মালদা, 28 নভেম্বর: পাশেই বিহার ৷ সেখান থেকে ঢুকছে মাদক থেকে শুরু করে নারীরা ৷ চলছে দেদার বিক্রি ৷ যার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে যুব প্রজন্ম ৷ মালদার চাঁচল মহকুমার উত্তরাংশ এখন বাস্তবেই ‘উড়তা পঞ্জাব’ ৷
সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে চাঁচল মহকুমা জুড়ে ৷ এই দুই এলাকায় তৈরি হয়েছে নেশার ঠেক ৷ তার একটি আবার চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরিত্যক্ত আবাসনেই ৷ ব্রাউন সুগার আর গাঁজার নেশায় আসক্ত হচ্ছে যুব সমাজ ৷ বিহার থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর হয়ে এলাকায় ঢুকছে মাদক ৷ পাচারকারীদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ এলাকায় ৷ এই মুহূর্তে মাদকের হাব হয়ে উঠেছে হরিশ্চন্দ্রপুরের করিয়ালি গ্রাম ৷ কারবারিরা ওই গ্রামেই ডেরা গেড়েছে ৷ এ সব সংবাদমাধ্যমকে জানালেও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না এলাকার কেউ ৷ তাতে জীবনহানির আশংকাও রয়েছে ৷
দীর্ঘ চিকিৎসার পর নেশার জাল থেকে বেরিয়ে আসা যুবকদের কাছেই মিলেছে এই ব্যবসার একাধিক তথ্য ৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে কলিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের নুরগঞ্জ, মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নদীসিক, ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবানপুর এবং চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহেবগঞ্জ ও সাঞ্জীব গ্রামে ব্রাউন সুগারের রমরমা কারবার চলছে ৷ মালতিপুর ও গোবিন্দপাড়ার অনেক জায়গাতেও বিক্রি হচ্ছে ব্রাউন সুগার ৷ আগে মাদক কারবারিরা কালিয়াচক থেকে এই মাদক সংগ্রহ করতেন ৷ তবে এখন হরিশ্চন্দ্রপুরের করিয়ালি থেকেই তা পেয়ে যাচ্ছেন ৷ গাঁজার ব্যবসা চলছে কলিগ্রামের নিমতলা এবং চাঁচল সদরে ৷ এক গ্রামের প্রতি পুরিয়া ব্রাউন সুগারের দাম 1500-1800 টাকা ৷ মূলত দুই ধরনের মানুষ এই ব্যবসা চালাচ্ছেন ৷ কিছু মানুষ শুধু আর্থিক ফায়দা লুটতেই মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন ৷ আবার কিছু মানুষ এই নেশায় আসক্ত হয়ে নেশার টাকা জোগাড় করার তাগিদে এই ব্যবসায় নেমেছেন বলে জানা গিয়েছে ৷
চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সেখানে একটি পরিত্যক্ত আবাসনে বেশ কিছুদিন ধরেই গজিয়ে উঠেছে নেশার ঠেক ৷ শুধু সন্ধের পর নয়, দিনদুপুরেও সেখানে আসর জমাচ্ছেন মাদকাসক্তরা ৷ সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ফয়েল পেপার-সহ নেশা করার বিভিন্ন উপকরণ ৷
মাদকের নেশার জাল কেটে বেরিয়ে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানালেন, “এ নেশা বড্ড মারাত্মক ৷ 4-5 বছর আমিও ব্রাউন সুগারের নেশা করেছি ৷ একবার নেশা করার পর কেউ ভাবলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না ৷ আর পুলিশের কথা বলার নয় ৷ আমি যে পেডলারের কাছ থেকে ব্রাউন সুগার কিনতাম, সে প্রতি সপ্তাহে পুলিশকে টাকা দিত ৷ তাই সে ধরা পড়ত না ৷ যে টাকা দেয় না, সে ধরা পড়ে ৷ পুলিশ প্রশাসন এই ব্যবসার সবই জানে ৷ এই ব্যবসার মূল কেন্দ্র হরিশ্চন্দ্রপুরে ৷ এখন কালিয়াচক অনেক ভালো হয়ে গিয়েছে ৷ সেই জায়গা নিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর ৷ বিহার থেকে সেখানে মাদক ঢুকছে ৷ প্রশাসনকে আমি বলব, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করে আসক্তদের পরিবারগুলোকে বাঁচানো হোক ৷”