মালদা, 19 মে : মারাত্মক রূপ নিয়েছে করোনা ৷ সংক্রমণের হার কমলেও বাড়ছে মৃত্যু ৷ চারদিকে নেই নেই রব ৷ হাসপাতালে বেড নেই, অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই, প্রয়োজনীয় ওষুধ অমিল, কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এসব ৷ সমস্যা যে রয়েছে, তা জানে সরকারও ৷ তাই রাজ্যের তরফে বন্ধ থাকা স্কুলগুলিতে সেফ হোম খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
কিন্তু তার অনেক আগেই আক্রান্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছেন পুরাতন মালদার বাচামারি এলাকার এক যুবক ৷ নিজের বাড়িতেই বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত সেফ হোম ৷ চিকিৎসার সমস্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলেছেন সেখানে ৷ রয়েছেন এক চিকিৎসকও ৷ ইতিমধ্যে তাঁর সেফ হোমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন চার করোনা আক্রান্ত ৷ এখন চিকিৎসা চলছে দু’জনের ৷ তবে আজই সংখ্যাটা তিনে দাঁড়াবে ৷
পেশায় ব্যবসায়ী এই যুবকের বাড়ি পুরাতন মালদা পৌরসভার বাচামারিতে ৷ দোতলা বাড়ি ৷ বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বাবা-মা ৷ তাঁদের উপরতলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ আর নীচতলায় তৈরি করেছেন সেফ হোম ৷ কাদের জায়গা হচ্ছে এখানে ? যেসব আক্রান্তের বাড়িতে বৃদ্ধ অভিভাবক রয়েছেন, অথচ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার ব্যবস্থা নেই, তাঁদেরই তিনি তুলে আনছেন নিজের তৈরি সেফ হোমে ৷
সেখানে রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, নেবুলাইজার, পালস্ অক্সিমিটার-সহ করোনা চিকিৎসার যাবতীয় ওষুধপত্র ৷ স্থানীয় চিকিৎসক অজিত দাস প্রতিদিন সেখানে থাকা রোগীদের পরীক্ষা করছেন ৷ দিনে একাধিকবার ৷ দৈনিক চারবেলা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার পাচ্ছেন রোগীরা ৷ নিজের হাতেই ওই রোগীদের সেবা করছেন স্নেহাংশু ভট্টাচার্য ৷ গত 3 মে থেকে চালু হয়েছে তাঁর সেফ হোম ৷
নিজের বাড়িতে সেফ হোম বানিয়ে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় যুবক স্নেহাংশুবাবু বলছেন, “অনেকের বাড়িতেই হোম আইসোলেশনে থাকার ব্যবস্থা নেই ৷ অথচ হয়তো বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন ৷ এসব সংক্রামিতদের খবর পেলেই আমি তাঁদের কাছে যাচ্ছি ৷ তাঁরা চাইলে আমি এখানে নিয়ে আসছি ৷ কারণ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যেভাবেই হোক, এসময় সুস্থ রাখতে হবে ৷ কোভিড চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা এখানে আমি গড়ে তুলেছি ৷ এলাকার এক চিকিৎসক সবসময় আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছেন ৷ তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ ৷ এই অতিমারী পরিস্থিতিতে আমার মতো অনেক ভাই মানুষের কাজ করে যাচ্ছেন ৷ সবার কাছে আবেদন, নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী সেই ভাইদের পাশে দাঁড়ান ৷”
আরও পড়ুন :তেজস্বী যাদব তাঁর সরকারি বাসভবনে তৈরি করলেন কোভিড কেয়ার সেন্টার
কয়েকদিন আগে স্নেহাংশুবাবুর সেফ হোমে এসেছেন হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তালুকদার পাড়ার বাসিন্দা তারাশংকর রায় ৷ তিনি বলেন, “10 মে আমার শরীরে করোনা ধরা পড়ে ৷ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলা হয় ৷ কিন্তু বাড়িতে তেমন জায়গা নেই ৷ তার উপর বৃদ্ধ বাবা-মা, দু’জনেই অসুস্থ ৷ প্রতিবেশীরাও করোনা শুনলে ভয় পাচ্ছেন ৷ সেই খবর দিতেই স্নেহাংশু দাদা বাড়িতে গিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে আসেন ৷ আমার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল ৷ তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেন ৷ চারবেলা পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন ৷ নিজের হাতে আমার সেবা করছেন ৷ সর্বশক্তিমান ভগবানরূপেই তাঁকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন ৷”