মালদা, 27 এপ্রিল : সপ্তাহ পেরোলেই খুশির ঈদ ৷ গত তিন বছর ঈদের সব রং শুষে নিয়েছিল করোনা ৷ সুজাপুর ঈদগাহে লক্ষাধিক মানুষকে একসঙ্গে নমাজ পাঠ করতে দেখা যায়নি ৷ তৃতীয় ঢেউয়ের পর করোনার সংক্রমণ বর্তমানে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে ৷ ফলে এবার খুশির ঈদ পালন যে দ্বিগুণ উৎসাহে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ কিন্তু, ঈদ-উল-ফিতরে লাচ্ছা-সিমাইয়ের দোকানই এ বছর সেভাবে বসেনি ৷ কারণ, আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ৷ নিজেদের পেট চালাতেই এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবয়াসীরা ৷ তাই আগের তিন বছরের মতো এ বারেও কালিয়াচকে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রায় কোটি টাকার লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবসা ৷ অথচ প্রতি বছর এই ব্যবসার উপর নির্ভর করে থাকেন কালিয়াচকের বহু মানুষ ৷ এই ব্যবসা থেকে আয় হওয়া অর্থেই অধিকাংশ মানুষের সারা বছর সংসার চলে ৷ তাই লাচ্ছা-সিমাইয়ের ব্যবসা সেভাবে না জমায়, উৎসবের আলোতেও তাঁদের মুখে অন্ধকার (Loss in Laccha Semai Business in Kaliachak Due to Price Hike) ৷
কথা হচ্ছিল কালিয়াচকের চৌরঙ্গি মোড়ে লাচ্ছা-সিমাইয়ের খুচরো ব্যবসায়ী সৈয়দ আলির সঙ্গে ৷ তিনি জানালেন, “করোনায় তিন বছর লাচ্ছার ব্যবসা বন্ধই ছিল ৷ এবার ব্যবসা শুরু হয়েছে বটে ৷ কিন্তু, লাচ্ছা-সিমাইয়ের দাম এত বেড়েছে যে মানুষ কিনতেই পারছে না ৷ 60 শতাংশ মানুষ দাম শুনেই চলে যাচ্ছে ৷ বাকিরাও প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছে ৷ মানুষের কাছে এখন টাকা নেই ৷ আগের তিনটি বছর করোনা মানুষের টাকা শেষ করে দিয়েছে ৷ আর এবার যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাতে মানুষের পেট চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এবার আমরা 150-160 টাকা কিলো দরে লাচ্ছা বিক্রি করছি ৷ আগে এর দাম ছিল 105-110 টাকা কিলো ৷ ডালডার দাম আগে ছিল 1650 টাকা (বনষ্পতি) ৷ এবার তার দাম 25550 টাকা ৷ ময়দার দাম 950 টাকা থেকে বেড়ে 1350 টাকা হয়েছে ৷ এখানে স্থানীয়ভাবে তৈরি লাচ্ছার সঙ্গে ভাগলপুর থেকে আসা স্পেশাল লাচ্ছাও বিক্রি হয় ৷ বাজারের অবস্থা ভাল নয় ৷”
সকাল সকাল বাড়ির জন্য লাচ্ছা কিনতে এসেছিলেন মহম্মদ আবু বক্কর ৷ তিনি টোটো চালান ৷ বললেন, “গত তিন বছর করোনা গিয়েছে ৷ আর এবার লাচ্ছা-সিমাইয়ের যা দাম বেড়েছে, তাতে হাত দেওয়াটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ৷ আগে আমরা 80-90 টাকা কিলো দরে লাচ্ছা কিনেছি ৷ এবার তার দাম হয়েছে 180-190 টাকা ৷ যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাতে সংসার চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ গ্যাস সিলিন্ডারের দাম হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ যে চালের বস্তার দাম 800 টাকা ছিল, সেটা এখন 1100-1500 টাকা ৷ আমরা দিনে 200-300 টাকা রোজগার করি ৷ কীভাবে চলব ? কীভাবে খাব ? পেট্রল-ডিজেলের দাম বেড়েই চলেছে ৷ পরিস্থিতি এমন যে বাইরে চা খাওয়ার পয়সাটুকুও থাকছে না ৷ দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির জেরে সবকিছুই নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।”