মালদা, 13 এপ্রিল: বঙ্গের গরম মানে আম, লিচু ৷ আর মালদা জেলা ৷ আমের গড় লিচুর জন্যও বিখ্যাত ৷ এখানে লিচুর স্বাদে মজেননি, এমন বাঙালি বিরল ৷ মালদা থেকে মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ-সহ গোটা দেশেই লিচু সরবরাহ হয় ৷ গত বছর প্রথমবার মালদার লিচুর স্বাদ পেয়েছে কাতার, বাহরিনের মতো ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিও ৷ সঙ্গে ইতালি, জার্মানির মতো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও ৷ রফতানিকারকদের আশা, এবারও ভিনদেশ থেকে মালদার লিচুর বরাত আসতে পারে ৷ কিন্তু বিধি বাম ৷ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চলতি মরশুমে মালদায় লিচুর ফলন নেই বললেই চলে ৷ সেকথা মেনে নিয়েছে জেলা উদ্যানপালন দফতরও ৷
মালদা জেলার কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে লিচু চাষ হয় ৷ প্রায় 1 হাজার 570 হেক্টর জমিতে এই সুস্বাদু ফলের চাষ হয় ৷ সম্প্রতি চাঁচল 1 ও 2 এবং রতুয়া 1 ও 2 নম্বর ব্লকের ফুলহর নদীর অববাহিকাতেও লিচু চাষ হচ্ছে ৷ প্রধানত ফেব্রুয়ারিতে লিচুর মুকুল আসে ৷ 16-22 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা লিচুর মুকুলের জন্য উপযোগী ৷ মুকুল আসার সঙ্গে হালকা বৃষ্টি হলে আরও ভালো ৷ মুকুলে গুটি আসার পক্ষে 24-28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড আবহাওয়া অত্যন্ত অনুকূল ৷ ফল পাকার সময় 27-28 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা থাকলে খুব ভালো ৷ গত মরশুমে এই জেলায় 14 হাজার 700 মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছিল ৷ জেলায় প্রতি বছর প্রায় 100 কোটি টাকার লিচুর ব্যবসা হয় ৷
এবার পরিস্থিতি প্রতিকূল ৷ কালিয়াচকের বাগানগুলিতে লিচু প্রায় নেই ৷ হাতে গোনা কয়েকটি বাগানে ফল দেখা গেলেও তা সামান্য ৷ তাও টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা ৷ কারণ, বৃষ্টির অভাব এবং রোগ-পোকার আক্রমণ ৷ পোকার হাত থেকে গাছের ফল বাঁচাতে নিজেই বাগানের গাছে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন কালিয়াচকের সিলামপুর গ্রামের লিচু কৃষক মহম্মদ লোকমান শেখ ৷ তিনি বলেন, "15-20 বছর ধরে লিচু চাষ করছি ৷ এবার অনুকূল তাপমাত্রা না-থাকায় মুকুল কম এসেছিল ৷ তার উপর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেই মুকুলও ঝরে গিয়েছে ৷ এখন গাছে যেভাবে পোকামাকড়ের উপদ্রব শুরু হয়েছে, মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় ৷ কীটনাশক স্প্রে করে পোকামাকড়ের আক্রমণ রোখার চেষ্টা করছি ৷ এবার কিছু বাগানে তো একেবারেই মুকুল আসেনি ৷"