল সন্ধ্য়ায় চাঁচলে ধরা পড়ল তেমনই এক ছবি ৷ এখন আর লণ্ঠন নয়, টর্চ আর মোবাইলের ফ্লাশ লাইটে দেবীকে বিদায় দিলেন সাইফুল, রহিম, আয়েশারা ৷ কয়েকশো বছরের পুরোনো রীতিকে বিজ্ঞানের সঙ্গে পা মিলিয়েই ধরে রেখেছেন তাঁরা (Minorities participate in Durga Idol Immersion as per tradition) ৷
কয়েকশো বছর ধরে চাঁচলের পাহাড়পুর চণ্ডীমন্দিরের দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জনে মরা মহানন্দার সতীঘাটে এই প্রথা এখনও চলে আসছে ৷ কারণ যাই হোক না কেন, উৎসব যে ধর্মের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পারে না, তা এই ছবিতেই স্পষ্ট ৷ কথিত রয়েছে, কোনও এক সময় সতীঘাটের পাশে থাকা গ্রামগুলিতে মড়ক লেগেছিল ৷ প্রাণ বাঁচাতে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছিলেন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই গ্রামগুলির বাসিন্দারা ৷
মালদার চাঁচলে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনে আলো দেখালেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আরও পড়ুন:খড়্গপুরে অনুষ্ঠিত হল রাবণ দহন উৎসব
সেই সময় সাউরগাছি গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নাকি দেবী চণ্ডীর স্বপ্নাদেশ পান ৷ দেবী তাঁকে নির্দেশ দেন, দুর্গাদশমী তিথিতে বিসর্জনের সময় আলো দেখাতে হবে তাঁকে ৷ সেই আলোয় পথ দেখে তিনি বহমান নদীর জলে ভেসে কৈলাশে পাড়ি দেবেন ৷ দেবীর নির্দেশ মেনে সাউরগাছি গ্রামের সবাই বিদায়বেলায় তাঁকে আলোয় ঘাটের পথ দেখান ৷ তারপরেই নাকি মড়ক দূর হয় ৷ সেই শুরু ৷ আজও দশমী তিথিতে বিসর্জনের সময় মাকে আলোয় পথ দেখান ওই গ্রামের বাসিন্দারা তথা মুসলিম ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষেরা ৷
বুধবার সন্ধেয় রাজ আমলের এই পুজোর বিসর্জনে সেই প্রাচীন রীতির ছবি ধরা পড়ল ৷ তবে এখন আর লণ্ঠন হাতে নয় ৷ এখন টর্চ আর মোবাইলের ফ্লাশ লাইটে বিদায়বেলায় মাকে পথ দেখিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ৷ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সোহরাব আলি বলেন, "শুনেছি, গ্রামে মহামারি দূর করতে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন ৷ বাবা-ঠাকুরদারাও দশমীর সন্ধ্যায় দেবীকে আলো দেখিয়েছেন ৷ তবে এখন তো আর লণ্ঠন নেই, তাই মোবাইল আর টর্চের আলোয় দেবীকে পথ দেখিয়েছি ৷ অনেক প্রাচীন এই রীতি ৷" একই বক্তব্য আরেক গ্রামবাসী শেখ সাইফুল বলেন, "এই রীতি 300-350 বছরের পুরনো ৷ জন্ম থেকেই এই প্রথার কথা আমরা শুনে আসছি ৷ আজও সেই রীতি আমরা মেনে চলি ৷"
আরও পড়ুন: বাগবাজারের মায়ের সিঁদুরের গুণ কী ? জানালেন মদন