পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Jun 19, 2020, 6:21 AM IST

ETV Bharat / state

জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের আবেদন জানিয়ে নীতিন গড়করিকে চিঠি

লকডাউনের জেরে তিনমাস ধরে বন্ধ সম্প্রসারণ সহ জাতীয় সড়কের সমস্ত কাজ। বর্ষায় বেহাল সড়কে একদিনের পথ পেরোতে সময় লাগছে তিনদিন। জাতীয় সড়কে হাল ফেরাতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রীকে চিঠি উত্তর মালদার BJP সাংসদ খগেন মুর্মুর।

malda
malda

মালদা, 18 জুন : বর্ষা শুরু হতে না হতেই বেহাল হয়ে উঠেছে 34 নম্বর জাতীয় সড়ক৷ এক ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগছে প্রায় দু’ঘণ্টা৷ এদিকে লকডাউনে জেরে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজও পুরোপুরি বন্ধ৷ প্রায় তিনমাস ধরে হচ্ছে না সাড়াই কাজ৷ এরই মধ্যে আর্থিক সংকটের জেরে কাজ থেকে পিছু হটেছে এই প্রকল্পে নিযুক্ত ঠিকাদার কোম্পানি৷ বন্ধ হয়ে রয়েছে ফরাক্কায় গঙ্গার দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজ৷ সবকিছু স্বীকার করে নিচ্ছে খোদ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ৷ ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের৷ চরম সমস্যায় পড়েছেন গাড়িচালকরা৷ এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, লকডাউনের জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কেউ জানে না৷ এই পরিস্থিতিতে জাতীয় সড়কের হাল ফেরাতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতীন গড়করিকে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তর মালদার BJP সাংসদ খগেন মুর্মু ৷

তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে 34 ও 81 নম্বর জাতীয় সড়ক সত্যিই বেহাল হয়ে গিয়েছে৷ লকডাউনের জন্য দুটি জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এনিয়ে সাধারণ মানুষও আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে৷ কোনও জাতীয় সড়কেই যানবাহন ঠিকভাবে চলতে পারছে না৷ আমি এনিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করির কাছে চিঠি দিয়ে তাঁকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে আবেদন করেছি৷ লকডাউনের জন্যই এই কাজ বন্ধ রয়েছে৷ এই কাজ যাতে দ্রুত চালু করা যায় তার জন্য আমি সবরকম উদ্যোগ নেব৷"

উল্লেখ্য, 2006 সালে উত্তর দিনাজপুর জেলার ডালখোলা থেকে কলকাতা পর্যন্ত 34 নম্বর জাতীয় সড়ককে চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক৷ মূলত উত্তরবঙ্গ সহ উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের অন্য অংশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করতেই এই প্রকল্প গৃহীত হয়৷ প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয় দুই হাজার কোটি টাকা৷ পরবর্তীতে অবশ্য প্রকল্পের খরচ আরও অনেক বেড়ে যায়৷ প্রাথমিকভাবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এই প্রকল্পে অর্থলগ্নি করে৷ এই প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য 443 কিলোমিটার৷ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব বর্তায় রাজ্য সরকারের উপর৷ কিন্তু জমি অধিগ্রহণে একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় রাজ্য সরকারকে৷ বিশেষত এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি শহর৷ ওই শহরগুলিকে এড়িয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকটি বাইপাস নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পরে৷ সেই জমি অধিগ্রহণের জন্যই লেগে যায় বেশ কয়েক বছর৷ শেষ পর্যন্ত 2011 সালে প্রকল্পের কাজে হাত দেয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ৷ এই প্রকল্পে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদা ডিভিশনের মধ্যে পড়ে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা পর্যন্ত 260 কিলোমিটার এলাকা৷ গোটা প্রকল্পে মালদা জেলায় রাস্তার দৈর্ঘ্য 67 কিলোমিটার৷

জমি সমস্যায় প্রথম থেকেই এই প্রকল্প গতিহীনতায় ভুগছিল৷ দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ চলায় আগ্রহ হারায় বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার কোম্পানিগুলিও৷ কিছুদিন আগে আর্থিক সংকটে একটি কোম্পানি কাজ ছেড়ে দেওয়ারও আর্জি জানায়৷ যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অনেক চেষ্টাচরিত্র করে ওই কোম্পানিকে সহযোগিতা করে কাজে বহাল রাখে৷ কাজে খানিকটা গতি আসে৷ তবুও এই জেলার প্রায় 30 কিলোমিটার এলাকায় এই কাজ শেষ করা যায়নি৷ তার উপর লকডাউনে ফের বন্ধ হয়ে যায় কাজ৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ফরাক্কায় গঙ্গার উপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজও৷ মূলত শ্রমিক সমস্যা ও কাঁচামালের জোগানের অভাবেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়৷ এরই মধ্যে চলে এসেছে বর্ষা৷ যেসব জায়গায় কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে, সেই এলাকার রাস্তার অবস্থা আরও বেহাল হয়ে উঠেছে৷ পিচের চাদর উঠে নীচ থেকে বেরিয়ে এসেছে পাথর৷ সড়কের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ৷ এতে একদিকে যেমন যানবাহনের গতি কমছে, তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাড়ির টায়ার সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ৷

