মালদা, 18 অক্টোবর :2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন ৷ সেদিন এলাকার আরও অনেকের সঙ্গে সামসীর কাণ্ডারণে গিয়েছিলেন তৃণমূলকর্মী গোলাম এসদানি ৷ ওই নির্বাচনে তাঁর এলাকায় জিতেছিল তৃণমূল ৷ কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন গোলাম এসদানি ৷ সামসী থেকে ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল তাঁদের ছোট ট্রাক ৷ মৃত্যু হয়েছিল তিনজনের ৷ ওই তালিকায় ছিলেন গোলাম এসদানিও ৷ বাবার এহেন মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল আট বছরের মেয়েকে ৷ মৃতদেহে মাটি পড়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করে সে ৷ এখন সে 15 বছরের কিশোরী ৷ বর্তমানে সে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ তবে আশার কথা, বিষয়টি জানতে পেরেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় রুবিনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে ব্লক প্রশাসন ৷ ঘটনাটি চাঁচল 2 নম্বর ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরাতন খানপুর গ্রামের ৷
গোলাম এসদানির মৃত্যুর পর তাঁর ভাইরা বড় তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ৷ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ফাতিমা বেওয়ার অন্ন সংস্থানের কোনও উপায় ছিল না ৷ নিজের এবং ছোট মেয়ের পেটের জ্বালা দূর করতে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেন তিনি ৷ সারাদিনে যা জোটে, তাতে দু’জনের পেট ঠিকমতো চলে না ৷ তাই মেয়ের চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি ৷ এদিকে তাঁর অবর্তমানে মেয়েটি ক্রমেই হিংসাত্মক আচরণ শুরু করে ৷ অনেককেই সে কামড়ে-আঁচড়ে দিয়েছে ৷ তাই বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে কোনও বাঁশের সঙ্গে মেয়েকে শিকল বেঁধে ফাতিমা প্রতিদিন বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষা করতে ৷ সন্ধেয় বাড়ি ফিরে মেয়েকে শিকল থেকে মুক্ত করেন ৷ এই সময়টুকু প্রতিবেশীদের ভরসাতেই থাকে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরী ৷
রুবিনার এক দিদি সাগরি খাতুন বলছেন,"বাবা মারা যাওয়ার পরই বোনটার এই দশা ৷ সবসময় বলে, বাবাকে এনে দাও ৷ আমরা বাবাকে কোথায় পাব ? এখন ও মাঝেমধ্যেই হিংস্র হয়ে ওঠে ৷ মানুষকে কামড়ে দেয় ৷ আঁচড় বসিয়ে দেয় ৷ কখনও বা পুকুরে ঝাঁপ দেয় ৷ আমার মাকেও অনেকবার কামড়ে-আঁচড়ে দিয়েছে ৷ মা হয়তো সব সহ্য করে নেবে, কিন্তু গ্রামের মানুষ তো সহ্য করবে না ৷ আসলে বাবার মৃত্যু ও মেনে নিতে পারেনি ৷ টাকার অভাবে ওর চিকিৎসাও করা যায়নি ৷ কাকারা আমাদের তিন বোনের বিয়ে দিয়েছে ৷ তারাই বা আর কত করবে !"