পরীক্ষামূলকভাবে নিজের 10 কাঠা জমিতে তিনি কমলালেবুর চাষ করেছেন মালদা, 14 ডিসেম্বর: আমের দেশে এবার উঁকি দিচ্ছে কমলালেবু ৷ পুরাতন মালদা ব্লকের মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালপাড়া গ্রামের যুবক দীপক রাজবংশী এই জেলায় কমলালেবু উৎপাদনের আশা জোগাচ্ছেন ৷ পরীক্ষামূলকভাবে নিজের 10 কাঠা জমিতে তিনি কমলালেবুর চাষ করেছেন ৷ উৎপাদন বেশ ভালো ৷ স্বাদেও মিষ্টি ৷ কিন্তু উৎপাদিত কমলালেবুর আকার নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি ৷ ফলের আকার বাড়ানোর জন্য আরও পরীক্ষা করতে চান তিনি ৷ তারপরেই তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই জেলায় কমলালেবুর চাষে নামতে চান ৷ দীপকবাবুর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর ৷
পুরাতন মালদার মাটি কিছুটা শক্ত, পাথুরে ৷ পাহাড়ের মাটির সঙ্গে সামান্য হলেও যেন মিল রয়েছে ৷ এই বিষয়টিই বছর কয়েক আগে ভাবিয়ে তুলেছিল দীপকবাবুকে ৷ নিজের বাড়ি লাগোয়া 10 কাঠা জমিতে তিনি কমলালেবুর পরীক্ষামূলক চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন ৷ বছর চারেক আগে নদিয়ার রানাঘাটের একটি নার্সারি থেকে কিনে আনেন 10টি ভুটানি কমলালেবুর চারাগাছ ৷ জমিতে সেই চারা লাগিয়ে শুরু হয় পরিচর্যা ৷ পরবর্তীতে একটি চারা মারা যায় ৷ তবে বাকি ন'টি গাছ এখন সুস্থ ও সবলভাবে বেড়ে উঠছে ৷
গাছগুলির উচ্চতা সাত ফুট ছাড়িয়েছে ৷ এবার প্রায় দেড় কুইন্ট্যাল কমলালেবু উৎপন্ন হয়েছে ৷ তবে তার আকার দার্জিলিং কমলালেবুর থেকেও খানিকটা ছোট ৷ যদিও তা স্বাদে নাগপুরের কমলালেবুর মিষ্টি ৷ কিন্তু ফলের আকার পছন্দ নয় দীপকবাবুর ৷ তাই তিনি এবার 32 ও 35 টাকা দরে কিলো বিশেক ফল বিক্রি করলেও পুরো উৎপাদন বাজারজাত করার কথা ভাবেননি ৷
এগ্রিকালচারে ডিপ্লোমাধারী দীপকবাবু কিন্তু শুধু কমলালেবুর চাষ করেন না ৷ আম-সহ বিভিন্ন ফল চাষ করেন তিনি ৷ তিনি বলেন, "ফলচাষের প্রতি আমার একটা টান আছে ৷ তবে কমলালেবুকে একটু প্রাধান্য দিয়েছি ৷ আমরা বাজার থেকে কমলা লেবু কিনে খাই ৷ কিন্তু তাতে বিষ রয়েছে কি না, জানি না ৷ তাই নিজে ভালো খাওয়া, অন্যকে ভালো খাওয়ানোর কথা চিন্তা করে পুরোপুরি জৈব পদ্ধতিতে ফলচাষ করি ৷ মালদার মাটিতে কমলালেবু ফলানো তেমন কোনও ব্যাপার নয় ৷ আমি প্রায় চার বছর আগে গাছ বসিয়েছি ৷ গতবার থেকে ফলন শুরু হয়েছে ৷ আমি সার হিসাবে গোবর সার, নিম খোল আর ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ব্যবহার করেছি ৷ কলার খোসা আর গাছ পুড়িয়ে সেই ছাই জলে গুলে প্রয়োগ করেছি ৷ কীটনাশক হিসাবে অ্যালোভেরা পাতা কুচি করে কেটে 15-18 ঘণ্টা রেখে সেই জল স্প্রে করেছি ৷"
পুরাতন মালদার অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার সমজিৎ মজুমদার জানান, মালদার মাটি, রোদ-বৃষ্টি ও আর্দ্রতায় তিনি যেভাবে কমলালেবুর ফলন করেছেন, তা প্রশংসনীয় ৷ জেলা উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক বলেন, "মালদায় কমলালেবুর চাষ হলে জেলার অর্থনীতি আরও ভালো হবে ৷" মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহার কথায়, "রাজ্য সরকারের তরফে ফল, ফুল ও সবজি চাষে বিভিন্নভাবে চাষিদের সহায়তা করা হচ্ছে ৷ আমরা ইতিমধ্যে এনিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ জেলা প্রশাসনের তরফে ওই কমলালেবু চাষিকে সবরকম সহায়তা করা হবে ৷"
আরও পড়ুন:
- অতিরিক্ত ফলন, প্রক্রিয়াজাত কাঁচা আমেরও দর পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা
- জাপানের মিয়াজাকি থেকে থাইল্যান্ডের পালমার, এখন এরাজ্যেও ফলছে বহুমূল্যের আম
- ঘর সাজান কমলালেবু দিয়ে! শিলিগুড়ির এই স্পেশাল কমলার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে