মালদা, 10 অক্টোবর : বিবেক দাসের হাত পেকেছিল রং-তুলিতেই ৷ বাবা ছিলেন প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী ৷ ঠাকুরদা ছিলেন পটশিল্পী ৷ তাই বাপ-ঠাকুরদার কাছ থেকেই শিল্পের অ আ ক খ শেখা বিবেকের ৷ পরবর্তী সময়ে ছবি আঁকার ব্যকরণ শিখেছিলেন জেলার অন্যতম বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কৌশিক পোদ্দারের কাছে ৷ দীর্ঘদিন তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকার পর আধুনিক চিত্রকলা শিখতে কলকাতায় যান বিবেক ৷ সমীর আইচের কাছে আট বছর আধুনিক চিত্রকলার প্রশিক্ষণ নেন ৷ ধীরে ধীরে ছবি আঁকার পাশাপাশি মৃৎশিল্প আর মণ্ডপ কাজও শুরু হয় ৷ 14 বছর ধরে দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করছেন 37 বছরের বিবেক ৷ থিমের মণ্ডপের সঙ্গে প্রতি বছর মিশিয়ে দিচ্ছেন তাঁর মৃৎশিল্পী সত্ত্বাকে ৷ তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত শিল্পকলা পেয়েছে একাধিক সম্মান ও পুরস্কার ৷ স্বীকৃতি এসেছে সরকারি ও বেসরকারি তরফে ৷
আরও পড়ুন :Contai Puja Inauguration : অসুস্থ শিশির, কাঁথিতে ‘অধিকারীদের’ পুজো উদ্বোধনে পরমব্রত, তনুশ্রী
বিবেক দাস ৷ বাড়ি মালদা শহরের ঝলঝলিয়া এলাকার দেশবন্ধু পাড়ায় ৷ বাবা হরিগোপাল দাস ছিলেন প্রখ্যাত পটশিল্পী ৷ তিনি মূর্তিও গড়তেন ৷ ছোটবেলায় বাবা আর ঠাকুরদার হাত ধরেই বিবেকের শিল্পচর্চার সূচনা ৷ পরে যোগাযোগ হয় গোলাপট্টির প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কৌশিক পোদ্দারের সঙ্গে ৷ তাঁর কাছে চিত্রশিল্পের কিছুটা অধ্যায় পেরিয়ে চলে যান সমীর আইচের কাছে ৷ জানতে পারেন আধুনিক শিল্পকলার এদিক-ওদিক ৷ কিন্তু সংসারের চাহিদায় বছর আটেক পরেই ঘরে ফিরে আসতে হয় ৷ ধীরে ধীরে দুর্গাপ্রতিমা আর মণ্ডপ তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়েন ৷ গত 14 বছর ধরে সেই কাজ করে চলেছেন তিনি ৷ তবে প্রতি বছরই একটি বা দু’টি পুজোর কাজই হাতে নেন বিবেক ৷ তার বেশি নয়। এবার তাঁর শিল্পকর্ম ধরা পড়বে মালদা শহরের কুতুবপুর মিস্ত্রীপাড়া সর্বজনীনে ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিখ্যাত পটচিত্র এবার এই পুজোমণ্ডপের থিম ৷ তার জন্য সেখানকার পটশিল্পীদের মালদায় নিয়ে এসেছেন বিবেক ৷
ছবি আঁকতে ব্যস্ত শিল্পী ৷ তাঁর এই কাজ প্রসঙ্গে বিবেক বলেন, “মূলত লোকশিল্প নিয়েই আমি দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরি করি ৷ কারণ, লোকশিল্প আমার ভীষণ পছন্দের ৷ দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছে ছিল, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় যাঁরা পটশিল্প নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের দিয়ে একবার দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরি করব ৷ সেটা এই পুজো উদ্যোক্তাদের খুলে বলি ৷ এই শিল্পীদের নিয়ে কাজ করার আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল ৷ করোনাকালে এই শিল্পীদের যে দুরবস্থা, তা থেকে তাঁদের কিছুটা পরিত্রাণ দিতেই আমার এই চিন্তা ৷’’
পটচিত্রে সেজে উঠছে মণ্ডপ ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াত থেকে মালদা শহরের মণ্ডপে পটচিত্র তৈরি করতে এসেছেন জবা চিত্রকর। সঙ্গে রয়েছেন পরিবারের অন্য শিল্পী-সদস্যরাও ৷ শুধু ছবি আঁকা নয়, জবা গানও গান ৷ করোনা নিয়ে নিজের লেখা ও সুর দেওয়া গান গেয়ে শোনালেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে ৷ জবা বলেন, ‘‘মেদিনীপুরের বিখ্যাত শিল্পগুলির মধ্যে অন্যতম পিংলার পটচিত্র ৷ বিয়ের পর থেকেই এই কাজ করছি ৷ 30 বছর হয়ে গেল ৷ ইন্টারনেটে আমার নাম, ফোন নম্বর, সব দেওয়া আছে ৷ তা দেখে অনেক লোক আমার কাছে যায় ৷ বিবেকদাও আমার কাছে গিয়েছিলেন ৷ বিভিন্ন জায়গায় পটচিত্র আঁকি ৷ শুধু পুজোমণ্ডপ নয়, আমরা জামাকাপড়েও ছবি আঁকি ৷ সেসব ভালোই বিক্রি হয় ৷ আমরা ছবিতে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করি ৷ ছবি আঁকার সঙ্গে আমরা গানও গাই ৷ করোনা ভাইরাস নিয়েও গান বেঁধেছি ৷ এই মণ্ডপেও এবার আমাদের গান শোনা যাবে ৷”
পিংলার পটচিত্রে সেজে উঠছে মালদার পুজোমণ্ডপ আরও পড়ুন :Durga puja: তপশিলি পরিবারের হাতে পূজিত হচ্ছেন কাপাসডাঙার দুর্গা
কুতুবপুর মিস্ত্রীপাড়া সর্বজনীনের তরফে ব্রততী চক্রবর্তী দত্ত জানালেন, “আধুনিকতার চাপে আমরা পুরনো যেসব ঐতিহ্য হারাতে বসেছি, তাকেই এবার পুজোর থিম হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছি ৷ আমরা চেয়েছি, মণ্ডপ তৈরি করে করোনাকালে শিল্পীদের হাতে কিছুটা হলে অর্থ দিতে ৷ পুজোয় তাঁদের মুখে কিছুটা হাসি ফোটাতে চেয়েছি ৷ এই শিল্পকলা মূলত ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পকলা ৷ আমরা পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে এই শিল্পীদের নিয়ে এসেছি ৷ শুধু ছবি এঁকে নয়, এই শিল্পীরা ছবির সঙ্গে গান গেয়ে তাঁদের শিল্প উপস্থাপন করেন ৷ এই ভাবনাটা মূলত বাপ্পা গুপ্তের ৷ সেই ভাবনাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন বিবেক দাস ৷ আমাদের অল্প বাজেটের পুজো ৷ মাত্র দু’লক্ষ টাকায় আমরা পুজোর আয়োজন করেছি ৷ মণ্ডপে আমরা সম্পূর্ণভাবে করোনাবিধি মেনে চলব ৷’’