পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

চিন-বিরোধী মনোভাবে মাটির প্রদীপের চাহিদা তুঙ্গে , চওড়া হাসি মালদার কুমোরপাড়ায় - Malda potters are happy

কোরোনায় যখন গোটা পৃথিবীর ব্যবসা বিপন্ন, তখন সেই ভাইরাসই মুখে হাসি ফুটিয়েছে মালদার মৃৎশিল্পীদের । গালওয়ানের ঘটনায় ভারত ও চিনের মধ্যে সেনাদের তিক্ততা এবং কোরোনা এবার কুমোরপাড়ার অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালিয়েছে । অন্য বছরগুলিতে চায়না আলোর বেশি চল থাকলেও এবার মানুষের চিন বিরোধী মনোভাবের কারণে মাটির প্রদীপের চাহিদা বেড়েছে ৷

Malda
মানুষের চিন বিরোধী মনোভাবে মাটির প্রদীপের চাহিদা তুঙ্গে

By

Published : Nov 4, 2020, 7:54 PM IST

মালদা, 4 নভেম্বর : কোরোনা আর গালওয়ান । এই দুইয়ের জেরে এখন ভিলেন চিন । দেশবাসীর আবেগ বুঝতে দেরি হয়নি কেন্দ্রের । দেশপ্রেমের আবেগ উসকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক চিনা অ্যাপে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে চিন থেকে পণ্য আমদানির একটি বড় অংশেও । গালওয়ান ইশুতে যেমন দুই দেশের তিক্ততা এখনও থেকে গিয়েছে, তেমনই এখনও দেশজুড়ে আতঙ্কের আরেক নাম কোরোনা । প্রমাণিত হোক বা না হোক , দেশবাসী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে , এই মারণ ভাইরাস বেরিয়েছে চিনের উহান প্রদেশের ল্যাবরেটরি থেকেই । তাই দেশের সিংহভাগ মানুষের মধ্যে এখনও চিনা পণ্য বর্জনের ধুম পড়েছে । সেই মনস্তত্ত্ব কাজ করছে মালদাবাসীর মধ্যেও । তাই এবার আসন্ন দীপাবলির রাতে মালদায় কতটা রংবাহারি চিনা আলো দেখা যাবে কেউ জানে না । জানে না ব্যবসায়ীরাও । তবে এবার কালীপুজোর রাত যে মাটির প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোয় উজ্জ্বল হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই মৃৎশিল্পীদের ।


কোরোনায় যখন গোটা পৃথিবীর ব্যবসা বিপন্ন, তখন সেই ভাইরাসই মুখে হাসি ফুটিয়েছে মালদার মৃৎশিল্পীদের । তার উপর দুই দেশের সেনাদের তিক্ততাও এবার কুমোরপাড়ার অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালিয়েছে । এবারের দীপাবলিতে তাঁদেরই ব্যবসার রমরমা । অন্য বছরগুলিতে কালীপুজোর কয়েকটা দিন আগে বাজারে মাটির প্রদীপের সামান্য কিছু চাহিদা থাকত । কারণ, চতুর্দশী তিথিতে বাঙালি বাড়িতে মাটির প্রদীপের চলটা এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি । কিন্তু তাতেই কার্যত শেষ হয়ে যেত মরশুমের এই ব্যবসা । এবার পরিস্থিতিটা যেন অন্যরকম । দুর্গাপুজোর আগে থেকেই মৃৎশিল্পীদের কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছে দোকানদাররা । প্রায় প্রতিদিনই ফোন আসছে, আরও প্রদীপ লাগবে ৷ তাই নাওয়া খাওয়া ভুলে এখন ঘরের লোকজনকে নিয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চাকেই সময় কাটছে পুরাতন মালদার রশিলাদহ এলাকার কুমোরপাড়ায় ।

এবার চিনা আলোর চাহিদা কম

সেখানকার এক মৃৎশিল্পীদের গৌরচন্দ্র পাল বলছেন, "অন্যান্য বছর কালীপুজোর সময় চিন থেকে রংবাহারি আলো এখানে আসত । এবার সেটা আসছে না । মোদি সরকার চিন থেকে এসব আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে । তার উপর লাদাখে চিনাদের সঙ্গে যুদ্ধ হল । সেখানকার সীমান্তে এখনও চিনাদের অত্যাচার চলছে । এর সঙ্গে কোরোনা ভাইরাস চিন থেকেই ছড়িয়েছে । শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্ব এখন কোরোনায় আক্রান্ত । তার প্রভাব পড়েছে আমাদের ব্যবসাতেও । এবার মাটির প্রদীপের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে । এবার প্রতি হাজার প্রদীপের দাম 50 থেকে 75 টাকা বেড়েছে । চাহিদা থাকলে দাম তো বাড়বেই । কালীপুজোর প্রদীপ সাধারণত লক্ষ্মীপুজোর পর থেকেই তৈরি করি । এবার দুর্গাপুজোর সময় থেকেই কাজে হাত দিয়েছি । কারণ, দোকানদারদের তাগাদা রয়েছে । দুর্গাপুজোর সময় কিছু প্রদীপ বিক্রি করেছি । আগামীকাল থেকে কালীপুজোর প্রদীপ দোকানে পাঠাতে শুরু করব । 1973 সাল থেকে এই কাজ করছি । এবারের মতো ব্যবসা সম্প্রতি হয়নি ।"

চলছে মাটির প্রদীপ তৈরির কাজ

একই বক্তব্য আরেক মৃৎশিল্পী প্রকাশ পালের । তিনি বলেন, "কোরোনা এবার অন্য ব্যবসায় ধাক্কা দিলেও আমাদের ব্যবসায় তার প্রভাব পড়েনি । এরই মধ্যে গালওয়ান ভ্যালিতে ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে চিনাদের মুখোমুখি সংঘর্ষে মানুষ চিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । এতে অন্যান্য বছর কালীপুজোর সময় চিন থেকে যেসব বৈদ্যুতিক আলো এদেশের বাজারে আসত , এবার সেটা আসছে না । বাজারে সেসব আলো যতটুকু রয়েছে, তারও এবার চাহিদা নেই । বরং আমাদের তৈরি মাটির প্রদীপের চাহিদা আগের তুলনায় এবার অনেক বেশি । এককথায়, চিনা আলোর চাহিদা কমায় এবার কালীপুজোর আগে আমাদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটেছে ।"

মানুষের চিন বিরোধী মনোভাবে মাটির প্রদীপের চাহিদা তুঙ্গে , চওড়া হাসি মালদার কুমোরপাড়ায়
মৃৎশিল্পীদের বক্তব্য যে ভুল নয় তার প্রমাণ মিলেছে মালদা শহরের চিনা আলোর ব্যবসায়ীদের কথায় । এমনই এক ব্যবসায়ী পাপন দাস বলেন, "এবার মানুষের মধ্যে একটা চিন বিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছে । আমাদের ব্যবসাতেও তার প্রভাব পড়েছে । অন্যান্য বছর এই সময় চিনা আলো যা বিক্রি হয় , এবার তার বিন্দুমাত্র হয়নি । তাছাড়া এবার মালও পাওয়া যাচ্ছে না । কলকাতা বা দিল্লির বাজারে যেটুকু মাল পাওয়া যাচ্ছে , ব্যবসার অবস্থা দেখে সেই মাল তুলতে ভয় লাগছে । এবার মানুষ মাটির প্রদীপের দিকেই বেশি ঝুঁকেছে । ফলে ব্যবসা যে এবার মার খাবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details