মালদা, 29 জুন :উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যে ভাগের দাবিতে সরব বিজেপি ৷ জঙ্গলমহলকেও রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে ৷ এ সবের মধ্যেই আবার কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি সামনে আসতে চলেছে বলে খবর ৷ সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (KLO)। রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে । সতর্ক হচ্ছে মালদা জেলা পুলিশও (Malda Police) ।
উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ । এ নিয়ে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে তৈরি করার দাবি তুলেছিলেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা । তাঁকে সমর্থন করেন কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দ বর্মন, কোচবিহারের বিধায়ক মিহির গোস্বামী, নাগরাকাটার বিধায়ক পুনা ভেঙ্গরা । জানা গিয়েছে, এই ইস্যুতে জন বার্লার পাশে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের আরও একাধিক সাংসদ ও বিধায়ক । পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরবর্তীতে পৃথক জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি তোলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ । এ নিয়ে এখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি । তবে এরই মধ্যে পুরোনো আরও কিছু দাবি নতুন করে সামনে আসতে শুরু করেছে । সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরকালে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নীরজ জিম্বা । জানা গিয়েছে, এ বার পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি আবার সামনে আসতে চলেছে । ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন, কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) । এ নিয়ে রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলার পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে । সতর্ক হচ্ছে মালদা জেলা পুলিশও ।
আরও পড়ুন:উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরব আরও এক বিজেপি বিধায়ক
উত্তরবঙ্গের রাজবংশী, কোচ-সহ একাধিক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি উঠেছিল সেই 1969 সালে । সেই রাজ্যের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল মালদা থেকে অসম পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাকে । এই দাবির সমর্থনেই 1996 সালে গড়ে ওঠে কামতাপুর পিপলস্ পার্টি (কেপিপি) । দলের চেয়ারপার্সন হন অতুল সরকার, সাধারণ সম্পাদক হন নিখিল রায় । কিন্তু বিভিন্ন কারণে 2004 সালে এই দু’জনের মধ্যে মতবিরোধ বাঁধে । 2004 সালে ভাঙন ধরে দলে । অতুল রায় পৃথক দল গঠন করেন । নাম দেন কামতাপুর পিপলস্ পার্টি (প্রগ্রেসিভ)। যদিও 2010 সালে ফের দুই শাখা এক হয়ে যায় । সংযুক্ত দলের নাম হয় কেপিপি (ইউনাইটেড)। দলের সভাপতি হন অতুলবাবু । সাধারণ সম্পাদক নিখিলবাবু । তবে গত 9 জুন শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে অতুলবাবুর মৃত্যু হয়েছে । দলের পত্তনের সময় থেকেই তাঁরা পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি জানিয়ে সরব হয়েছিলেন ।
একই দাবিতে 1999 সালের 27 ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন । কেপিপি থেকেই এই সংগঠনের উৎপত্তি । সরকারের কাছে আবেদন নিবেদনে পৃথক রাজ্যের দাবি পূরণ হবে না বুঝেই এই সংগঠন তৈরি করা হয়েছিল । সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দাবি আদায়ই ছিল কেএলও’র মূল উদ্দেশ্য । আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের জীবন সিংহকে এই সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় । দায়িত্ব পেয়ে একইসঙ্গে সংগঠনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহে জোর দেন তিনি । শুরু হয় অল্প বয়সিদের মগজধোলাইয়ের কাজ । মালদা জেলার চারটি ব্লক, বামনগোলা, হবিবপুর, গাজোল ও পুরাতন মালদার একাংশেও নজর পড়ে এই সংগঠনের । কারণ এই চারটি ব্লকেই রাজবংশী-সহ উত্তরের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসবাস ।