পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Durga Puja 2023: পুজোয় জড়িয়ে মুসলমান থেকে হিন্দু ব্রাহ্মণ ও অন্ত্যজরাও, যথার্থই সম্প্রীতির শারদোৎসব মালদার ঐক্যে - Hindus Muslims

Harmony in Durga Puja 2023: এই দুর্গাপুজোয় জড়িয়ে রয়েছেন মুসলমান থেকে শুরু করে হিন্দু ব্রাহ্মণ এমনকী অন্ত্যজরাও ৷ যথার্থই সম্প্রীতির শারদোৎসব পালিত হয় মালদা ঐক্যের পুজোয় ৷

Durga Puja 2023
সম্প্রীতির শারদোৎসব মালদার ঐক্যে

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 13, 2023, 8:02 PM IST

সম্প্রীতির শারদোৎসব মালদার ঐক্যে

মালদা, 12 অক্টোবর: এ শুধুই পুজো নয়, এ যথার্থ শারদোৎসব ৷ যে পুজোয় শুধু হিন্দু নয়, অংশ নেয় মুসলিম সমাজ, যে পুজোয় ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে মিশে থাকে অন্ত্যজদের আবেগ, সেই পুজোই যথার্থ উৎসবের বার্তা বহন করে ৷ এখানে দেবী শুধু হিন্দুদের নয়, মুসলমানদেরও মা ৷ শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলাও যেন একটু থমকে দাঁড়ায় ‘মালদা ঐক্য’ পুজোমণ্ডপের মাথায় ৷ কাশবনের বাতাস ভেসে আসে ইট-কংক্রিটের শহরে ৷ শুধু দুর্গাপুজোই নয়, ঈদ-মহরমও এখানে কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের নয় ৷ সবই বাঙালির উৎসব, বাঙালির পরব ৷

ইংরেজবাজার পৌরসভার 6 নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পিরোজপুর ৷ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ৷ এখানেই বাস শহরের অধিকাংশ হরিজন সম্প্রদায়ের ৷ তাঁরা হিন্দু ৷ কিন্তু তথাকথিত উচ্চবর্ণের দুর্গাপুজোয় তাঁদের অংশগ্রহণের অধিকার পদে পদে ঠোক্কর খায় ৷ এই মানুষগুলোই একদিন আর্জি নিয়ে গিয়েছিল মুসলিম মহল্লার কিছু যুবকের কাছে ৷ দুর্গাপুজো করতে হবে ৷ যে পুজোয় ধর্ম-বর্ণের কোনও ভেদাভেদ থাকবে না ৷ আর্জিটা নাড়িয়ে দিয়েছিল ওই মুসলমান যুবকদের মন ৷ তখনই দুই সম্প্রদায় কোমর কষে শারদীয়া উৎসব পালনে নেমে পড়ে ৷ এলাকাতেই ছিল একটি ছোট ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ৷ সেখানে ছোট্ট ফাঁকা জায়গায় 2007 সালে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে ফেলেন মহল্লার বাসিন্দারা ৷ ধীরে ধীরে পুজোর কলেবর বাড়ে ৷ এখন ওই জায়গায় তাঁরা সুদৃশ্য দুর্গামন্দিরও নির্মাণ করে ফেলেছেন ৷ পুজোর নাম ‘মালদার ঐক্য’৷

পুজো কমিটির সভাপতি শংকর দত্ত বলছেন, “শুধু ধর্ম নয়, এখানে ধর্মের সঙ্গে বর্ণও মিলেমিশে রয়েছে ৷ ছোট থেকে আমরা সবাই একসঙ্গেই এখানে মানুষ হয়েছি ৷ এই পুজোয় যেমন হিন্দু-মুসলমান অংশ নেয়, তেমনই ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-হরিজনরাও পুষ্পাঞ্জলি দেয় ৷ শুধু এই শহরে নয়, এমন সম্প্রীতির ছবি গোটা রাজ্যেই ব্যতিক্রমী ৷ বছর বিশেক আগে গোটা দেশে যখন একটা সাম্প্রদায়িক সংকট দেখা দিচ্ছিল, তখনই আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিই ৷ 2007 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা এই সম্প্রীতি বজায় রেখে চলছি ৷ শুধু দুর্গাপুজো নয়, কালীপুজো, ঈদ, মহরম সব উৎসব আমরা এভাবেই পালন করে থাকি ৷ এটা শুধু কথার কথা নয় ৷ যে কোনও উৎসবে এখানে এলেই যে কেউ সেই ছবি দেখতে পাবে ৷ শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই মানুষ এখানে পুজো দেখতে আসেন ৷ আমাদের এই উদ্যোগকে মালদার মানুষ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে ৷ আর আমাদের সংস্থার নামের সঙ্গেই আমাদের বার্তা জড়িয়ে রয়েছে ৷”

আরও পড়ুন:278 বছরের পুরনো দেব সরকার বাড়ির পুজো, সপ্তমী-দশমী হয় 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য

পুজো কমিটির সম্পাদক ববি আহমেদ জানান, “17 বছর ধরে আমাদের দুর্গাপুজো চলছে ৷ মুসলিম ধর্মে মূর্তি পুজোর প্রচলন নেই ৷ আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্যই দুর্গাপুজো করে থাকি ৷ শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বে এখন সাম্প্রদায়িক সংকটের যে বাতাবরণ চলছে, সেই আবহে সম্প্রীতির বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া খুব প্রয়োজন ৷ সেটাই আমাদের লক্ষ্য ৷ আমাদের এখানে হিন্দুদের নিচু সম্প্রদায়ের মানুষও ব্রাহ্মণদের মতো সম্মান পান ৷ শুধু দুর্গাপুজোতেই নয়, কালীপুজো, ঈদ, মহরম-সহ সমস্ত উৎসবই একসঙ্গে পালন করে থাকি ৷ উৎসব আনন্দের ৷ ধর্মের গণ্ডি দিয়ে সেই আনন্দকে আটকে রাখা যায় না ৷ প্রচুর মানুষ আমাদের পুজোয় অংশ নেন ৷ এ বার আমাদের একটু আর্থিক সংকট রয়েছে ৷ তাই পুজোর বাজেটও কমাতে হয়েছে ৷ সেই বাজেট ধরা হয়েছে 2 লাখ 30 হাজার টাকা ৷ সব সম্প্রদায়ের মানুষের চাঁদাতেই পুজো হয় ৷ টাকার অভাবে এ বার আমরা অন্যান্য বারের মতো বস্ত্র বিতরণ কিংবা প্রসাদ বিতরণের মতো কিছু করতে পারছি না ৷ তবে সরকারি সব নিয়ম মেনেই আমরা পুজো করছি ৷ ইচ্ছে ছিল, চতুর্থীতে পুজোর উদ্বোধন করব ৷ কিন্তু বিরূপ প্রকৃতির জন্য তা সম্ভব হবে না ৷ স্থানীয় দুই সম্প্রদায়ের বয়স্ক মানুষজনই আমাদের পুজোর উদ্বোধন করবেন ৷”

এলাকার বাসিন্দা হরিজন সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি শিবা হরিজন জানাচ্ছেন, “আগে আমরা দুর্গাপুজোয় অংশ নিতে পারতাম না ৷ এখন নিজেরা পুজো করি ৷ এলাকার মুসলিম যুবকরাই আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে ৷ আমরা চাই, এমন পুজো দিকে দিকে চালু হোক ৷ তাহলে মানুষে মানুষে আর ভেদাভেদ থাকবে না ৷ আল্লা আর ঈশ্বরের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকবে না ৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details