পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Migrant Labourers : কাশ্মীরে জঙ্গিদের নিশানায় পরিযায়ীরাও, প্রাণ বাঁচাতে ঘরে ফিরছেন মালদার শ্রমিকরা - Malda

ফের অশান্ত কাশ্মীর। ভূস্বর্গে চলছে জঙ্গিদের নিশানায় এবার পরিযায়ী শ্রমিকরা ৷ এই পরিস্থিতি সেখানকার পুলিশ-প্রশাসনের পরামর্শ মেনে বাড়ির পথ ধরেছেন পরিযায়ীরা ৷ মালদাতেও ফিরেছেন অনেকে ৷

migrant labours of malda returning from jammu & kashmir due to life threat
Migrant Labour : কাশ্মীরে জঙ্গিদের নিশানায় পরিযায়ীরাও, প্রাণ বাঁচাতে ঘরে ফিরছেন মালদার শ্রমিকরা

By

Published : Oct 23, 2021, 6:30 PM IST

মালদা, 23 অক্টোবর : উৎসবের মরশুমেও অশান্ত কাশ্মীর। ভূস্বর্গে চলছে জঙ্গিদের গুলি। শুধু কাশ্মীরি কিংবা সেনাই নয়, এবার তাদের নিশানায় পরিযায়ী শ্রমিকরাও । গত শনিবার শ্রীনগরে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন বিহার ও উত্তরপ্রদেশের দুই শ্রমিক । রবিবার কুলগ্রামে বাড়িতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে জঙ্গিরা খুন করেছে আরও দুই শ্রমিককে, জখম আরও একজন । এক্ষেত্রেও মৃতরা বিহারের বাসিন্দা ছিলেন ।

পরপর এমন ঘটনার পর আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সেখানে কর্মরত মালদার পরিযায়ী শ্রমিকরা । নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের আপাতত কাশ্মীরে না থাকার পরামর্শ দিচ্ছে সেখানকার পুলিশ-প্রশাসনও । তাই প্রাণ হাতে নিয়ে পরিযায়ীরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন ।

আরও পড়ুন :Malda : শিক্ষক নির্যাতনে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার গ্রেফতারির দাবিতে মালদায় আদিবাসীদের অবরোধ

উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে মালদাতেই পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । গোটা দেশেই ছড়িয়ে রয়েছেন এই জেলার শ্রমিকরা । জম্মু ও কাশ্মীরেও বেশ কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মরত । তাঁদের সিংহভাগই কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা । এই শ্রমিকদের কেউ সেখানে রাজমিস্ত্রি, কেউ কুয়ার রিং তৈরি করেন, কেউ বা আপেল ও আখরোটের বাগানে কাজ করেন । গত মার্চে তাঁরা কাশ্মীর গিয়েছেন । আগামী মার্চে তাঁদের বেশিরভাগের বাড়ি ফেরার কথা ছিল । কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি তাঁদের বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য করছে ।

গতকালই কাশ্মীর থেকে ঘরে ফিরেছেন বেশ কিছু শ্রমিক । তাঁরা মূলত কালিয়াচকের দারিয়াপুর, সালেপুর, শেরশাহী প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দা । আজ উত্তর দারিয়াপুরের নয়াবস্তি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণ বাঁচাতে পেরে তাঁরা খুশি হলেও সংসার কীভাবে চলবে, সেই চিন্তায় মগ্ন ।

আরও পড়ুন :TMC Leader Murder: তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি খুনে চেন্নাইয়ে গ্রেফতার শার্প শুটার

তাঁদের একজন আলি আসগর বলেন, “গত মার্চে আমরা পাঁচ ভাই কাশ্মীর গিয়েছিলাম । পুলওয়ামা জেলার একটি গ্রামে কুয়োর রিং তৈরি করতাম । পাঁচ ভাই মিলেই ব্যবসা শুরু করেছিলাম । গত শনি ও রবিবার জঙ্গিদের গুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকরা মারা যান । এরপরেই পুলিশ আমাদের থানায় নিয়ে যায় । পুলিশ আমাদের সাফ জানায়, এখন জঙ্গিরা বাইরের লোকদেরও গুলি চালিয়ে মেরে ফেলছে । তাই এখন আর কাজ করা যাবে না । কারা এমন করছে এখনও জানা যাচ্ছে না । আমাদের উপরেও যে কোনও সময় হামলা হতে পারে । তাই পুলিশ, এমনকি কাশ্মীরিরাও আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত । পুলিশ আমাদের বাড়ি ফেরার কথা জানায় ।’’

একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশের তরফে একটি স্কুলে একদিন আমাদের রাখা হয়েছিল । পরদিন পুলিশই গাড়ি ঠিক করে নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আমাদের জম্মু রেল স্টেশনে পাঠিয়ে দেয় । সেখান থেকে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরেছি । এখানকার 7-8 হাজার শ্রমিক কাশ্মীরে বিভিন্ন কাজ করেন । তাঁরা সবাই বাড়ি ফিরে আসছেন । এর আগে ফৌজিদের সঙ্গে ওদের ঝামেলা হয়েছিল । কিন্তু বাইরের কাউকে তারা মারেনি । এবার ওরা বাইরের লোকদেরও মেরে ফেলছে । আমরাও এনিয়ে চিন্তায় ছিলাম । বিহারি-বাঙালিকেও এবার ওরা নিশানা বানিয়েছে । কবে এই পরিস্থিতি ঠিক হবে জানি না । সেখানে আমাদের অন্তত চার লাখ টাকার মাল ফেলে এসেছি । তাই হাল কিছুটা ঠিক হলেই আমাদের কাশ্মীর ফিরে যেতে হবে ।”

আরও পড়ুন :Snake Bite : গৃহস্থ বাড়ি থেকে সাপ ধরতে গিয়ে ছোবলে মৃত সর্পপ্রেমী

কাশ্মীর থেকে ঘরে ফিরে আসা মহম্মদ আলি আকবর বললেন, “পরিস্থিতি এখন ভাল নয় । কাশ্মীরের পুলিশও আমাদের সেখানে কাজ করতে দিতে চাইছে না । আমাদের নিরাপত্তার জন্যই সেখানকার পুলিশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । কারণ, এখন সেখানে ভিনরাজ্যের শ্রমিকদেরও ওরা মেরে ফেলছে । হোয়াটসঅ্যাপে জঙ্গিদের কাজকর্মের নমুনা আমরা দেখেছি । ফলে প্রাণের ভয় আমাদেরও ছিল । এরই মধ্যে দিন চারেক আগে বাড়িওয়ালা আমাদের ফোন করে থানায় যোগাযোগ করতে বলেন । থানায় গেলে পুলিশ আমাদের বাড়ি ফিরে আসতে বলে । আমি সোপিয়ান জেলায় কাজ করতাম । কবে সেখানে ফিরতে পারব, সেটাই ভাবছি । পরিস্থিতি ঠিক হলেই ফের কাশ্মীর যাব ।”

কাশ্মীরে জঙ্গিদের নিশানায় পরিযায়ীরাও, প্রাণ বাঁচাতে ঘরে ফিরছেন মালদার শ্রমিকরা

ঘরে ফিরে আসা আরেক শ্রমিক মহম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, “এই গ্রামের প্রায় সব শ্রমিকই কাশ্মীরে কুয়োর রিং তৈরি করে । আমরা পুলওয়ামা জেলায় কাজ করছিলাম । সেখানে পরিস্থিতি কুলগ্রামের মতো ছিল না । একদিন কাজ সেরে ঘরে ফিরে এলাকার এক শ্রমিকের কাছ থেকে ফোনে জানলাম, পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে গিয়েছে । তবে আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি । পরদিন ফের কাজে যাই । সেদিন জানতে পারি, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আমাদের আর সেখানে কাজ করতে দিতে চাইছে না । তাই চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে এসেছি । ওখানে ট্রেনের টিকিটের এখন ভীষণ চাহিদা । অনেক বেশি টাকায় টিকিট মিলছে । সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায় । এই গ্রামেরই অন্তত 400 জন সেখানে কাজ করছেন । তাঁরা সবাই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন ।”

আরও পড়ুন :Amit Shah : নজরে নিরাপত্তা, তিনদিনের সফরে শনিবার শ্রীনগর পৌঁছালেন অমিত শাহ

পাঁচ ছেলে ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে আসায় খুশি মহম্মদ বাসেদ আলি । কিন্তু ছেলেদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কীভাবে সংসারের চাকা ঘুরবে তা নিয়ে চিন্তায় তিনি । বললেন, “পাঁচ ছেলে দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে কাজ করে । তাদের রোজগারেই আমাদের সংসার চলে । থানায় ডেকে পুলিশ হঠাৎ করেই তাদের বাড়ি ফিরে আসতে বলে । গোলমালের জন্যই পুলিশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । কিন্তু পাঁচ ছেলের কেউ টাকা-পয়সা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি । ওখানে তাদের অন্তত দেড় হাজার রিং তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে । এখন কীভাবে চলবে তা আল্লাহই জানেন । রাজ্য সরকারের কাছে আমার আবেদন, এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে আমাদের কিছু আর্থিক সাহায্য করা হোক ।”

ABOUT THE AUTHOR

...view details