মালদা, 8 অগস্ট: অনলাইন প্রতারণায় আন্তর্জাতিক চক্রের দুই সদস্যকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করল মালদা সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ(malda cyber crime police arrests 1 nigerian from delhi due to online fraud)। ধৃতদের মধ্যে একজন পঞ্জাবের বাসিন্দা ও আরেকজন নাইজেরিয়ান । পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃতদের জেলা আদালতে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ । তবে এই নিয়ে এখনই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি জেলা পুলিশের কোনও কর্তা ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বরে মালদা সাইবার ক্রাইম থানায় মোথাবাড়ি থানা এলাকার এক যুবতি এই প্রতারণা চক্রের শিকার হন । পেশায় যুবতি ওই নার্স লিখিত অভিযোগ করে জানান, ফেসবুকে লন্ডনের একজন চিকিৎসকের অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হয় । যেহেতু তিনি একজন নার্স, তাই তিনি ওই রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেন । এরপর তাঁদের মধ্যে ফেসবুকে দীর্ঘ সময় ধরে বার্তা আদানপ্রদান চলতে থাকে । একদিন ওই চিকিৎসকের তরফে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর একটি ছোট মেয়ে রয়েছে । সেই মেয়েকে রেখে তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন । এরপর বাচ্চা মেয়েটির সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় । বাচ্চাটিও তাঁকে মা বলে ডাকতে শুরু করে । তিনিও তাকে স্নেহ করতে শুরু করেন । এভাবে তিনি একসময় ওই চিকিৎসকের প্রেমে পড়ে যান ।
আরও পড়ুন :বাংলায় বাড়ছে সেক্সটরশনে শিকারের সংখ্যা, বাঁচার উপায় বললেন সাইবার বিশেষজ্ঞ
ওই নার্স সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশকে আরও জানান, এই ঘটনার কিছুদিন পর তাঁর কাছে একটি ফোন আসে । ফোনের ওপার থেকে তাঁকে বলা হয়, মেয়েকে নিয়ে ওই চিকিৎসক ভারতে আসছেন । এর কয়েকদিন পর ফের তাঁর কাছে ফোন আসে । ফোনে ওই চিকিৎসক তাঁকে বলেন, মেয়েকে নিয়ে তিনি দিল্লি চলে এসেছেন । কিন্তু বিমানবন্দরে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়েছে । ভিসা ক্লিয়ারেন্সের জন্য তাঁর কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে । কিন্তু তাঁর কাছে অত টাকা নেই । তিনি চিকিৎসকের কথামতো তাঁকে টাকা পাঠিয়ে দেন । এরপর কখনও কাস্টমস, কখনও এক্সাইজ বা বিভিন্ন সরকারি বিভাগের নামে তাঁর কাছে ফোন আসতে থাকে । প্রতিবারই তাঁর কাছে টাকা চাওয়া হয় । এভাবে তিনি ওই চিকিৎসককে মোট 16 লাখ টাকা দিয়েছেন । শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারেন, তিনি অনলাইন প্রতারণার শিকার । তারপরেই তিনি সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হন ।
আরও পড়ুন :সাইবার চক্রে ব্যাঙ্কের টাকা গায়েব ? ফোন করুন 1930 নম্বরে
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দিল্লির এক কিশোরের ফোন থেকে ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়েছে । ওই কিশোর পুলিশকে জানায়, বছরখানেক আগে বেনেথ নামে এক নাইজেরিয়ান তার ফোন মাঝে মধ্যে ব্যবহার করত । এরপর বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে পুলিশ গোলু সিং নামে এক অটোচালককে জেরা করে । গোলুও পুলিশকে জানায়, নাইজেরিয়ান বেনেথ ভুল বুঝিয়ে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছিলেন । প্রায় 10 দিন তল্লাশি চালানোর পর দিল্লিতে মালদা সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশের হাতে ধরে পড়ে অভিযুক্ত নাইজেরিয়ান বেনেথ । তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু মোথাবাড়ির যুবতিই নয়, তার প্রতারণার শিকার বহু মহিলা । মূলত ডিভোর্সী, বয়স্কা, অবিবাহিতদেরই টার্গেট করত সে ।