মালদা, 30 সেপ্টেম্বর: তিনি রাঁধেন, চুল বাঁধেন ৷ তিনি স্কুলেও পড়ান ৷ তিনি মূর্তিও গড়েন ৷ তিনিই আবার পুজো করেন ৷ মাস, দিন পেরিয়ে হাতে আর ঘণ্টা মাপা সময় ৷ এখন চরম ব্যস্ত তিনি ৷ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি মূর্তি গড়ার কাজ ৷ তারপরেই তো তাঁকে পুজো করার প্রস্তুতি নিতে হবে (Malda Teacher Makes Durga Idol) ৷
তিনি রিনি কুমার মজুমদার ৷ রতুয়া জুনিয়র গার্লস স্কুলের অঙ্কের শিক্ষিকা ৷ থাকেন মালদা শহরের ভবানী মোড়ের একটি ফ্ল্যাটে ৷ স্বামী ধৃতিমান মজুমদার জালালপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ৷ দুই ছেলে ৷ বড় ছেলে ধ্রুবজ্যোতি ক্লাস সিক্সে পড়ে ৷ ছোট দেবানিক এবার ক্লাস ওয়ানে উঠেছে ৷ ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই দম ফেলার ফুরসত নেই ৷ দুই ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করা ৷ স্বামীর সঙ্গে নিজেরও কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার তাড়া ৷ মালদা শহর থেকে রতুয়ার দূরত্বও নেহাত কম নয় ৷ স্কুল থেকে ঘরে ফিরতে সেই সন্ধে ৷ তারপর ছেলেদের পড়াতে নিয়ে যাওয়া ৷ রাতের রান্না ৷ তার মধ্যেই মনের অবসর খুঁজে নিয়েছেন রিনিদেবী ৷ শিল্প তাঁকে মানসিক শান্তি দেয় ৷
আরও পড়ুন:শ্রদ্ধানন্দ পার্ক যেন গ্রিসের ‘স্যান্টরিনি’ শহর
দুর্গাপ্রতিমা গড়ার শুরুটা হয়েছিল 6 বছর আগে ৷ বড় ছেলের আবদারে ৷ সে বাড়িতে দুর্গাপুজো করতে চায় ৷ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন জেদ চেপে বসে অঙ্কের শিক্ষিকার মনে ৷ পুঁজি বলতে মেয়েবেলায় ছবি আঁকার শিক্ষা ৷ তাতেই ভর করে নেমে পড়েছিলেন মাতৃবন্দনায় ৷ হাতের কাছে ফেলে দেওয়া যা পেয়েছিলেন, তা দিয়েই প্রথমবার তৈরি করে ফেলেছিলেন মাতৃমূর্তি ৷ ছেলেদের পাশে রেখে নিজেই করেছিলেন মন্ত্রোচ্চারণ ৷ সেই শুরু ৷ আজ পর্যন্ত সেই রুটিনে বাধা পড়েনি ৷
অঙ্কের শিক্ষিকার সঙ্গে মূর্তি গড়ার কাজটা বোধহয় একসঙ্গে যায় না...শুনেই রিনিদেবী বলে ওঠেন, "কাজ আর নেশা, পুরোপুরি আলাদা ৷ মূর্তি গড়া আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা ৷ এবার কাগজের মণ্ড, প্লাস্টার অফ প্যারিস, ওয়াল পট্টি, এসব দিয়েই দুর্গামূর্তি গড়েছি ৷ কাজের চাপে হাতে সময় খুব কম ৷ সবকিছু সামলেই আমাকে নিজের শিল্পসত্তা বাঁচিয়ে রাখতে হয় ৷ মাসখানেক ধরে এই মূর্তি তৈরি করেছি ৷ সামনেই মায়ের বাড়ি ৷ প্রথম থেকে আমার মায়ের বাড়িতেই দুর্গাপুজো করি ৷ আমিই এই পুজোর পুরোহিত ৷ মাতৃমূর্তি গড়তে আমাকে নিজের সঙ্গেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয় ৷"
মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত রিনিদেবী আরও পড়ুন:মহাপঞ্চমীতে ঢাকের বাদ্যিতে মুখরিত শিয়ালদা চত্বর, বায়নার অপেক্ষায় ঢাকিরা
ছেলের আবদারে মূর্তি গড়ায় হাত ৷ এখন সেটা নেশা ৷ তবে এখানেই থেমে থাকতে রাজি নন অঙ্কের শিক্ষিকা রিনিদেবী ৷ ইটিভি ভারতকে জানালেন, শুধু সময়ের একটু সুযোগ চান তিনি ৷ সেই অবসরে বানাতে চান বিভিন্ন ভাষ্কর্য ৷ ছোটবেলার সুপ্ত বাসনাটা ফের জেগে উঠেছে তাঁর মনে ৷