মালদা, 3 অক্টোবর: প্রশাসন ছুঁলে আঠারো ৷ কিন্তু চোরে ছুঁলে যে বিশ ঘা ! আতান্তরে বানভাসিরা ৷ বানের জল ঘরে ঢুকেছে ৷ কোথাও বা গ্রামের চারদিকে জল ৷ কিন্তু বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না কেউ ৷ এ দিকে, প্রশাসনের তরফে বারবার জানানো হয়েছে, টাঙন-পুনর্ভবার জল আরও বাড়তে পারে ৷ পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে ৷ তাই সবাইকে কাছাকাছি ত্রাণশিবিরে যেতে হবে ৷ প্রসূতিদের অবশ্যই যেতে হবে শিবিরে ৷ ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যেতে হবে মায়েদেরও ৷ জেলাশাসক নিজে এলাকায় এসে সেই বার্তা দিয়ে গিয়েছেন ৷ তাঁর বার্তা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে ৷ কারণ আগেও বন্যায় ত্রাণশিবিরে যাওয়ায় সর্বস্ব হারানোর স্মৃতি তাঁদের এখনও তাজা ৷
আসলে 2017 সালের ঘটনা এখনও ভুলতে পারেননি কেউ ৷ সে বারও বান এসেছিল টাঙন-পুনর্ভবায় ৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ঘর ছেড়েছিলেন বানভাসিরা ৷ উঠেছিলেন কাছাকাছি ত্রাণশিবিরে ৷ দিন পনেরো পর নদীর জল নেমেছিল ৷ প্রথমে পুরুষরা বাড়ি ফিরেছিলেন ৷ বাড়িতে পা দিতেই চোখ কপালে উঠেছিল সবার ৷ তাঁদের অনুপস্থিতি সেই দুর্যোগেও পৌষ মাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল চোরের দলের ৷ নৌকায় এসে একের পর এক ঘর ফাঁকা করে দেয় তারা ৷ অনেক বাড়ি তো পুরোই সাফ হয়ে গিয়েছিল ৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর আরেক দুর্যোগ ঘনিয়ে এসেছিল পরিবারগুলিতে ৷ তাই এ বার তাঁরা আর বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না ৷ এমনকি জেলাশাসকের আবেদনের পরেও ৷
কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি এবং উত্তরবঙ্গ ও বাংলাদেশ থেকে নেমে আসা জলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ফুলে উঠেছে টাঙন আর পুনর্ভবা ৷ এই দুটি নদী মালদার হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লক দিয়ে বয়ে গিয়ে আবারও ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে ৷ দুই নদীর জলস্ফীতিতে বামনগোলার একাধিক জায়গায় বাঁধ কেটেছে ৷ নদীর জল ঢুকে পড়েছে অন্তত 19টি গ্রামে ৷ কম করে 1500 পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ৷
বটতলি, নন্দিনাদহ, খুটাদহ, ডোবা হাঁসপুকুর, ছোটপাতাড়ি, তালতলি, কুপাদহ, শোনঘাটের মতো গ্রামগুলিতে এখন কোথাও কোমর, কোথাও বা বুক জল ৷ মাঠের ফসল জলে ডুবে রয়েছে ৷ প্রতিটি গ্রামই জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৷ পরিস্থিতি ঘোরালো বুঝে কিছু মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়ি চলে গিয়েছেন বটে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনও বাড়িতেই রয়েছেন ৷ অনেক বাড়িতে রয়েছেন গর্ভবতীরা ৷ রাতবিরেতে কোনও সংকট হলে তাঁদের হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া শুধু দুরুহই নয়, প্রায় দুষ্কর ৷ সে কারণেই গতকাল জেলাশাসক এলাকায় গিয়ে প্রসূতিদের দ্রুত গ্রাম ছাড়ার আবেদন জানান ৷