মালদা, 12 অক্টোবর: এ শুধুই পুজো নয়, এ যথার্থ শারদোৎসব ৷ যে পুজোয় শুধু হিন্দু নয়, অংশ নেয় মুসলিম সমাজ, যে পুজোয় ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে মিশে থাকে অন্ত্যজদের আবেগ, সেই পুজোই যথার্থ উৎসবের বার্তা বহন করে ৷ এখানে দেবী শুধু হিন্দুদের নয়, মুসলমানদেরও মা ৷ শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলাও যেন একটু থমকে দাঁড়ায় ‘মালদা ঐক্য’ পুজোমণ্ডপের মাথায় ৷ কাশবনের বাতাস ভেসে আসে ইট-কংক্রিটের শহরে ৷ শুধু দুর্গাপুজোই নয়, ঈদ-মহরমও এখানে কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের নয় ৷ সবই বাঙালির উৎসব, বাঙালির পরব ৷
ইংরেজবাজার পৌরসভার 6 নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পিরোজপুর ৷ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ৷ এখানেই বাস শহরের অধিকাংশ হরিজন সম্প্রদায়ের ৷ তাঁরা হিন্দু ৷ কিন্তু তথাকথিত উচ্চবর্ণের দুর্গাপুজোয় তাঁদের অংশগ্রহণের অধিকার পদে পদে ঠোক্কর খায় ৷ এই মানুষগুলোই একদিন আর্জি নিয়ে গিয়েছিল মুসলিম মহল্লার কিছু যুবকের কাছে ৷ দুর্গাপুজো করতে হবে ৷ যে পুজোয় ধর্ম-বর্ণের কোনও ভেদাভেদ থাকবে না ৷ আর্জিটা নাড়িয়ে দিয়েছিল ওই মুসলমান যুবকদের মন ৷ তখনই দুই সম্প্রদায় কোমর কষে শারদীয়া উৎসব পালনে নেমে পড়ে ৷ এলাকাতেই ছিল একটি ছোট ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ৷ সেখানে ছোট্ট ফাঁকা জায়গায় 2007 সালে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে ফেলেন মহল্লার বাসিন্দারা ৷ ধীরে ধীরে পুজোর কলেবর বাড়ে ৷ এখন ওই জায়গায় তাঁরা সুদৃশ্য দুর্গামন্দিরও নির্মাণ করে ফেলেছেন ৷ পুজোর নাম ‘মালদার ঐক্য’৷
পুজো কমিটির সভাপতি শংকর দত্ত বলছেন, “শুধু ধর্ম নয়, এখানে ধর্মের সঙ্গে বর্ণও মিলেমিশে রয়েছে ৷ ছোট থেকে আমরা সবাই একসঙ্গেই এখানে মানুষ হয়েছি ৷ এই পুজোয় যেমন হিন্দু-মুসলমান অংশ নেয়, তেমনই ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-হরিজনরাও পুষ্পাঞ্জলি দেয় ৷ শুধু এই শহরে নয়, এমন সম্প্রীতির ছবি গোটা রাজ্যেই ব্যতিক্রমী ৷ বছর বিশেক আগে গোটা দেশে যখন একটা সাম্প্রদায়িক সংকট দেখা দিচ্ছিল, তখনই আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিই ৷ 2007 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা এই সম্প্রীতি বজায় রেখে চলছি ৷ শুধু দুর্গাপুজো নয়, কালীপুজো, ঈদ, মহরম সব উৎসব আমরা এভাবেই পালন করে থাকি ৷ এটা শুধু কথার কথা নয় ৷ যে কোনও উৎসবে এখানে এলেই যে কেউ সেই ছবি দেখতে পাবে ৷ শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই মানুষ এখানে পুজো দেখতে আসেন ৷ আমাদের এই উদ্যোগকে মালদার মানুষ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে ৷ আর আমাদের সংস্থার নামের সঙ্গেই আমাদের বার্তা জড়িয়ে রয়েছে ৷”