মালদা, 1 নভেম্বর : মৃত্যুর এতদিন পরেও তিনিই না কি মালদা জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন ৷ বরকত গণিখান চৌধুরির সম্পর্কে জেলার রাজনৈতিক মহলে একথা সুবিদিত ৷ তারই একঝলক দেখা গেল আজ সকালে৷ প্রয়াত গণি খানের 93 তম জন্মদিনে তাঁর সমাধিস্থলে দেখা গেল তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরিকে৷ এক দশকেরও বেশি সময় পর আজ পা রাখলেন কোতওয়ালি ভবনে৷ শুধু তিনিই নন ৷ সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাস ও প্রাক্তন পৌরপ্রধান নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিও ৷ কোতওয়ালিতে তাঁদের আসা কি রাজনীতিতে কি নতুন সমীকরণ তৈরি করছে?
মালদা জেলার রাজনীতিতে বরকত গণি খান চৌধুরির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ৷ মৃত্যুর ১৩ বছর পরও জেলার রাজনীতিতে তিনি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক৷ যে কোনও নির্বাচনে তাঁর ছবিই যেন প্রার্থীদের ভাগ্য বদলে দেয়৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মিথে যেন কিছুটা থাবা বসিয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ অন্তত সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে ৷ উত্তর মালদা কেন্দ্রে তাঁর পরিবারের দুই সদস্যকে পিছনে ফেলে জয় পেয়েছেন BJP প্রার্থী খগেন মুর্মু ৷ কিন্তু তাতেও তাঁর জনপ্রিয়তায় এখনও ভাঁটা পড়েনি ৷ আজ সকালে তাঁর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কোতোয়ালি ভবনের ছবি যেন সেই বার্তাই দিয়েছে৷
কথা ছিল, সকাল 8টায় বরকত সাহেবের 93তম জন্মদিন উদযাপন শুরু হবে৷ 15 মিনিট আগেই কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাসকে সঙ্গে নিয়ে কোতওয়ালি ভবনে উপস্থিত হন কৃষ্ণেন্দুবাবু ৷ গিয়ে বসেন ভবনের সামনের বারান্দায় গণি খানের ছবির পাশে৷ ঠিক যেভাবে বরকত সাহেব বেঁচে থাকাকালীন বসতেন ৷ সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি, বিধায়ক মোত্তাকিন আলম সহ অন্যরা ৷ খানিক বাদে সেখানে পৌঁছান জেলা কংগ্রেস সভাপতি, বিধায়ক মোস্তাক আলম ও আবু নাসার খান চৌধুরি৷ সবাই মিলে যান বিধায়ক ইশা খান চৌধুরির ঘরে৷ একসঙ্গে প্রাতঃরাশ সারেন৷ তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে প্রথমে বরকত সাহেবের ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, মশাল প্রজ্জ্বলন ও শেষে প্রয়াত নেতার সমাধিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন৷
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এক দশকেরও বেশি সময় কোতওয়ালি ভবনের কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না কৃষ্ণেন্দুবাবুর৷ বরকত সাহেবকে সম্মান দেখাতে 2009 সালে তিনি শহরের বৃন্দাবনি ময়দানে নিজের উদ্যোগে প্রয়াত নেতার পূর্ণাবয়ব মূর্তি স্থাপন করেন৷ সেখানেই বরকত সাহেবকে শ্রদ্ধা জানাতেন৷ আজ হঠাৎ কোতওয়ালিতে কেন? প্রশ্নের উত্তরে দুঁদে এই রাজনৈতিক নেতা বলেন, "বরকতদা মারা যাওয়ার পর 2009 সালে এখানে এসেছিলাম৷ সেদিন হঠাৎ মনে হয়েছিল, বরকতদা আমার নাম ধরে ডাকছেন৷ আমি ভয় পেয়ে যাই৷ তিনি যেন আমাকে বলেন, আমাকে বাইরে নিয়ে আয় ৷ পরদিনই এক ভাস্কর এসে আমাকে বলে, আমি বরকতদার একটি মূর্তি তৈরি করব ৷ আপনার সাহায্য প্রয়োজন৷ আমি তাকে বলে দিই, আগে বরকতদার মূর্তি দেখব৷ তারপর কোনও সিদ্ধান্ত নেব৷ মূর্তিটি তৈরি হওয়ার পর আমি সেটিকে টাউন হলের পাশে বসিয়েছি৷ বরকতদা মারা যাওয়ার পর এখানে আসলে মন খারাপ হয়ে যায়৷ তাই এতদিন আসিনি ৷ এবার বিবেকের তাড়নায় ফের কোতওয়ালি এসেছি ৷ বরকতদা আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে তৈরি করেছিলেন৷ তাঁর দূরদৃষ্টিকে আমি সম্মান করি৷ আমার এখানে আসা নিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্ন ওঠার কিছু নেই ৷ বরকতদা রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন ৷ তিনি মানুষ দেখতেন ৷ রাজনৈতিক পরিচিতি দেখতেন না৷ তবে ডালুদারা ডাকলে আমি কোতওয়ালি ভবনে আসতাম ৷ বরকতদা আর আমার বাবা একই কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন৷ এই পরিবারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কও রয়েছে৷ আজ কোনও রাজনীতি নয়৷"
জেলায় কংগ্রেসের বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষ্ণেন্দুবাবুর প্রভাব দলে কতখানি পড়তে পারে তা রাজনৈতিক মহলের জানা ৷ যদিও এপ্রসঙ্গে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোস্তাক আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি সাফ এড়িয়ে যান৷ বলেন, "আজকের এই অনুষ্ঠানে ডালু সাহেব ও আমি জেলার সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷ বরকতদার চিন্তাভাবনা সবকিছুর উপরে ছিল৷ মালদার উন্নয়ন তাঁর একমাত্র ভাবনা ছিল৷ আজকের দিনে রাজনৈতিক আলোচনা করতে চাই না ৷ কৃষ্ণেন্দুবাবু এখন অন্য এক রাজনৈতিক দলে রয়েছেন ৷ আমরা তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷"