মালদা, 17 জুলাই : চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলল গ্রামবাসীরা । গুরুতর আহত হয়েছে আরও একজন । গতরাতে ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাণীকান্তটোলা গ্রামে । আহত যুবক বর্তমানে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে রতুয়া থানার পুলিশ । পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে গতকাল রাত থেকেই গোটা গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য ।
মৃত ব্যক্তির নাম ঘিসু শেখ । বয়স 36 বছর । বাড়ি বাণীকান্তটোলা থেকে কিছুটা দূরে দেবীপুর পশ্চিমপাড়ায় । পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পনেরো ধরে বাণীকান্তটোলা গ্রামে নিয়মিত চুরি হচ্ছিল । অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা রাত পাহারার ব্যবস্থা করে । গতকাল রাত 12 টা নাগাদ ঘিসু শেখ সহ মোট তিনজন গ্রামের বাগানে বসেছিল । বাকি দু’জনের নাম সাজ্জাদ শেখ ও সওদাগর শেখ ওরফে ইউসুফ । তাদেরও বাড়ি দেবীপুর পশ্চিমপাড়ায় । সেই সময় রাত পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রামবাসীরা এই তিনজনকে দেখে ফেলে । জেরায় সদুত্তর দিতে না পারায় গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়, এরাই চুরির সঙ্গে জড়িত । শুরু হয় গণপিটুনি ।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেখান থেকে কোনওরকমে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ । তবে বাকি দু’জন পালাতে পারেনি । গ্রামবাসীদের মারে অচৈতন্য হয়ে পড়ে ঘিসু ও সওদাগর । তা দেখে সেখান থেকে সরে পড়ে সবাই । গ্রামবাসীদের একাংশই ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে উদ্ধার করে মালদা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক ঘিসুকে মৃত ঘোষণা করেন।
মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ইউসুফ বলেন, “গতরাতে আমরা বাগান দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম । ওই বাগান থেকে আমাদের বাড়ি মাত্র 10 মিনিটের পথ । সেই বাগানেই গ্রামবাসীরা লুকিয়ে ছিল । হঠাৎ তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । লাঠি দিয়ে আমাদের বেধড়ক মারধর করা হয় । একজন মারা গিয়েছে । আমি হাসপাতালে ভর্তি । ঘিসু শেখকে মরে যেতে দেখে গ্রামবাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায় ।”
চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ রতুয়ায় বাণীকান্তটোলার বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, “10 বছর ধরে ঠিক এই সময়টায় গ্রামে চোরের উৎপাত বাড়ে । এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি । 4-5 দিন ধরে প্রতি রাতে চুরি হচ্ছে । এতে গ্রামবাসীরা একজোট হয় । গতকাল রাতে যখন ওই তিনজন চুরির উদ্দেশ্যে বাগানে জড় হয়েছিল, তখন সেটা দেখে ফেলেন গ্রামের মানুষজন । তাড়া করে তাঁরা দু’জনকে ধরে ফেলেন । একজন পালিয়ে যায় ।গ্রামবাসীরা ওই দুই চোরকে মারপিট করে থাকতে পারেন । গতকাল রাত ১২টা নাগাদ ওরা একটি বাড়ির দিকে ঢুকছিল । এটা চোর ছাড়া কারও কাজ হতে পারে না । 10 বছর ধরে এরাই গ্রামে চুরি করে আসছে।”
গ্রামের আর এক বাসিন্দা নীরেন্দ্র মণ্ডল বলেন, “15-20 দিন ধরে গ্রামে চুরি হচ্ছে । মোটরবাইক থেকে শুরু করে তার চাবিও চোরেরা নিয়ে গিয়েছে । মোবাইল, সাইকেল, এমনকি ঘর থেকে মহিলাদের শাড়িও খোওয়া যাচ্ছিল । চোর ধরতে গ্রামে রাত পাহারার ব্যবস্থা করা হয় । গতকাল রাতে গ্রামবাসীরা তিন চোরকে দেখতে পান। তাঁরা দু’জনকে ধরে ফেলেন । তবে ঘটনাস্থল থেকে আমার বাড়ি একটু দূরে থাকায় আমি রাতে বাগানে যাইনি ।”
আজ ঘটনার তদন্তে গ্রামে যান চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু মণ্ডল, রতুয়া থানার আইসি সুবীর কর্মকার সহ অন্যান্য পুলিশ অফিসাররা । তাঁরা ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন । কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গেও । পরে শুভেন্দুবাবু জানান, গতকাল রাতে গ্রামবাসীরাই আহত দু’জনকে মালদা মেডিকেলে নিয়ে যায় । সেখানে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয় । একজন মেডিকেলে চিকিৎসাধীন । গোটা ঘটনার পুলিশি তদন্ত চলছে । তবে এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি ।