মালদা, 8 ফেব্রুয়ারি : নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য পরিষেবা বন্ধ থাকল চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ নিজেদের কাজ ছেড়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসেন চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য কর্মীরা ৷ খবর পেয়ে হাসপাতালে আসে চাঁচল থানার পুলিশ ৷ পুলিশের কাছে হাসপাতালে স্থায়ী ফাঁড়ির দাবি জানিয়েছে সবাই ৷ তবে এই ঘটনা বৃহস্পতিবারের জের বলে মনে করা হচ্ছে ৷ সেদিন এই হাসপাতালে রোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের বচসা বাধে৷ দুই পক্ষের হাতাহাতিও হয়৷ ঘটনার জেরে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷
বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন দপ্তরের তিন ঠিকা কর্মী ৷ তাঁদের চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ৷ সেই সময় প্রচুর মানুষ হাসপাতালে ঢুকতে চায় ৷ তাদের বাধা দেয় নিরাপত্তাকর্মীরা ৷ এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে বচসা, পরে হাতাহাতি শুরু হয়৷ এক ব্যক্তিকে আটকে রাখে হাসপাতালের কর্মীরা ৷ পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ৷ তারপরই গতকাল হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরের ঘটনা ঘটল ৷
হাসপাতালে কাজ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ে রোগীরা গতকাল ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন নিরাপত্তারক্ষী নিমাই মণ্ডল৷ স্থানীয় কলিগ্রাম দোসর মোড়ে তাঁকে ঘিরে ধরে চার দুষ্কৃতী৷ প্রত্যেকের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল ৷ তারা নিমাইবাবুকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে ৷ তাঁকে মাটিতে ফেলে বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ৷ মারধরের পর দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়৷ পরে স্থানীয় মানুষজন নিমাইবাবুকে উদ্ধার করে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভরতি করে ৷ এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতালের সব স্তরের কর্মীদের মধ্যে৷ সবাই নিজেদের কাজ বন্ধ করে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসেন৷ খবর যায় চাঁচল থানায়৷ হাসপাতালে আসে পুলিশ ৷ পুলিশের সামনে হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি গঠনের দাবি জানানো হয় ৷ পরে পুলিশি আশ্বাসে কর্মীরা নিজেদের কাজে ফিরে যান ৷
হাসপাতালের নার্স চন্দ্রাণী ওঝা বলেন, “বছর দুয়েক আগেও আমাদের সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল৷ আমাদের এক স্টাফকে মারধর করা হয়েছিল ৷ সেই সময়ও পুলিশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এমন ঘটনা আর ঘটবে না৷ তাহলে একই ঘটনা আবার কীভাবে ঘটল? সেই কারণেই আমরা কাজ ছেড়ে হাসপাতালের বাইরে চলে এসেছি৷ আমাদের দাবি, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ আমরা নিজেদের নিরাপত্তা চাই৷ আমরা তো আর রোগীদের ফেলে যেতে পারব না!”
হাসপাতালের বাইরে কর্মীদের জমায়েত একই বক্তব্য হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ঝরণা সাহার৷ তিনি বলেন, “রাতবিরেতে আমাদের ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরতে হয়৷ সেক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? তাই নিরাপত্তার দাবিতে আজ আমরা হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে এসেছি৷” হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী সুমিত সকার বলেন, “গতকালের ঘটনার জেরেই আজ আমাদের এক কর্মীকে রাস্তায় মারধর করা হয়েছে ৷ গতকাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনজন হাসপাতালে আসে৷ তার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় ৷ তাদের লোকজন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ তাদের ভিতরে ঢুকতে না দেওয়ায় তারা আমাদের স্টাফের গায়ে হাত দেয় ৷ আমরা একজন হামলাকারীকে ভিতরে নিয়ে এসে আটকে রাখি ৷ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ তার জন্যই আজ নিমাইদাকে মারধর করা হয়েছে ৷ রোগীদের আত্মীয়স্বজন যদি বারবার এমন ঝামেলা করে তবে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে ৷ আমরা চাই, হাসপাতালে পুলিশি ব্যবস্থা করা হোক ৷ তা না হলে রোগীরা সঠিক পরিষেবা পাবে না ৷ কারণ, আমাদের সবারই প্রাণের ভয় রয়েছে ৷ ভয় নিয়ে কাজ করা যায় না ৷”
হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির দাবি জানিয়েছেন সুপার ওয়াসিম রানাও৷ তিনি বলেন, “আজ আমাদের হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী বাড়ি যাওয়ার পথে আক্রান্ত হয়েছেন ৷ তাঁর মাথা ও বুকে চোট রয়েছে৷ তাঁর চিকিৎসা চলছে ৷ এই ঘটনায় ওই নিরাপত্তাকর্মী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ভীত৷ এমন ঘটনা অনভিপ্রেত ৷ পুলিশ এসেছে ৷ পুলিশকর্মীরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন ৷ এটা একটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ৷ এখানে যদি একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি করা হয়, তবে নিরাপত্তার বিষয়টি একটু ভালো হবে ৷ আমরা পুলিশের কাছে সেই আর্জি রেখেছি৷ পুলিশ আমাদের আবেদন খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে৷ আজকের ঘটনার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের প্রতিটি কর্মী স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত৷ আমরা বাইরে থেকে চাকরি করতে এসেছি৷ এখানে মহিলা চিকিৎসক ও নার্সরা রয়েছেন ৷ তাঁরা অনেক দূর থেকে পরিষেবা দিতে আসছেন৷ তাঁদের রাতবিরেতে বাড়ি ফিরতে হয়৷ তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত ৷ আমাদের অনুমান, গতকালের ঘটনার জেরেই আজ এই ঘটনা ঘটেছে ৷”