মালদা, 10 জুলাই : শুধু পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ভারত নয়, গোটা বিশ্বই এখন পরিবেশ দূষণ নিয়ে চিন্তিত । দূষণের মাত্রা যে হারে বেড়েছে, তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে । আর এই দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের যথেচ্ছ ব্যবহার । শুধু ড্রেন কিংবা রাস্তাঘাটে আবর্জনা বাড়ানো নয়, এমন প্লাস্টিক মাটিতে দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে মাটির উর্বরতাও কমছে ।
প্লাস্টিক কখনোই মাটিতে মিশে যেতে পারে না । এই নিয়ে পরিবেশবিদরা বারবার সতর্ক করেছেন । আদালত 50 মাইক্রনের নিচে থাকা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । এই নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে মালদা জেলা ও ইংরেজবাজার পৌর প্রশাসনও । কিন্তু তবুও লুকিয়ে চুরিয়ে এখনও ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ।
এই পরিস্থিতিতে এক নয়া পদক্ষেপ করেছে মালদা শহরের শতাব্দী প্রাচীন একটি স্কুল । ওই স্কুলে মিড ডে মিলের সামগ্রী বিলি করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ক্যারিব্যাগে । স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করে আসলে অভিভাবকদের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছে । তারা চাইছে, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযান বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছেলেমেয়েদের ভিতরে ঢুকে পড়ুক ।
1912 সালে মালদা শহরের বিনয় সরকার রোডে প্রতিষ্ঠিত হয় অক্রুরমণি করোনেশন ইনস্টিটিউশন । জেলার প্রথম সারিতেই রয়েছে এই স্কুল । একাধিক সরকারি সম্মাননাও পেয়েছে । মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বরাবর ভাল ফল করেন এখানকার পড়ুয়ারা । এবার এই স্কুলের শিক্ষকরা পরিবেশ বাঁচাতে ময়দানে নেমেছেন । করোনার জেরে গত বছর থেকেই বন্ধ রয়েছে স্কুলের পঠনপাঠন । কিন্তু মিড ডে মিলের সামগ্রী বিলি থেমে নেই । পড়ুয়া নয়, সেই সামগ্রী নিতে হচ্ছে অভিভাবকদের । পরিবেশ বাঁচাতে এবার সেই মিড ডে মিলের সামগ্রী পরিবেশবান্ধব ক্যারিব্যাগে ভরে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে । প্রত্যেক অভিভাবককে সেকথা জানিয়েও দিচ্ছেন শিক্ষকরা । একইসঙ্গে তাঁদের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের অপকারিতা সম্পর্কেও বোঝানো হচ্ছে । শিক্ষকরা নিশ্চিত, এভাবেই তাঁরা পড়ুয়াদের ঘরে ঘরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে পারবেন। শিক্ষকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চও।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার বসাকের বক্তব্য, “প্রথমে স্কুলের কর্মীদের মাধ্যমে আমরা বাজারে খবর নিয়েছি । এই ক্যারিব্যাগের নমুনা খতিয়ে দেখেছি । তারপরই এই ক্যারিব্যাগ কেনা হয়েছে । আমাদের দেখাদেখি অন্য স্কুলেও যদি এটা চালু করা হয়, তবে দ্রুত সমাজে দূষণ নিয়ে বার্তা পোঁছাবে । ছোটরাই আমাদের ভবিষ্যৎ । তাই বাবা-মায়ের কাছ থেকে তারা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী শিক্ষা পাবে । আসলে ঘর থেকেই প্রথম শিক্ষা শুরু হয় । আমি এই নিয়ে প্রশাসনকেও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি । সবাই মিলেই পরিবেশকে প্লাস্টিকের হাত থেকে বাঁচাতে চাই ।”
এক অভিভাবক বিপ্লব দাস বলেন, “আজ স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব ক্যারিব্যাগে ছেলের মিড ডে মিলের সামগ্রী আমার হাতে তুলে দিয়েছে । স্কুলের এই সিদ্ধান্তে আমি সত্যিই খুব খুশি । আমরা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করে যেখানে সেখানে ফেলে দিই । তাতে পরিবেশ দূষিত হয় । কিন্তু এই ক্যারিব্যাগ মাটিতে মিশে যাবে । আমি চাই, প্রশাসনের তরফে এই ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের জন্য সবাইকে বাধ্য করুক ।”
পথ দেখাচ্ছে মালদার স্কুল, ভুট্টার খোসার তৈরি পরিবেশবান্ধব থলিতে বিলোচ্ছে মিড ডে মিল অন্য এক অভিভাবক কল্যাণী দাস বলছেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যে পরিবেশ দূষণ করে তা সবার জানা। সেই পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব ক্যারিব্যাগে মিড ডে মিলের সামগ্রী বিলির উদ্যোগ নিয়েছে। খুব ভালো সিদ্ধান্ত। শিক্ষা স্কুল থেকেই শুরু হওয়া ভালো। প্রশাসনও এখন পাতলা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিয়ে কড়া হয়েছে। আমাদের সবাইকে একজোট হয়েই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযানে শামিল হতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে হবে।”
অক্রুরমণি করোনেশন ইনস্টিটিউশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা জেলা সম্পাদক সুনীল দাস । তিনি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রশাসক, সদর মহকুমাশাসকের কঠোর অবস্থানকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন । বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ দীর্ঘ বছর ধরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিরোধিতা করে এসেছে । 50 মাইক্রনের নিচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পরিবেশের অস্বাভাবিক ক্ষতি করে । আমাদের আন্দোলনে একসময় মালদায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হয়েছিল । কিন্তু তা আবার ফিরে এসেছে । বর্তমান পৌর প্রশাসক, সদর মহকুমাশাসকও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধের জন্য কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন । মালদাবাসী হিসাবে এর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি । এই পরিস্থিতিতে অক্রুরমণি করোনেশন হাইস্কুল বায়ো ক্যারিব্যাগে মিড ডে মিলের সামগ্রী বিতরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে ।”