মালদা, 8 জুন : বউভুলানি অথবা কুমারখা, অনেকেই বলতে পারবেন না এগুলি কিসের নাম ৷ এই দুটিই হল মালদার আমের প্রজাতি ৷ মালদায় উৎপাদিত প্রায় 350 প্রজাতির আমের মধ্যে অনেক নামই মানুষের অজানা ৷ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বহু আমের প্রজাতি ৷ কিন্তু তার মধ্যেও টিকে রয়েছে কুমারখা আম ৷ ব্রিটিশ আমল থেকেই টেবিল ম্যাঙ্গো হিসাবে তার সুনাম ৷ এখনও হরিশ্চন্দ্রপুরে এই প্রজাতির কিছু গাছ টিকে রয়েছে ৷ তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এবার এই প্রজাতির ফলন একেবারে তলানিতে ৷
মালদায় শুধুমাত্র হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি অংশে কুমারখা আম পাওয়া যায় ৷ এই আমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পুরনো গল্প ৷ ব্রিটিশ শাসকদের খুশি করতে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৎকালীন জমিদাররা স্থানীয় ল্যাংড়া প্রজাতির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কোনও এক ভাল প্রজাতির সংমিশ্রণে এই প্রজাতির চারা তৈরি করিয়েছিলেন ৷ টেবিল ম্যাঙ্গো হিসাবে প্রথম থেকেই সমাদৃত কুমারখা আম ৷ পাতলা খোসা, আঁশ প্রায় নেই বললেই চলে ৷ ভরপুর মিষ্টি রসের এই আম মন জয় করে নিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকদেরও ৷ তবে দুর্যোগে এবার এই আমের ফলন খুব কম ৷ গতবারও একই কারণে ফলন মার খেয়েছিল ৷ স্বাভাবিক অবস্থায় 400 থেকে 450 টন আম উৎপাদন হলেও এবার 100 টন আম উৎপাদন হবে কি না তা নিয়েই সন্দেহ সবার ৷
হরিশ্চন্দ্রপুরের মিশ্র জমিদার পরিবারের সদস্য চিরঞ্জীব মিশ্র এই আমের ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, “আমাদের এখানে যত প্রজাতির আম উৎপাদন হয়, তার মধ্যে কুমারখা সব চেয়ে ভাল বলেই আমরা জানি ৷ এটা টেবিল ম্যাঙ্গো ৷ বাপ-ঠাকুরদাদের কাছে শুনেছি, ব্রিটিশ আমলে গভর্নরদের খুশি করতে সব জমিদাররাই জান লড়িয়ে দিতেন ৷ একই কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা উত্তরপ্রদেশের ভাল কোনও প্রজাতির সঙ্গে এখানকার ল্যাংড়া প্রজাতির সংমিশ্রণে এই বিশেষ প্রজাতির আমের চারা তৈরি করিয়েছিলেন ৷ এই আমের বয়স 100 বছরেরও বেশি পুরনো ৷ তখনকার জমিদাররা এই প্রজাতির গাছ এমন ভাবে লাগিয়েছিলেন, যাতে এই প্রজাতির গাছ বাইরে কোথাও না যায় ৷ এখনও হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলা এলাকাতেই এই আমের গাছ পাওয়া যায় ৷ আমাদের পরিবারের অনেক সদস্য দেশের বিভিন্ন রাজ্য, এমনকি বিদেশেও রয়েছে ৷ তাদের কাছে এই আম প্রতি বছর পাঠানো হয় ৷ বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও কুমারখা আম বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি ৷ সব জায়গাতেই এই আমের কদর রয়েছে ৷”