পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Central Housing Project: কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বে আবাস যোজনার টাকা থেকে বঞ্চিত উপভোক্তারা, বছরভর কাটছে খোলা আকাশের নীচে

কেন্দ্র ও রাজ্যের অন্তর্দ্বন্দ্বে সরকারিভাবে বাড়ি তৈরি প্রকল্পের টাকা অর্ধেক ঢুকেছে ৷ বাকি টাকা না ঢোকায় বাড়ি অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে ৷ পুরনো বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ায় সেই মানুষগুলোর দিন কাটছে ত্রিপলের নীচে ৷ তাদের সঙ্গেই কথা বলার পাশাপাশি এই বিষয়ে প্রশাসনের বক্তব্য কী তাও জানল ইটিভি ভারত ৷

Etv Bharat
বাড়ি তৈরির সরকারি অনুদান না আসায় উপভোক্তাদের দুর্দশা

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 16, 2023, 6:12 PM IST

বাড়ি তৈরির সরকারি অনুদান না আসায় উপভোক্তাদের দুর্দশা

মালদা, 16 নভেম্বর: কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্বে মালদার দুই শহরের গরিব মানুষের প্রাণান্তকর দশা ৷ সরকারি নতুন পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় দুই শহরের দুঃস্থ মানুষরাই ভেঙে ফেলেছিল তাদের পুরোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই ৷ নতুন বাড়ির কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু হঠাৎ সরকারি টাকা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে এই মুহূর্তে তাঁদের অনেককে খেয়ে না খেয়ে বাড়ির ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৷ আর যাঁদের সেই সামর্থ নেই, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নীচে ৷ কবে তাঁদের বাড়ি নির্মাণের টাকা আসবে, জানে না কেউ ৷

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শহরের গরিব মানুষের পাকা বাড়ি তৈরির জন্য রয়েছে সরকারি প্রকল্প 'হাউজ ফর অল' ৷ মোট 3 লাখ 68 হাজার টাকার এই প্রকল্পে উপভোক্তাকে দিতে হবে 25 হাজার টাকা ৷ কেন্দ্র দেবে দেড় লাখ এবং রাজ্য দেবে 1 লাখ 93 হাজার টাকা ৷ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে চার থেকে পাঁচটি কিস্তিতে অনুদানের টাকা ঢুকবে ৷ প্রতিটি পর্যায়ের কাজের পর তার রিপোর্ট দেখে পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়া হবে ৷ 2018-19 অর্থবর্ষে মালদায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ৷ কিন্তু এখন পুরোপুরি বন্ধ ৷ ঘর তৈরির কিস্তির টাকা না পেয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রায় 3 হাজার 600 এবং পুরাতন মালদা পৌরসভার প্রায় 2 হাজার 400 উপভোক্তা ৷

এই বৈশাখেই সরকারি পাকাবাড়ি পাওয়ার আশায় নিজের পুরনো ঘর ভেঙে ফেলেছেন পুরাতন মালদার রসিলাদহের পূর্ণিমা সিংহ ৷ ভেবেছিলেন, কয়েকমাসের মধ্যে নতুন বাড়ি তৈরি হয়ে যাবে ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ তখন থেকে পরিবার-সহ খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, "পাকা বাড়ির স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমার বড় ছেলেটাই মারা গেল ৷ টাকা আর এল না ৷ একবারই টাকা পেয়েছি ৷ ছোট ছেলে তার পরিবার নিয়ে আমার কাছে থাকে ৷ প্রথমে অন্য জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়েছিলাম ৷ বর্ষার সময় জল ঢুকে গিয়েছিল ৷ তখন অন্যের জমিতে উঠে এসেছি ৷ ধূপকাঠি তৈরি করে কোনওরকমে দিন চলে ৷ কবে বাড়ির টাকা আসবে, কাউন্সিলর বলতে পারছেন না ৷"

বাচামারি পালপাড়া নেতাজিপল্লির রসিক পাল বলছেন, "2019 সালে হাউজ ফর অল প্রকল্পে আমার নাম উঠেছিল ৷ নতুন বাড়ির আশায় আমি পুরনো ঘর ভেঙে দিই ৷ পরিবার নিয়ে ভাড়া বাড়িতে উঠি ৷ চারবছর ধরে সেখানেই রয়েছি ৷ নতুন বাড়ি তৈরির তিন কিস্তির টাকা পেয়েছি ৷ 2 লাখ টাকা ৷ আমি চায়ের দোকান করে কোনওমতে সংসার চালাই ৷ প্রতি মাসে 2 হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠেছে ৷ ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছি না ৷ বাকি টাকার জন্য 2 বছর ধরে পৌরসভায় ঘুরছি ৷ কবে টাকা আসবে, কেউ জানাতে পারছে না ৷"

এনিয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে রাজি না হলেও পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, "2020-21 এবং 21-22 অর্থবর্ষে আমরা এই প্রকল্পে প্রায় 2 হাজার 400 জনের নাম পাঠিয়েছিলাম ৷ সরকার সেই তালিকা অনুমোদন করেছে ৷ রাজ্য সরকার নিজের প্রথম কিস্তির টাকাও দিয়ে দেয় ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এতে যেসব গরিব মানুষজন পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় নিজেদের কাঁচা বাড়ি ভেঙে ফেলেছিলেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন ৷ কেউ ভাড়াবাড়িতে রয়েছেন, কেউ আবার ফাঁকা মাঠে প্লাসটিক টাঙিয়ে থাকছেন ৷ আমরা রাজ্য সরকারের কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি ৷ রাজ্যও কেন্দ্রকে চিঠি করেছে ৷ কিন্তু কেন্দ্রের তরফে কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না ৷ সরকারের কাছে আমার আবেদন, বিষয়টি একটু সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হোক ৷ এসব আসলে রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ষড়যন্ত্র ৷"

যদিও এর জন্য রাজ্য সরকারকেই দুষেছেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার নিজের শেয়ারের টাকা দিয়ে দিয়েছে ৷ রাজ্য নিজের শেয়ারের টাকা দিতে পারছে না ৷ দেবেই বা কোথায় থেকে ! খেলা, মেলা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করে সব টাকা শেষ করেছে ৷ আর লুট তো আছেই ৷ রাজ্য নিজের শেয়ারের টাকা না দিলে কেন্দ্র তো পরবর্তী কিস্তির টাকা দেবে না ৷ রাজ্য এই টাকার হিসাবও দিচ্ছে না ৷ তাহলে টাকা পাবে কোথা থেকে ?"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক জানাচ্ছেন, রাজ্য তার ম্যাচিং গ্রান্ট দিতে না পারার জন্যই গরিব মানুষ বাড়ি তৈরির টাকা পাচ্ছে না ৷ শুধু মালদা নয়, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে ৷ উপভোক্তারা কবে সেই টাকা পাবেন, তা প্রশাসনেরও জানা নেই ৷

আরও পড়ুন :

1 মৃত্যু মিলিয়ে দিল দুই সম্প্রদায়কে, ধর্মীয় সংকীর্ণতা সরিয়ে সামনে এল মানবতা

2হিন্দু গ্রামে পুজো শুরু করেছিলেন মুসলিম বধূ, তাঁর নামেই 'শেফালি কালীর পুজো' এখন সর্বজনীন

3মুখ্যমন্ত্রীর আমলাদের একাংশ দুর্নীতিতে জড়িত, দাবি খোদ তৃণমূল নেত্রীর

ABOUT THE AUTHOR

...view details