মালদা, 16 নভেম্বর: কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্বে মালদার দুই শহরের গরিব মানুষের প্রাণান্তকর দশা ৷ সরকারি নতুন পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় দুই শহরের দুঃস্থ মানুষরাই ভেঙে ফেলেছিল তাদের পুরোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই ৷ নতুন বাড়ির কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু হঠাৎ সরকারি টাকা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে এই মুহূর্তে তাঁদের অনেককে খেয়ে না খেয়ে বাড়ির ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৷ আর যাঁদের সেই সামর্থ নেই, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নীচে ৷ কবে তাঁদের বাড়ি নির্মাণের টাকা আসবে, জানে না কেউ ৷
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শহরের গরিব মানুষের পাকা বাড়ি তৈরির জন্য রয়েছে সরকারি প্রকল্প 'হাউজ ফর অল' ৷ মোট 3 লাখ 68 হাজার টাকার এই প্রকল্পে উপভোক্তাকে দিতে হবে 25 হাজার টাকা ৷ কেন্দ্র দেবে দেড় লাখ এবং রাজ্য দেবে 1 লাখ 93 হাজার টাকা ৷ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে চার থেকে পাঁচটি কিস্তিতে অনুদানের টাকা ঢুকবে ৷ প্রতিটি পর্যায়ের কাজের পর তার রিপোর্ট দেখে পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়া হবে ৷ 2018-19 অর্থবর্ষে মালদায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ৷ কিন্তু এখন পুরোপুরি বন্ধ ৷ ঘর তৈরির কিস্তির টাকা না পেয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রায় 3 হাজার 600 এবং পুরাতন মালদা পৌরসভার প্রায় 2 হাজার 400 উপভোক্তা ৷
এই বৈশাখেই সরকারি পাকাবাড়ি পাওয়ার আশায় নিজের পুরনো ঘর ভেঙে ফেলেছেন পুরাতন মালদার রসিলাদহের পূর্ণিমা সিংহ ৷ ভেবেছিলেন, কয়েকমাসের মধ্যে নতুন বাড়ি তৈরি হয়ে যাবে ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ তখন থেকে পরিবার-সহ খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, "পাকা বাড়ির স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমার বড় ছেলেটাই মারা গেল ৷ টাকা আর এল না ৷ একবারই টাকা পেয়েছি ৷ ছোট ছেলে তার পরিবার নিয়ে আমার কাছে থাকে ৷ প্রথমে অন্য জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়েছিলাম ৷ বর্ষার সময় জল ঢুকে গিয়েছিল ৷ তখন অন্যের জমিতে উঠে এসেছি ৷ ধূপকাঠি তৈরি করে কোনওরকমে দিন চলে ৷ কবে বাড়ির টাকা আসবে, কাউন্সিলর বলতে পারছেন না ৷"
বাচামারি পালপাড়া নেতাজিপল্লির রসিক পাল বলছেন, "2019 সালে হাউজ ফর অল প্রকল্পে আমার নাম উঠেছিল ৷ নতুন বাড়ির আশায় আমি পুরনো ঘর ভেঙে দিই ৷ পরিবার নিয়ে ভাড়া বাড়িতে উঠি ৷ চারবছর ধরে সেখানেই রয়েছি ৷ নতুন বাড়ি তৈরির তিন কিস্তির টাকা পেয়েছি ৷ 2 লাখ টাকা ৷ আমি চায়ের দোকান করে কোনওমতে সংসার চালাই ৷ প্রতি মাসে 2 হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠেছে ৷ ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছি না ৷ বাকি টাকার জন্য 2 বছর ধরে পৌরসভায় ঘুরছি ৷ কবে টাকা আসবে, কেউ জানাতে পারছে না ৷"
এনিয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে রাজি না হলেও পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, "2020-21 এবং 21-22 অর্থবর্ষে আমরা এই প্রকল্পে প্রায় 2 হাজার 400 জনের নাম পাঠিয়েছিলাম ৷ সরকার সেই তালিকা অনুমোদন করেছে ৷ রাজ্য সরকার নিজের প্রথম কিস্তির টাকাও দিয়ে দেয় ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এতে যেসব গরিব মানুষজন পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় নিজেদের কাঁচা বাড়ি ভেঙে ফেলেছিলেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন ৷ কেউ ভাড়াবাড়িতে রয়েছেন, কেউ আবার ফাঁকা মাঠে প্লাসটিক টাঙিয়ে থাকছেন ৷ আমরা রাজ্য সরকারের কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি ৷ রাজ্যও কেন্দ্রকে চিঠি করেছে ৷ কিন্তু কেন্দ্রের তরফে কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না ৷ সরকারের কাছে আমার আবেদন, বিষয়টি একটু সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হোক ৷ এসব আসলে রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ষড়যন্ত্র ৷"