34 নম্বর জাতীয় সড়কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার ব্যবসায়ীরাও৷ এপ্রসঙ্গে জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদ জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, "এই জেলার বেশিরভাগ পণ্য, বিশেষ করে কাঁচামাল বিহার দিয়ে আসে৷ এই গাড়িগুলি মূলত ডালখোলা দিয়ে এখানে আসে৷ শিলিগুড়ি থেকেও প্রচুর পণ্য জেলায় আসে৷ ডালখোলা থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত এই জাতীয় সড়ক একেবারে বেহাল হয়ে গিয়েছে৷ তিনদিনের আগে কোনও গাড়ি এসে পৌঁছাতে পারছে না৷ এতে পণ্যের অভাব তৈরি হচ্ছে৷ লকডাউনের জন্য প্রায় তিনমাস ধরে ব্যবসায়ীদের খানিকটা সংকট দেখা দেয়৷ জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় সংকট কিছুটা মিটেছিল৷ কিন্তু বর্তমানে বেহাল রাস্তার জন্য গাড়ি সঠিক সময়ে এসে পৌঁছোতে পারছে না৷ মালদা থেকে ধুলিয়ান, কৃষ্ণনগর কিংবা নদিয়ার দিকে গেলে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে জেলায় সব পণ্যেরই সংকট তৈরি হবে৷ লকডাউনের মধ্যে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনও আন্দোলনও করতে পারছি না৷ আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই এই জাতীয় সড়ক চলাচলের উপযোগী করার জন্য জেলাশাসককে চিঠি দেব৷" তিনি আরও জানান, "এখনও পর্যন্ত সমস্যার সমাধান নিয়ে আমরা প্রশাসনের কোনও হেলদোল দেখতে পাচ্ছি না৷ অন্তত জাতীয় সড়কের গর্তগুলি বুজিয়ে দেওয়া হলেও গাড়িচালকদের সমস্যা কিছুটা কমবে৷ আমরা আশা করব, জেলাশাসক এনিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কিছু ব্যবস্থা নেবেন৷"

আজই বিহার থেকে ভুট্টা নিয়ে মালদায় এসেছেন লরিচালক মাসুদ শেখ৷ তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে৷ তিনি বলেন, "এখন জাতীয় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ৷ ডালখোলা যেতেই কখনও এক থেকে দু’দিন লেগে যায়৷আমাদের গাড়ি নিয়ে যেতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ একদিনের পথ তিনদিনে পেরোতে হচ্ছে৷ আজ সৌভাগ্যবশত পূর্ণিয়া থেকে একদিনেই চলে এসেছি৷ কারণ, রাস্তায় তেমন যানজটে পড়তে হয়নি৷ কিন্তু যাওয়ার সময় চার ঘণ্টার রাস্তা পেরোতে একদিন লেগে গিয়েছিল৷ আমরা চাই, রাস্তা ঠিক করা হোক৷ তাতে সবারই ভালো হবে৷" উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসচালক বাপি ঘোষ বলেন, "বর্ষা শুরু হতেই 34 নম্বর জাতীয় সড়ক ভেঙেচুরে প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে৷ আমাদের প্রচণ্ড সমস্যা হচ্ছে৷ ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদেরও৷ তিন ঘণ্টার রাস্তা পেরোতে ছয় ঘণ্টা লাগছে৷ আমাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছোতে হয়৷ কিন্তু রাস্তার জন্য এখন সেটা হচ্ছে না৷ মালদা থেকে শিলিগুড়ি যেতে ঘণ্টা সাতেক সময় লাগে৷ এখন কমপক্ষে 10-12 ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে৷ সবমিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল৷ কবে রাস্তা ঠিক হবে জানি না৷ আমাদের এভাবেই কাজ করে যেতে হচ্ছে৷"

পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক, এই মুহূর্তে কিছু করার নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন 34 নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের ডিরেক্টর দীনেশ হংসরিয়া৷ তিনি বলেন, "কোরোনার জন্য সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ লকডাউনে শ্রমিকের প্রবল সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ আমরা কাঁচামালও ঠিকমতো পাচ্ছি না৷ তবুও পরিস্থিতি বিবেচনা করে 20 এপ্রিল থেকে কিছু কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা ছিল তা করা যাচ্ছিল না৷ বিটুমিনও সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফলে কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি৷ যতদিন না এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে, ততদিন কাজ চালু করা সম্ভব নয়৷ তার উপর বর্তমান পরিস্থিতিতে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাগুলিও আর্থিক সংকটে ভুগছে৷ আমরা একটি কোম্পানিকে কোনওরকমে পুনরুজ্জীবিত করেছি৷ আপাতত যেসব জায়গায় জাতীয় সড়কে বর্ষায় খানাখন্দ দেখা দিয়েছে, সেই গর্ত বন্ধ করার কাজ চালাচ্ছি৷ ডালখোলা ও রায়গঞ্জে সামান্য কাজ হচ্ছে৷ কিন্তু কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে৷ লকডাউন শুরু হতেই প্রকল্পের কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ কবে থেকে ফের স্বাভাবিক গতিতে কাজ শুরু করা যাবে জানি না৷ শ্রমিক ও কাঁচামালের জোগান ঠিক হলেই আমরা ফের পুরো গতিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details