মালদা, 2 জুলাই: রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত এলাকাকে ঘিরে রেখেছে গঙ্গা আর ফুলহর। কয়েক দশকের ভাঙনে দুই নদী পরস্পরের দিকে এদিয়ে এসেছে। শুধু গঙ্গাই এগিয়ে এসেছে প্রায় 12 কিলোমিটার। তার আগ্রাসনে প্রাণ বাঁচলেও মান গিয়েছে অসংখ্য মানুষের। একসময়ের জমিদার এক লহমায় হয়েছে পথের ভিখিরি (Malda Villagers are Worried Due to River Erosion)।
এখন তাঁদের অনেকে নদীর ধারেই বাঁধের উপর বা নীচে অস্থায়ী ঘর বেঁধে মাথা গুঁজেছেন। তাঁদের একজন তেতরি মণ্ডল। বর্তমান ঠিকানা বলরামপুর বাঁধ। তিনি বলেন, "জঞ্জালিটোলায় বাড়ি ছিল। 20-22 বিঘা জমি ছিল। সব গঙ্গায়। সবাই বলছিল, নদীকে বাঁধা হবে কিন্তু হয়নি। স্বামী এখন বুড়ো। তবু খাটছে। তবেই খাচ্ছি। শুধু ভাতা ছাড়া সরকারি সহায়তা পাইনি। আমি একা নই, গঙ্গায় সব হারিয়ে অনেকেই এখন ফকির।"
আরও পড়ুন :ফুলহরের ভাঙনে বসে গেল বাঁধ, আতঙ্কের প্রহর শুরু
গঙ্গার ভাঙনে জেলার মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে জঞ্জালিটোলা। ওই গ্রামের আরেক উদ্বাস্তু লতিশ মণ্ডল। এখন বাঁধের বাসিন্দা। তাঁর কথায়, আগে নদী ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ের নীচ দিয়ে বইত। নদী যেতে হলে দু'ঘণ্টা হাঁটতে হত। সেখান থেকে নদী এখন মহানন্দটোলায় চলে এসেছে। আমার 15 বিঘা জমি গিলে নিয়েছে গঙ্গা। এখন কিছুই নেই। ঘরও গিয়েছে।"
এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র এক মিটার। বর্ষার শুরুতে ভেবেই আকুল অমৃতটোলা গ্রামের মুরলী মণ্ডল। বলেন, "গঙ্গায় একের পর এক গ্রাম কেটে গিয়েছে। প্রচুর বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। এক লাখ একর জমি জলের তলায়। এবার মনে হচ্ছে আমার পালা। এবছরই বোধহয় আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে। অথচ ভাঙন রুখতে কোনও কাজ হচ্ছে না। কাজ না হলে এবারই শ্রীকান্তটোলা, কান্তটোলা গ্রামগুলি অস্তিত্ব হারাবে।"
বর্ষার শুরুতে ভিটেহীন হওয়ার আশঙ্কায় নিদ্রাহীন গঙ্গাপাড়ের মানুষ আরও পড়ুন :রাজ্যে প্রথম রথযাত্রা কার্নিভালের আয়োজন গাজোলে
50 বছর আগে নববধূ হয়ে শ্রীকান্তটোলা গ্রামে এসেছিলেন দিপালী মণ্ডল। গঙ্গার ভাঙনে আতঙ্কে তিনিও। তবে গ্রাম ছাড়তে চান না। তিনি বলেন, "বিয়ে হয়ে আসার পর গোরুর গাড়ি করে গঙ্গাস্নান করতে যেতাম। এখন বাড়ির পিছনের গঙ্গায় প্রতিদিন স্নান করি। কত গ্রাম চোখের সামনে নদীতে তলিয়ে যেতে দেখেছি! এখন নিজের বাড়ি হারানোর আতঙ্কে থাকি। ছেলেরা বাইরে থাকে। আমাকে ডাকছে। কিন্তু আমি গ্রাম ছেড়ে যেতে চাই না। মা গঙ্গা যেখানে নিয়ে যাবে, সেখানেই যাব।"