পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Kaliachak Murder Case : উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র, কালিয়াচক খুনের পিছনে কি সীমান্ত চোরাচালান গ্যাং ? - মালদার অপরাধের খবর

স্থানীয় সূত্রে খবর, জাওয়াদ আলি ওরফে রুনু এলাকার কুখ্যাত তোলাবাজ হিসাবে পরিচিত ছিলেন ৷ সীমান্তে গরু, মাদক, জাল টাকা সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি তোলা আদায় করতেন ৷ সেই কাজ করেই সামান্য কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি বেশ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যান ৷

Kaliachak Murder
ছবি

By

Published : Jun 20, 2021, 9:52 AM IST

মালদা, 20 জুন : কালিয়াচক খুন কাণ্ডে পুলিশের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নতুন সব তথ্য বেরিয়ে আসছে ৷ এবার খুনিকে জেরা করে তার দুই বন্ধুর হেফাজত থেকে মিলল প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ৷ এত অস্ত্র কীভাবে এল, কী কারণে সেই অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে ৷ তবে এরই মধ্যে উঠে এসেছে সীমান্ত কারবারের বিষয়টিও ৷ যদিও এই নিয়ে পুলিশের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷

কালিয়াচক থানার পুরানো 16 মাইল গ্রাম এখন গোটা রাজ্যের নজরে ৷ সেই গ্রামেরই বাসিন্দা, বছর আঠারোর আসিফ মহম্মদ । নিজের বাবা-মা, ছোট বোন ও ঠাকুমাকে খুন করে বাড়ি লাগোয়া গুদামঘরে মেঝের নীচে পুঁতে রেখেছিল ৷ ঠাণ্ডা পানীয়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে, সেই পানীয় নিহত চারজনের সঙ্গে খাইয়েছিল তার দাদা আরিফ মহম্মদকেও ৷ কিন্তু কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে যান আরিফ ৷ তিনি কলকাতায় পড়াশোনা করতেন ৷ জীবন ফিরে পেয়ে কলকাতাতেই চলে যান ৷ আর গ্রামমুখো হননি ৷ তাঁর দাবি, ভাই তাঁকেও খুন করার হুমকি দিয়ে রেখেছিল ৷ তাই তিনি এই ঘটনা এতদিন কাউকে জানাননি ৷

শেষ পর্যন্ত আসিফ বাড়ি বিক্রির তোড়জোড় শুরু করতেই খোঁজ শুরু হয় তার বাবার ৷ খোঁজ পড়ে আরিফেরও ৷ তখনই এক আত্মীয়কে গোটা ঘটনা জানান আরিফ ৷ ওই আত্মীয় আরিফকে মালদা নিয়ে আসেন ৷ এরপরেই আরিফ কালিয়াচক থানায় গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে ৷ জানা যায়, 18 ফেব্রুয়ারি আসিফ তার বাবা জাওয়াদ আলি (53), মা ইরা বিবি (41), ঠাকুমা আলেকজান বেওয়া (72) ও ছোট বোন আরিফা খাতুনকে (15) জলে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে ৷

আরও পড়ুন : Malda Murder : 16 টি সিসিটিভির ঘেরাটোপ ! কীসের এত গোপনীয়তা কালিয়াচকের বাড়িতে ?

গতকাল দুপুরে নিজেদের বাড়ি লাগোয়া গুদামে আসিফের দেখানো জায়গায় মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার হয় চারজনেরই পচাগলা দেহ ৷ আসিফকে গ্রেফতারের পাশাপাশি আরিফকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করে ৷

গতকাল সকাল থেকেই আসিফকে দফায় দফায় জেরা করছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা ৷ বিশেষ করে বাড়িতে এত সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার বিষয়টিই ভাবিয়ে তোলে পুলিশকে ৷ কিন্তু আসিফের স্নায়ু অসম্ভব শক্ত ৷ পুলিশ সূত্রের খবর, দফায় দফায় জেরা চললেও প্রথমে সে ভেঙে পড়েনি ৷ একসময় সে কিছু ক্লু দেয় ৷ তার ভিত্তিতেই পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে আসিফের দুই বন্ধুর বাড়িতে হানা দেয় ৷ জেরায় তারা জানায়, কিছুদিন আগে আসিফ তাদের দু’জনকে দুটি সিল করা ব্যাগ রাখতে দিয়েছিল ৷ সেই দুটি ব্যাগ খুলতেই চোখ কপালে ওঠে পুলিশের ৷ এক বন্ধু, সাবির আলির ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে পাঁচটি সাত মিলিমিটার স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ও ১০ টি ম্যাগাজিন ৷ আরেক বন্ধু, মহম্মদ মাফুজের ব্যাগ থেকে মেলে ৮০ রাউন্ড কার্তুজ ৷ দুই বন্ধুকেই থানায় নিয়ে আসে পুলিশ ৷ এই খুনের ঘটনায় তাদের কোনও হাত রয়েছে কিনা, এখন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷

পুলিশ এব্যাপারে এখনও সঠিকভাবে কিছু না জানালেও স্থানীয় সূত্রে আরও একটি সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে ৷ তা হল সীমান্তে চোরাচালান ৷ গ্রামবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিহত জাওয়াদ আলি ওরফে রুনু এলাকার কুখ্যাত তোলাবাজ হিসাবে পরিচিত ছিলেন ৷ সীমান্তে গরু, মাদক, জাল টাকা সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি তোলা আদায় করতেন ৷ সেই কাজ করেই সামান্য কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি বেশ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যান ৷ তিনি যে চক্রের অধীনে কাজ করতেন, তার মাথার নাম আনসারি ৷ আনসারির লম্বা হাত শুধু পুলিশ কিংবা প্রশাসন নয়, রাজনীতির শীর্ষস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ কিন্তু মুখে বললেও গ্রামবাসীরা এনিয়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় মুখ খুলতে রাজি নন ৷ তাতে তাঁদের প্রাণ সংশয় হতে পারে বলেই জানাচ্ছেন সবাই ৷

আরও পড়ুন :Malda Murder : চারজনের দেহ উদ্ধার, টাকার জন্যই কি খুন ? ভাবাচ্ছে পুলিশকে

তাঁদের বক্তব্য, বিএসএফ ও পুলিশের তৎপরতায় বছর দুয়েক ধরেই সীমান্ত চোরাচালানে ভাটা পড়েছে ৷ এনিয়ে চোরাচালানকারীদের মধ্যে বিবাদও শুরু হয়েছে ৷ সম্ভবত তার জেরেই খুন হওয়ার আগে জাওয়াদ সাহেব গ্রামবাসীদের জানিয়েছিলেন, তাঁরা আর মালদায় থাকবেন না ৷ সবাই কলকাতার ফ্ল্যাটে চলে যাবেন ৷ হয়ত তাঁর মনে হয়েছিল, ব্যবসার এই পরিস্থিতিতে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে ৷

এখানেই গ্রামবাসীরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি জাওয়াদ সাহেবকে খুন করতে তাঁর ছোট ছেলেকেই বেছে নিয়েছিল তাঁর বিপক্ষে থাকা লোকজন ? নাকি পরিবারকে শেষ করতে দীর্ঘ মগজধোলাইয়ের পর আসিফকে বরাত দেওয়া হয়েছিল ? আসিফের দুই বন্ধুর হেপাজত থেকে এত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গ্রামবাসীদের সেই অনুমান আরও দৃঢ় হয়েছে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details