মালদা, 8 সেপ্টেম্বর: গঙ্গার ভাঙন কেড়েছে জমি ৷ গ্রাস করেছে ঘরবাড়িও ৷ মানুষের দানাপানি, মাথার ছাদের পর এবার গ্রামীণ ভবিষ্যতকে নিশানা করেছে গঙ্গা নদী ৷ গঙ্গার ভাঙন এবার এগোচ্ছে স্কুলের দিকে ৷ আর মাত্র তিনশো মিটারের মতো দূরত্ব ৷ রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কাটাহা দিয়ারা উচ্চবিদ্যালয়কে রক্ষা করতে সরকারের কাছে আর্তি পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষজনের ৷ অবশ্য সেচ দফতরের মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, স্কুল রক্ষা করতে তাঁরা যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন ৷
চলতি মরশুমের গঙ্গা ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ কান্তটোলা গ্রামে ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে নদীর জল। 30-35টি বাড়ি চলে গিয়েছে গঙ্গাগর্ভে ৷ দিশেহারা মানুষজন নিজেদের ঘর ছেড়ে সরে পড়ছে অন্যত্র ৷ যাঁদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার ধারে ৷ মাথা গোঁজার আস্তানা বানানোর জন্য বুধবারই তাঁরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে পুনর্বাসনের জায়গা দাবি করেছিলেন ৷ এই মানুষজনকে পরিত্রাণ দিতে জেলা প্রশাসন সরকারি খাস জমির খোঁজ শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে ৷
শুধু বর্তমান নয়, গঙ্গার দাপটে অস্তিত্বের সংকটে মহানন্দটোলার ভবিষ্যতও ৷ এই এলাকার উচ্চশিক্ষার একমাত্র ঠিকানা কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল ৷ মহানন্দটোলা গ্রামে 1949 সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার মুখে ৷ এই মুহূর্তে স্কুল থেকে মাত্র 300 মিটার দূর দিয়ে বইছে গঙ্গা নদী ৷ প্রতিদিনই একটু একটু করে ভাঙছে নদীর বাঁধ ৷ ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পড়ুয়া, শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবকদেরও ৷
স্কুলের বাংলা শিক্ষক সুকান্ত খাঁ বর্ধমানের বাসিন্দা ৷ কর্মসূত্রে তাঁর মালদায় আসা ৷ তিনি বলেন, “2013 সালে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি ৷ তখন গঙ্গার ভাঙনের কথা শুনেছি ৷ 2018 থেকে ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেড়ে গিয়েছে ৷ একেকটা গ্রাম গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছে ৷ গত পরশু শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন কান্তটোলার অনেক বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ৷ পড়ুয়ারা বলছে, তারা কোথায় যাবে ? তাদের সমস্ত নথিপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ আমরা স্কুলের তরফে প্রশাসনের সব মহলে গঙ্গা ভাঙন রোধের আবেদন জানিয়েছি ৷ কিন্তু, স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হয়নি ৷’’
তিনি জানান, কোনও দোষারোপ করবেন না ৷ তবে, দুই সরকার যদি একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধানের কথা ভাবত, তবে ভালো হত ৷ অযথা দড়ি টানাটানি করে কোনও লাভ নেই বলে মনে করেন স্কুলের বাংলা শিক্ষক ৷ তাঁর কথায় মানুষকে বাঁচাতে পারলেই আসল লাভ ৷ তাহলে শিক্ষকদের আর স্কুলের আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীর হাহাকার শুনতে হবে না ৷