মেয়ের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মা মালদা, 20 জানুয়ারি: ব্রিটিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেরার শিরোপা পেলেন মালদার মেয়ে ৷ ইংল্য়ান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্য়ালয়ে (University of Warwick) স্নাতকোত্তর স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় 78 শতাংশ নম্বর পেয়েছেন আলিশা ইকবার ৷ সকলকে পিছনে ফেলে হয়েছেন প্রথম (Malda Girl Tops at UK University) ৷ গত 17 জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেরার স্বীকৃতি ৷ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নিজের সাফল্যের শংসাপত্র পান আলিশা ৷ মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত আলিশার মা, শিক্ষারত্ন শিক্ষিকা তানিয়া রহমত ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে ফোনে তাঁর এবং তাঁর মেয়ের লড়াইয়ের কাহিনি শোনালেন তানিয়া ৷
আলিশাদের বাড়ি মালদার কালিয়াচক-2 নম্বর ব্লকের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়াগ্রামে ৷ গুণী পরিবারের সন্তান তিনি ৷ তাঁর মা তানিয়া রহমত স্থানীয় বাবুরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ৷ বাবা হাজিরুল ইকবার পেশায় চিকিৎসক ৷ আলিশার বোন আলিফিয়াও কৃতী ছাত্রী ৷ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভূতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি ৷ বর্তমানে দিল্লিতে ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে গবষেণা করছেন ৷
আরও পড়ুন:শুরু হল বাংলার অনূর্ধ্ব-18 মহিলা ক্রিকেট দলের বাছাইপর্ব
তানিয়া জানান, একবছর আগে কমনওয়েলথ স্কলার মনোনীত হয়ে ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান আলিশা ৷ অ্যাপ্লায়েড থিয়েটার নিয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন তিনি ৷ প্রথম থেকেই প্রত্য়েকটি সেমিস্টারে প্রথম হন আলিশা ! চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষায় পান 78 শতাংশ নম্বর ৷ আর তার জেরেই মেলে সেরার স্বীকৃতি ৷
তবে, আলিশার এই সফর সহজ ছিল না মোটেও ৷ তাঁর মা জানান, তাঁরা মধ্যবিত্ত পরিবার ৷ বিরাট রোজগার নেই ৷ তার উপর সামাজিক বহু প্রতিকূলতা রয়েছে ৷ কিন্তু, সেসব উপেক্ষা করেই আলিশাকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেন তাঁরা ৷ আলিশা ছোট থেকেই মেধাবী ও পরিশ্রমী হওয়ায় লড়াই কিছুটা সহজ হয় ৷ পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো ও ছবি আঁকাতেও আলিশা সমান পারদর্শী ৷ সব দিক খতিয়ে দেখে এনটিপিসির তরফে আলিশাকে অলরাউন্ডার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় ৷ পরবর্তীতে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন আলিশা ৷
বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শুরু করলেও আলিশার পছন্দের বিষয় ছিল ইংরেজি ৷ পরে তাই বিষয় বদলান তিনি ৷ এক্ষেত্রেও প্রত্যেক সেমিস্টারে প্রথম হয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সেরা হন ৷ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক পান আলিশা ৷ সেইসঙ্গে, সেরা খেলোয়াড়, সেরা চিত্রশিল্পী, সেরা প্রাবন্ধিক হিসাবেও স্বর্ণপদক পান তিনি ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে দেওয়া হয় সেরার সেরা পুরস্কার 'পাপা মিঞা পদ্মভূষণ' ! এরপর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন আলিশা ৷ পরবর্তীতে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি নিয়ে গবেষণা করেন ৷ পান পিএইচডি ডিগ্রি ৷ সেই সময়েই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ৷ সেই চাকরিতে আবেদন করেন আলিশা ৷ 2017 সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপক হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি ৷ পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য কমনওয়েলথ স্কলার হিসাবে ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি দেন বাংলার এই কৃতী সন্তান ৷
