মালদা, 5 ডিসেম্বর : সোশাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে অশালীন পোস্টের দায়ে গ্রেপ্তার মিম (সারা ভারত মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-আল-মুসলিমিন)-এর কার্যকর্তা । মিমের মালদা জেলার আহ্বায়ক ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান । চাঁচল থানার পুলিশ গতরাত দুটো নাগাদ মতিউর সাহেবকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে চাঁচল থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে ৷ আজই তাঁকে চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে ৷ তবে এনিয়ে এখনও জেলার পুলিশকর্তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ এদিকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্দোলন সংগঠিত করতে মালদার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মিমের শীর্ষনেতারা ৷
চাঁচল ২ ব্লকের খানপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান পেশায় শিক্ষক ৷ তিনি স্থানীয় লোলিয়াবাড়ি সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক৷ বর্তমানে তিনি তেলাঙ্গানার রাজনৈতিক দল, সারা ভারত মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-আল-মুসলিমিন (মিম)-এর মালদা জেলা আহ্বায়ক ৷ সম্প্রতি তিনি এই জেলা সহ উত্তর দিনাজপুরেও আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দলকে প্রতিষ্ঠা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন ৷ মালদা জেলায় এই মুহূর্তে চাঁচল মহকুমায় নিজেদের জমি খানিকটা তৈরি করেছে এই রাজনৈতিক দলটি ৷ ধীরে ধীরে সদস্য বাড়তে শুরু করেছে মালদা সদর মহকুমাতেও ৷ এই জেলায় জেডিপির উত্থান নিয়ে গত 19 নভেম্বর মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পুলিশ সুপারকে ৷ সেই ঘটনার পর থেকেই মতিউর সাহেব আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এই জেলায় মিমকে প্রতিষ্ঠার কাজ করার জন্য যে কোনও মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন ৷ তাহলে কি রাজনৈতিক কারণেই গ্রেপ্তা করা হল মতিউর সাহেবকে? প্রশ্ন উঠছে ৷
মতিউর সাহেবের ঘনিষ্ঠ, মিমের অন্যতম নেতা আমির হোসেন অবশ্য মানছেন, তাঁদের নেতা আবেগবশত ভুল পোস্ট করে থাকতে পারেন ৷ তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে মিমের সঙ্গে যুক্ত ৷ গতরাত আড়াইটে নাগাদ ফোনে জানতে পারি মিমের মালদা জেলার সৈনিক মতিউর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৷ আমরা এখন থানায় এসেছি ৷ তবে আমরা এখনও পর্যন্ত জানতে পারিনি কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷ মতিউর সাহেব দুষ্কৃতী নন, তিনি শিক্ষক ৷ ফেসবুক পোস্টে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখার যে অভিযোগ উঠছে তার পিছনে রঘুনাথগঞ্জের আশাদুল নামে এক যুবকের ঘটনা থাকতে পারে ৷ আশাদুলের একটি অডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল ৷ আশাদুলের বিষয় কোট না করেই মতিউর সাহেব সম্ভবত ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ৷ আশাদুলের কথা অনুযায়ী রঘুনাথগঞ্জের পুলিশ তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিল ৷ আশাদুলরা পুলিশের কাছে একটি বৈঠকের অনুমতি চেয়েছিল ৷ পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে সেই অনুমতি দেওয়া হলেও পরে সেই অনুমতি খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ এরপরই পুলিশ অকথ্য ভাষায় আশাদুলকে গালিগালাজ করে ৷ আশাদুলের কথা মতিউর সাহেব ফেসবুকে তুলে ধরেছিলেন ৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি ৷ তাঁর গ্রেপ্তারি নিয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি ৷” আমির হোসেন জানান, মতিউর সাহেবের গ্রেপ্তারির খবর পেয়ে দলের রাজ্য নেতা জামিরুল হোসেন মালদার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে মালদা সহ আশেপাশের জেলার দলীয় কর্মীরাও চাঁচলে আন্দোলন সংগঠিত করবে৷
এই ঘটনা নিয়ে এখনও পুলিশ সুপার কিংবা অন্য পুলিশ আধিকারিকদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে চাঁচল থানা সূত্রে জানা গেছে, ধৃত মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ভারতীয় আইনের 505 ও 509 ধারা এবং আইটি অ্যাক্টের 67 ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ আজই তাঁকে চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হবে ৷