মালদা, 30 অক্টোবর : শাসকদলের নেতাদের কাটমানির দাবি সামলাতে না পেরে রাস্তার কাজ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে ঠিকাদার সংস্থা ৷ এই অভিযোগ উঠেছে রতুয়া 1 ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৷ শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নয়, এই অভিযোগ তুলেছে এলাকার মানুষও ৷ যদিও কাটমানি ইশুকে BJP-র তৈরি রাজনৈতিক ছক বলে দাবি করছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তবে একুশের ভোটের আগে কাহালা এলাকার এই রাস্তা যে ভোটের অন্যতম ইশু হতে চলেছে তা স্পষ্ট ৷
কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধোবি মোড় থেকে শিবপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল ৷ এই রাস্তার উপর নির্ভর করে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ ৷ প্রতিদিন 25-30 হাজার মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে ৷ এই রাস্তার ধারেই রয়েছে 10-12টি প্রাথমিক স্কুল, দুটি হাইস্কুল, কয়েকটি জুনিয়র হাইস্কুলসহ বেশ কিছু সরকারি দপ্তর ৷ রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি তুলছিল এলাকাবাসী ৷ সেই দাবিতে একবার ব্লক দপ্তর ঘেরাও পর্যন্ত করে স্থানীয়রা ৷ শেষ পর্যন্ত 2018 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা পরিষদের তরফে এই রাস্তা সংস্কারের জন্য 3 কোটি 31 লাখ 50 হাজার 119 টাকা বরাদ্দ করা হয় ৷ রাস্তার কাজও শুরু করে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা ৷ কথা ছিল, 2019 সালের ফেব্রুয়ারিতে রাস্তার কাজ শেষ করা হবে ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাস্তার কাজ শেষ হয়নি ৷ যেটুকু পাথর পড়েছিল, সেসব ফের রাস্তা থেকে সরতে শুরু করেছে ৷
কাটমানির দাবিতে রাস্তার কাজ ফেলে পালাল ঠিকাদার ! কাহালার বাসিন্দা নারায়ণ মিশ্র বলেন, “রাস্তা সংস্কারের দাবিতে এলাকার মানুষের সঙ্গে আমি 4 ঘণ্টার উপর BDO অফিস ঘেরাও করেছিলাম ৷ শেষ পর্যন্ত রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম ৷ কিন্তু কিছুদিন পরেই ঠিকাদার সংস্থা কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায় ৷ কেন, সেটা শাসকদলের নেতারাই বলতে পারবে ৷ এই ঘটনার সঙ্গে ওই নেতাদের যোগসাজশ নেই তো ? এখন তো কাটমানি ছাড়া কোনও কাজই হয় না ৷ সব জায়গায় কাটমানি ৷”
একই বক্তব্য আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মনজ্যোতি মিশ্রেরও ৷ তিনি বলেন, “শুধু কাহালা নয়, এই রাস্তা দিয়ে রতুয়া ও মানিকচকের অনেক মানুষ যাতায়াত করে ৷ 2001 সালে শেষবার এই রাস্তার কাজ হয় ৷ 2006 সালে রাস্তাটা ফের খারাপ হয়ে যায় ৷ তারপর থেকে আর রাস্তা সংস্কার হয়নি ৷ শেষ পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর আগে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয় ৷ কেন সেই কাজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল তা সঠিক বলতে পারব না ৷ তবে আমাদের মনে হয়, চারদিকে তৃণমূল নেতাদের যেভাবে কাটমানির দৌরাত্ম্য চলছে, তার জেরেই এই রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ আমরা চাই, রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ হোক ৷”
BJP-র রতুয়া মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত সিংহ বলেন, “রাস্তার কাজ শুরু করার পর শাসকদলের নেতাদের কাটমানির অত্যাচারে ঠিকাদার সংস্থা কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায় ৷ 2019 সালে এই রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৷ 2020 সালও শেষ হতে চলল ৷ রাস্তার কাজ কবে শেষ হবে জানি না ৷ আমরা এই বিষয়ে BDO, জেলাশাসকসহ প্রশাসনের সব স্তরে আবেদন জানিয়েছি ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা CPI(M)-এর জেলা কমিটির সদস্য সুশান্ত সিংহের বক্তব্য, “অনেক টালবাহানার পর প্রায় দু’বছর আগে রাস্তাটার কাজ শুরু হয়েছিল ৷ প্রায় অর্ধেক কাজ হয় ৷ কিন্তু তারপর সব বন্ধ হয়ে রয়েছে ৷ ঠিকাদার সংস্থা কিংবা বিভাগীয় লোকজন এলাকায় আসে না ৷ রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা BDO-কে ডেপুটেশন দিয়েছি ৷ দু’বছর কাজ বন্ধ থাকায় রাস্তা আবার ভাঙতে শুরু করেছে ৷ দ্রুত কাজ শুরু না হলে রাস্তা ফের আগের দশায় চলে যাবে ৷”
যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও যুব সংগঠনের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রাজেশ সিংহ বলেন, “এই রাস্তার জন্য আমরা বাম আমল থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি ৷ কিন্তু বাম আমলে সেই কাজ হয়নি ৷ রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাস্তা সংস্কারের দাবি অনুমোদন করেন ৷ কাজও শুরু হয় ৷ ভালোই কাজ চলছিল ৷ সম্প্রতি বন্যায় রাস্তাটির ক্ষতি হয় ৷ ওই রাস্তা দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না ৷ তাই ঠিকাদার সংস্থা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ৷ তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ৷ দ্রুত কাজ শুরু হবে ৷ আর কাটমানি প্রসঙ্গ BJP-র তৈরি করা ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে এসব চলে না ৷”