মালদা, 8 সেপ্টেম্বর : প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস । দীর্ঘ সময় ! সমস্যা সঙ্গে করেই প্রথমদিকে টেনেটুনে চলছিল সংসার । কিন্তু সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে যত, তত তীব্র হয়েছে অভাব । যদিও মানুষগুলো কারো কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছেন না । চাইছেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হোক । তাহলেই "বেঁচে" উঠবেন তাঁরা ! মালদা টাউন স্টেশনকে কেন্দ্র করে জীবীকা যাঁদের, এ হল তাঁদের কথা ৷
শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ মালদা টাউন স্টেশন । কোভিড পূর্ব যুগে দিনে 84 জোড়া ট্রেন এই স্টেশন ছুঁয়ে যাতায়াত করত । কেবল মালদা জেলাই নয়, এই স্টেশন দরকারি পাশের দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদের একাংশ, এমনকী বাংলাদেশের মানুষের কাছেও । এই স্টেশন আছে, নাকি "ছিল" বলেই সংসার চলত কত অসংখ্য মানুষের ! কারা তাঁরা ?
ট্যাক্সিচালক, নানা ধরনের শ্রমিক থেকে শুরু করে অসংখ্য অস্থায়ী দোকান মালিক । যেমন, ভাতের হোটেল, ফল, মুড়ি, চা, পান-সিগারেটের দোকান । কোভিডের আগে ভালো ছিলেন এই ব্যবসায়ীরা । কারণ, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত জংশন স্টেশনে । কিন্তু গত মার্চ থেকে বদলে গিয়েছে সব ! বন্ধ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল । সম্প্রতি দু'টি স্পেশাল ট্রেন চলছে বটে, কিন্তু তা কি আর 84 জোড়া ট্রেনের বিকল্প হতে পারে ! অবস্থা এতটাই খারাপ যে, স্টেশন চত্বরের বহু হোটেল কর্মী অন্য কাজের খোঁজে এলাকা ছেড়েছেন । যাঁরা এখনও পুরোনো প্রতিষ্ঠানে পড়ে রয়েছেন, তাঁরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে তাকিয়ে !
মালদা টাউন স্টেশন চত্বরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে প্রায় 60 টি গাড়ি ভাড়া খাটে । এর সঙ্গে বাইরের বেশ কিছু গাড়িও স্টেশনে যাতায়াত করে । সকলেরই ভরসা স্টেশন ৷ যাত্রীরাই তো গ্রাহকদেবতা ! লকডাউনে এদের বিপদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি । কারণ, শহরের অন্য কোথাও এদের গাড়ি চালাতে দেওয়া হয় না । তেমনই একজন মহানন্দা পল্লির বাসিন্দা সন্তোষ ভগৎ মালি ।
সন্তোষ বলেন, "সাড়ে পাঁচ মাস ধরে কাজ বন্ধ । ফোন মারফৎ যেটুকু ভাড়া পাই ! আগে যত ভাড়া পেতাম, এখন তার এক চতুর্থাংশও হচ্ছে না । মালিক অবশ্য এখনও বেতন দিচ্ছেন । সব মালিকই কম-বেশি বেতন দিচ্ছেন । তাঁদেরই তো উপার্জন নেই ! সরকারি সহায়তা পাইনি । "
ট্রেন চললেই হবে সমস্যার সমাধান ৷ বলছেন সন্তোষ ভগৎ মালি ৷ তাঁর কথায়, "ট্রেন চলাচলের উপরেই নির্ভরশীল আমরা । যত তাড়াতাড়ি ট্রেন চালু হবে, ততই মঙ্গল হবে আমাদের ।"
শহরের সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা উদয়শংকর দাস । নিজের গাড়ি, নিজেই চালান । বলেন, "এখন 5-6 দিন পর পর একটা ভাড়া পাচ্ছি । এই স্ট্যান্ডে চেইন সিস্টেমে গাড়িওলাদের ভাড়া দেওয়া হয় । এখন একটা ভাড়া পেতে অনেক দিন কেটে যাচ্ছে ৷ এদিকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছি । গত পাঁচ মাস ব্যাঙ্কের কিস্তি মেটাতে পারিনি । সরকারের কাছে একটাই আর্জি, আরও কিছু ট্রেন চালু করা হোক ।"