মালদা, 9 নভেম্বর : এবার শিক্ষাক্ষেত্রে শাসকদলের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল পুরাতন মালদায় ৷ গতকাল এ নিয়ে পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যানের কাছে ডেপুটেশন দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন SSK সহায়িকারা ৷ অভিযোগ, পৌরসভার চেয়ারম্যানের নির্দেশে SSK সহায়িকাদের উপর হামলা চালায় তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী ৷
পুরাতন মালদা পৌরসভার অন্তর্গত বেশ কয়েকটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে কর্মরত সহায়িকাদের বেআইনিভাবে নিয়োগ করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের ৷ আরও অভিযোগ, স্থায়ী সহায়িকাদের সাম্মানিক ভাতা থেকে প্রতি মাসেই স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাটমানি দিতে হয় ৷ এ নিয়ে স্থায়ী সহায়িকারা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন৷ কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি৷ এই সমস্যার সমাধানের জন্য গতকাল বিকেলে নিজেদের সংগঠনের মাধ্যমে পৌরসভার চেয়ারম্যানকে ডেপুটেশন দিতে যান সহায়িকারা৷ ডেপুটেশনের নেতৃত্বে ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মহিদুল ইসলাম৷
সহায়িকাদের অভিযোগ, “ডেপুটেশনের বিষয় শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ ৷ তাঁর নির্দেশে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর পোষা গুন্ডারা ৷ রাস্তায় ফেলে লাথির পর লাথি মারা হয় ৷ তারা গুলি করে খুন করার হুমকি দিতে থাকে ৷ পুলিশকে খবর দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না ৷ ওই গুন্ডারা সংবাদমাধ্যমকেও আক্রমণ করে ৷ গত 10 মাস ধরে তিনজন সহায়িকার ভাতা বন্ধ করে রাখা হয়েছে ৷ আমরা মাসে 5400 টাকা ভাতা পাই ৷ তার মধ্যে থেকে এরা প্রতি মাসে আমাদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে 2200 টাকা কেটে নেয় ৷ আমরা এই টাকা দেব না বলায় কয়েকজন সহায়িকাকে হেনস্থা করা হয়েছে৷ এসব নিয়েই আজ আমরা চেয়ারম্যানের কাছে ডেপুটেশন দিতে গেছিলাম৷ কিন্তু চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁর গুন্ডারা মহিদুল সাহেবের উপর অকথ্য অত্যাচার করে৷ চেয়ারম্যান সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মারধরের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷”
এ প্রসঙ্গে গতকাল মহিদুল সাহেব বলেন, “পুরাতন মালদা পৌরসভার অন্তর্গত কয়েকটি SSK-র শিক্ষিকাদের মাসিক ভাতা থেকে অবৈধভাবে 2200 টাকা করে কেটে নেওয়া হচ্ছিল৷ চেয়ারম্যান নিজে জোর করে এই টাকা কেটে নিচ্ছিলেন৷ এনিয়ে আমি গতকাল পৌরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গোটা ঘটনা জানিয়েছি৷ মন্ত্রী এনিয়ে চেয়ারম্যানকে ফোন করেন৷ এই ঘটনার পর গত 5 তারিখ শিক্ষাকেন্দ্র খুললে চেয়ারম্যানের নির্দেশে এক শিক্ষিকাকে তালা বন্ধ করে মারধর করা হয়৷ ঘটনাটি ঘটেছিল পৌরসভার 17 নম্বর ওয়ার্ডে৷ এনিয়ে আজ আমরা ডেপুটেশন দিতে গেছিলাম৷ তিনি আমাদের ডেপুটেশন গ্রহণ করেননি৷ তিনি পৌরসভা থেকে চলে যাচ্ছিলেন৷ সেই সময় সহায়িকারা তাঁকে বলেন, তিনি কেন ডেপুটেশন না নিয়ে চলে যাচ্ছেন৷ এরপরই চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁর গুন্ডারা আমাদের বেধড়ক মারধর করে৷ আমাকে পিস্তলের বাঁট দিয়ে মারা হয় ৷ এরপর আমি পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সব ঘটনা জানাই৷”
যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ ৷ তিনি বলেন, “কারও কোনও ডেপুটেশন দেওয়ার কথা ছিল না ৷ আজ বিকেলে যারা আমার কাছে এসেছিল, তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত ৷ তারা আমার কক্ষে ঢুকে আমাকে নিগ্রহ করে৷ তাদের সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন পৌরকর্মীরা৷ এই ঘটনায় আমি 6 জনের বিরুদ্ধে মালদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি৷”
পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মালদা থানার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ এদিকে মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, "চেয়ারম্যান আজ কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি ৷ তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মাত্র ৷" এদিকে এই ঘটনায় গতকাল সন্ধেয় পুরাতন মালদা পৌরসভার সমস্ত দলীয় কাউন্সিলর ও নেতাদের নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর ৷ বৈঠকে তিনি এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করার নির্দেশ দেন৷