পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কেরালা থেকে ফেরার পথে ট্রেনেই মৃত্যু মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের

লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়েছেন কেরালায় কাজ করতে যাওয়া মালদার এক শ্রমিক। তবে ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় এতদিন সেখানেই আটকে ছিলেন তিনি। এরপর ট্রেনের টিকিট পেলেও আর বাড়ি ফেরা হল না মালদার শেখ খাতিপের। মাঝপথে ট্রেনেই মৃত্যু হয় তাঁর। আজ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে মালদা মেডিকেলে।

By

Published : Jun 9, 2020, 12:42 PM IST

শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে মৃত্যু
ট্রেনে মালদার পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু

মালদা, 9 জুন : কেরালা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনেই মৃত্যু হল মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিকের ৷ আজ ভোরে ওই শ্রমিকের দেহ মালদা টাউন স্টেশনে এসে পৌঁছোলে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠায় রেল পুলিশ ৷ এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে মৃত শ্রমিকের পরিবার সহ এলাকায় ৷

মৃত শ্রমিকের নাম শেখ খাতিপ ৷ বয়স 27 বছর ৷ বাড়ি রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদপুর গ্রামে ৷ খাতিপ দীর্ঘদিন ধরেই কেরালায় নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লকডাউন শুরুর কয়েক মাস আগে তিনি ফের কেরালা যান ৷ কিন্তু কোরোনা আবহে সেখানে আটকে পড়েন তিনি ৷ দীর্ঘদিনের লকডাউনে আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন খাতিপ ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি গুয়াহাটিগামী একটি শ্রমিক স্পেশালে জায়গা পান ৷ 6 জুন সেই ট্রেনে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি ৷ কিন্তু গতকাল সকালে ট্রেনেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ আজ ভোরে তাঁর মৃতদেহটি মালদা টাউন স্টেশনে পৌঁছোয়৷

খাতিপের আব্বা শেখ সালেক বলেন, “মাস ছয়েক আগে ছেলে কেরালায় শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিল৷ নিয়মিত বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগও রাখত সে৷ লকডাউনে ওঁর কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও ট্রেন না পাওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারেনি সে৷ গতকাল আমরা খবর পাই, মাঝরাস্তায় ট্রেনেই ছেলের ইন্তেকাল হয়েছে৷ কিন্তু সে অসুস্থ ছিল বলে আমরা জানতাম না৷"

শওহরের অকাল প্রয়াণে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই লাকি বিবি৷ বছর পঁচিশের ওই যুবতির দুই ছেলে রয়েছে৷ বড়টি পাঁচ বছরের, ছোট ছেলের বয়স মাত্র তিন বছর৷ কোনওরকমে বলেন, “কেরালায় খাটতে গিয়েছিল৷ লকডাউনে বসেই ছিল৷ কাজকর্ম সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর৷ অনেকদিন ধরেই ওঁ কেরালায় কাজ করত৷ প্রায় ছয় মাস আগে ফের সেখানে গিয়েছিল৷ প্রায়ই আমার সঙ্গে ফোনে কথা হত৷ গতকাল খবর পাই, ট্রেনে চিকিৎসা না পেয়ে ওঁ মারা গিয়েছে৷”

গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মাজলুম শেখ বলেন, “এই এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জন কেরালায় কাজ করতে গিয়েছিল৷ লকডাউনে খাতিপ আমাদেরও বলেছিলেন, তাঁরা বাড়ি ফিরতে চান৷ কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করতে পারছেন না তাঁরা ৷ আমরা সেকথা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সহ পুলিশকেও জানাই৷ কিন্তু সবার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ শেষ পর্যন্ত ট্রেনে কয়েকজন টিকিট পান৷ তাঁরা গত ৬ জুন সেখান থেকে রওনা দেন৷ আমরা খবর পেয়েছি, ট্রেনে ওঠার পর খাতিপের বমি আর পায়খানা শুরু হয়৷ ট্রেনে কোনও চিকিৎসা হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত ট্রেনেই খাতিপের মৃত্যু হয়৷ আজ কেরালা থেকে প্রায় ৫০ জন ফিরে এসেছেন৷ আমরা সবাইকে প্রথমে মালদা মেডিকেলে পাঠিয়েছি৷ সেখানে শারীরিক পরীক্ষার পরেই সবাইকে গ্রামে ঢুকতে দেব৷ খাতিপের বিবি ও দুই ছেলের জন্য আমাদেরও খারাপ লাগছে৷ এদের জন্য কোনও সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে৷

মালদা টাউন GRP থানার IC ভাস্কর প্রধান জানিয়েছেন, “আজ ভোর থেকে মোট নয়টি ট্রেন মালদা স্টেশনে এসেছে৷ তার মধ্যে পাঁচটি শ্রমিক স্পেশাল৷ এর মধ্যে কেরালা থেকে গুয়াহাটিগামী একটি শ্রমিক স্পেশাল থেকে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে৷” এদিক পুখুরিয়া থানার OC ঝোটন প্রসাদ বলেন, “মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পর দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হবে৷ তারপর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব৷”

মালদা মেডিকেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শ্রমিকের ময়নাতদন্তের পাশাপাশি মৃতদেহ থেকে লালারস সংগ্রহ করা হবে৷ তিনি কোরোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হবে৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details