পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মালদার পরিযায়ীদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট, বললেন কংগ্রেস নেতা - মালদার খবর

মালদা জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনার আওতায় আনতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ৷ আজ কলকাতা হাইকোর্ট থেকে একথা জানান এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী, জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম ৷

কলকাতা হাইকোর্ট
কলকাতা হাইকোর্ট

By

Published : Nov 12, 2020, 10:55 PM IST

মালদা, 12 নভেম্বর : কেন্দ্রীয় গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনা প্রকল্পে মালদা জেলাকে অন্তর্ভুক্তির রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৷ আজ বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছে, এই মামলায় আবেদনকারীরা প্রকল্পের নির্ণায়ক অনুযায়ী সমস্ত তথ্য প্রমাণ করতে সফল হয়েছে ৷ প্রমাণিত হয়েছে, মালদা জেলায় 25 হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে ৷ তাই মালদা জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনার আওতায় আনতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ৷ আজ কলকাতা হাইকোর্ট থেকে একথা জানান এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী, জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম ৷

মাসুদ সাহেব জানান, মালদা জেলায় তেমন কোনও শিল্প নেই ৷ ফলে সংসার চালাতে অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে যায় ৷ এই জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি ৷ এই পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর 15 থেকে 20 লাখ মানুষ নির্ভরশীল ৷ কোরোনা সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণার পর বন্ধ হয়ে যায় এই শ্রমিকদের উপার্জন ৷ জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিনরাজ্যে আটকে পড়ে৷ লকডাউনে বাড়ি ফিরতে শ্রমিকদের জমানো টাকা পয়সাও শেষ হয়ে যায় ৷ সব চিন্তাভাবনা করেই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার 1 লাখ 70 হাজার কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনায় বরাদ্দ করে ৷ কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছিল, যেসব জেলায় 25 হাজারের বেশি শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে ফিরে এসেছে, সেই জেলাগুলিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে ৷ মালদা জেলায় সেই সংখ্যাটা অনেক বেশি হলেও কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার এই জেলাকে সেই প্রকল্পের আওতায় আনতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে আমরা 15টি ব্লকের BDO সহ জেলাশাসককে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম ৷ কোনও ফল মেলেনি ৷ তাই বাধ্য হয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা জানতে চেয়ে RTI করা হয় ৷ সেখানে জেলাশাসক দু’ধরনের জবাব দেন ৷ একবার তিনি জানান, লকডাউনে জেলার 45 হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে ঘরে ফিরে এসেছে ৷ অন্যদিকে তিনি বলেন, ফুড কুপন ও স্নেহের পরশ প্রকল্পের সুবিধে দেওয়া হয়েছে 1 লাখ 41 হাজার 285 জনকে ৷ এর থেকে সাফ বোঝা যাচ্ছে, সরকারি তথ্যের মধ্যেই প্রচুর গরমিল রয়েছে ৷ এই শ্রমিকদের স্বার্থে আমি ও প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা করি ৷ হাইকোর্টে চারবার এই মামলার শুনানি হলেও কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডিশনাল জেনারেল সলিসিটার ও রাজ্যের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতের সঙ্গে অসহযোগিতা করেন ৷

এই প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্তিকরণের শেষ তারিখ 20 নভেম্বর ৷ সেই সময়ের মধ্যে আদালত রায় না দিলে সরকারি এই প্রকল্প থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত হবেন ৷ একথা মাথায় রেখে 20 অক্টোবর হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে শ্রমিকদের স্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন ৷ তারপরেও জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে বঞ্চনার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডিশনাল জেনারেল সলিসিটার ৷ বাধ্য হয়ে আমরাই হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া, চাঁচলের মোট ছ’টি ব্লকের পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকা তৈরি করতে শুরু করি ৷ কয়েকদিনের মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিকের তালিকা তৈরি করা হয় ৷ সেই তালিকা আমরা হাইকোর্টে পেশ করি ৷ এরপরেই দুই বিচারপতি আজ এই রায় ঘোষণা করেন ৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে 20 নভেম্বর ৷

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য হাইকোর্টে যাওয়া হলেও আজ ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে জেলার প্রতিটি রাজনৈতিক শিবির ৷ উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, "আদালতের এই রায়ে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা উপকৃত হবেন ৷ রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে জেলার গরিব মানুষদের বঞ্চিত করতে চাইছে ৷ যারাই এনিয়ে মামলা করুক না কেন, এতে উপকৃত হবে এই জেলার কয়েক লাখ পরিযায়ী শ্রমিক ৷"

জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, "এই রায়ে আমরা খুশি ৷ তবে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে রয়েছে ৷ এই শ্রমিকদের জন্য একাধিক প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে ৷"

অন্যদিকে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অম্বর মিত্র বলেন, "রাজ্যের মধ্যে সম্ভবত মালদা জেলাতেই সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিকের বাস ৷ লকডাউনে এই শ্রমিকরা ভিনরাজ্যে আটকে পড়েছিলেন ৷ নিজেদের উদ্যোগে তাঁরা কোনওরকমে ঘরে ফেরেন৷ বামফ্রন্ট প্রথম থেকেই এই শ্রমিকদের নায্য অধিকার রক্ষার দাবিতে লড়াই করছে ৷ কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা উপকৃত হবেন ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details