পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Mentally Unstable Minor Girl: মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীকে শিকলবন্দি দশা থেকে মুক্তি দিল প্রশাসন, ব্যবস্থা চিকিৎসার - মালদা

2018 সালে পথ দুর্ঘটনায় বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে মালদার চাঁচল 2 নম্বর ব্লকের এক কিশোরী ৷ তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিল জেলা প্রশাসন ৷

Etv Bharat
প্রতীকী ছবি

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 18, 2023, 8:38 PM IST

মালদা, 18 অক্টোবর :2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন ৷ সেদিন এলাকার আরও অনেকের সঙ্গে সামসীর কাণ্ডারণে গিয়েছিলেন তৃণমূলকর্মী গোলাম এসদানি ৷ ওই নির্বাচনে তাঁর এলাকায় জিতেছিল তৃণমূল ৷ কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন গোলাম এসদানি ৷ সামসী থেকে ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল তাঁদের ছোট ট্রাক ৷ মৃত্যু হয়েছিল তিনজনের ৷ ওই তালিকায় ছিলেন গোলাম এসদানিও ৷ বাবার এহেন মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল আট বছরের মেয়েকে ৷ মৃতদেহে মাটি পড়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করে সে ৷ এখন সে 15 বছরের কিশোরী ৷ বর্তমানে সে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ তবে আশার কথা, বিষয়টি জানতে পেরেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় রুবিনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে ব্লক প্রশাসন ৷ ঘটনাটি চাঁচল 2 নম্বর ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরাতন খানপুর গ্রামের ৷

গোলাম এসদানির মৃত্যুর পর তাঁর ভাইরা বড় তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ৷ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ফাতিমা বেওয়ার অন্ন সংস্থানের কোনও উপায় ছিল না ৷ নিজের এবং ছোট মেয়ের পেটের জ্বালা দূর করতে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেন তিনি ৷ সারাদিনে যা জোটে, তাতে দু’জনের পেট ঠিকমতো চলে না ৷ তাই মেয়ের চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি ৷ এদিকে তাঁর অবর্তমানে মেয়েটি ক্রমেই হিংসাত্মক আচরণ শুরু করে ৷ অনেককেই সে কামড়ে-আঁচড়ে দিয়েছে ৷ তাই বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে কোনও বাঁশের সঙ্গে মেয়েকে শিকল বেঁধে ফাতিমা প্রতিদিন বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষা করতে ৷ সন্ধেয় বাড়ি ফিরে মেয়েকে শিকল থেকে মুক্ত করেন ৷ এই সময়টুকু প্রতিবেশীদের ভরসাতেই থাকে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরী ৷

রুবিনার এক দিদি সাগরি খাতুন বলছেন,"বাবা মারা যাওয়ার পরই বোনটার এই দশা ৷ সবসময় বলে, বাবাকে এনে দাও ৷ আমরা বাবাকে কোথায় পাব ? এখন ও মাঝেমধ্যেই হিংস্র হয়ে ওঠে ৷ মানুষকে কামড়ে দেয় ৷ আঁচড় বসিয়ে দেয় ৷ কখনও বা পুকুরে ঝাঁপ দেয় ৷ আমার মাকেও অনেকবার কামড়ে-আঁচড়ে দিয়েছে ৷ মা হয়তো সব সহ্য করে নেবে, কিন্তু গ্রামের মানুষ তো সহ্য করবে না ৷ আসলে বাবার মৃত্যু ও মেনে নিতে পারেনি ৷ টাকার অভাবে ওর চিকিৎসাও করা যায়নি ৷ কাকারা আমাদের তিন বোনের বিয়ে দিয়েছে ৷ তারাই বা আর কত করবে !"

গ্রামের বাসিন্দা রাজীব আলি বলেন, "মেয়েটাকে দেখে সত্যিই খারাপ লাগে ৷ ওর বাবা তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন ৷ ভোটের ফল জানতে গিয়ে ওদের গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ৷ তিনজন মারা যায় ৷ বাবার মৃতদেহের কবর দেওয়ার পর থেকেই মেয়েটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে ৷ এখন ওর মা ভিক্ষা করে দিন কাটান ৷ সারাদিন মেয়েকে শিকলে বেঁধে ভিক্ষা করতে বেরিয়ে যান ৷ সন্ধেয় ঘরে ফিরে মেয়েকে শিকল থেকে খুলে মেয়েকে যত্ন করেন ৷ আমরা চাই, সরকারিভাবে মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক ৷ ওর মাকে যেন ভিক্ষা করে দিন কাটাতে না হয়৷ তাঁর মাথায় যেন একটা পাকা ছাদ থাকে ৷"

আরও পড়ুন:কোনও সতর্কতা ছাড়াই হাতে করে বোমা সরালেন ভিলেজ পুলিশকর্মী, প্রশ্ন মালদায়

রুবিনার ঘটনা জানতে পেরেই পদক্ষেপ করেছেন বিডিও দিব্যজ্যোতি দাস ৷ পুরাতন খানপুর গ্রামে তিনি একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে ওই কিশোরীকে শিকল থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, “ওই কিশোরীকে সরকারি খরচে চিকিৎসার জন্য বহরমপুর পাঠানো হচ্ছে ৷ তার পরিবারকেও সরকারি আইন মেনে যাবতীয় সহায়তা করা হবে ৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details