মালদা, 27 জুন : কোরোনায় ধুঁকছে অর্থনীতি ৷ কর্মহীন বহু ৷ বড় শিল্পের পাশাপাশি ধাক্কা খেয়েছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পও ৷ একই দশা পুরাতন মালদার প্রায় 50টি ধূপকাঠির কারখানা ৷ এই কাজের সঙ্গে মূলত এলাকার মহিলারা যুক্ত ৷ সংসার চালাতে এটাই ছিল বিকল্প আয়ের উৎস ৷ এখন সেটাই কেড়ে নিয়েছে দীর্ঘ লকডাউন আর কোরোনা সংক্রমণ ৷
পুরাতন মালদার 20টি ওয়ার্ডেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় 50টি ধূপকাঠি কারখানা ৷ গোটা পৌর এলাকার প্রায় 10 হাজার মহিলা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ৷ অনেকে কারখানায় কাজ করেন ৷ অনেকে বাড়িতে ধূপকাঠি তৈরি করেন ৷ বাড়িতে এক কেজি ধূপকাঠি তৈরি করলে 15 টাকা মজুরি পান ৷ কারখানায় প্রধানত ধূপকাঠির প্যাকেজিং ও লেভেলিং-এর কাজ হয় ৷ তবে কখনও কখনও সেখানেও ধূপকাঠি তৈরি করা হয় ৷ সেক্ষেত্রে পারিশ্রমিক খানিকটা বেশি পাওয়া যায় ৷ তবে এই কাজ বাড়িতে বসেই করতে পছন্দ করেন বেশিরভাগ মহিলা ৷ তাতে সংসার সামলে কাজ করা যায় ৷ কারখানার মালিকরা বাঁশের কাঠি ও ধূপের মশলা সরবরাহ করে ৷ বাড়ি থেকে তৈরি হওয়া ধূপকাঠি পরে তারাই সংগ্রহ করে ৷ সকালে কারখানা থেকে পাওয়া কাঁচামাল দিয়ে বিকেলের মধ্যে নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী ধূপকাঠি তৈরি করে দেন মহিলারা ৷ সন্ধে নাগাদ কারখানার লোক এসে তৈরি মাল নিয়ে যায় ৷ কিন্তু কোরোনা সংক্রমণ ও লকডাউন সেই কাজে বাধ সেধেছে ৷
15 নম্বর ওয়ার্ডের গান্ধি কলোনির বাসিন্দা ছবি কুণ্ডু ৷ বয়স 66 ৷ তিনি বলেন, "প্রায় এক বছর ধরে এই কাজ করছি ৷ গত তিন মাস ধরে লকডাউন চলছে ৷ আমাদের কাজও কমে গেছে ৷ একদিন কাজ দেওয়ার পর তিনদিন কম্পানির লোক এসে মাল নিয়ে যাচ্ছে ৷ কাঁচামালও বেশি দিচ্ছে না ৷ সংসারে কিছুটা আয় বাড়ানোর সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত খরচ চালানোর জন্যই এই কাজে হাত দিয়েছিলাম ৷ নিজের হাতে দুটো পয়সা থাকলে সবসময় ছেলেদের মুখ চেয়ে থাকতে হয় না ৷ এখন আর সেই অর্থ উপার্জন করতে পারছি না ৷ দেশে রোগ ছড়িয়ে পড়ুক, সেটা আমি চাই না ৷ তবে লকডাউনের জন্য মধ্যবিত্ত কিংবা গরিবদের খুব কষ্ট হচ্ছে ৷ এই মানুষগুলোর জন্য সরকার খানিকটা সুবিধে দিলে ভালো হয় ৷" স্থানীয় বাসিন্দা নিভা চক্রবর্তী বলেন, "প্রায় সাত বছর ধরে বাড়িতে ধূপকাঠি বানাচ্ছি ৷ আগে যেভাবে ধূপকাঠি বিক্রি হত, এখন আর হয় না ৷ কম্পানির বিক্রি কমে যাওয়ায়, আমাদের কাজ দিতে পারছে না ৷ বড় অসুবিধে হচ্ছে ৷ আমি সাধারণত দিনে 10 কেজি ধূপকাঠি বানাই ৷ দিনে 150 টাকা মজুরি পাই ৷ আমার স্বামী লটারি বিক্রেতা ৷ তাঁর খুব একটা উপার্জন নেই ৷ দু’জনের রোজগারে কোনওরকমে সংসার চলে যেত ৷ কিন্তু এখন দিন গুজরানে বেশ সমস্যা হচ্ছে ৷ লকডাউনে স্বামীর কাজ বন্ধ ৷ ঘরে ছেলেমেয়ে রয়েছে ৷ ওদের পড়াশোনার খরচ রয়েছে ৷ 4 জুন থেকে লটারি ব্যবসা চালু হলেও, এখন আর টিকিট বিক্রি হচ্ছে না ৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি সাহায্য বলতে শুধুমাত্র মেয়ের অ্যাকাউন্টে 500 টাকা ঢুকেছে ৷ রেশন সামগ্রীটা পাচ্ছি ৷ লকডাউন যদি আবার বাড়ে বা লাগু হয়, তাহলে না খেয়েই মরতে হবে ৷" ধূপকাঠির কারখানায় কাজ করেন বিশাখা সাহা ৷ রশিলাদহ এলাকায় তাঁর বাড়ি ৷ তিনি বলেন, "পাঁচবছর ধরে এই কাজ করছি ৷ পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচ ৷ স্বামী রিকশা চালান ৷ তিন ছেলে-মেয়ে ৷ তারা পড়াশোনা করে ৷ পরিবারে আর্থিক সমস্যা ৷ তাই কাজ করি ৷ কিন্তু খুব অসুবিধে হয়েছে ৷ পড়েছি ৷ কারখানা বন্ধ ছিল ৷ কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ৷ এখন কারখানা খুললেও আগের মতো কাজ হয় না ৷ আমরা চাই, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক ৷ তাতে আমরা সবাই ভালোভাব বাঁচব ৷"