পড়ুয়াদের আচরণে চিন্তিত শিক্ষকরা মালদা, 24 মার্চ: কখনও প্রশ্নপত্র ফাঁস, কখনও বা পরীক্ষায় দেদার নকল ! ইদানীংকালে এইসব অনভিপ্রেত ঘটনার জন্যই বারবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে মালদা ৷ টুকলি ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ৷ তার জেরে 'স্পর্শকাতর' পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে এবার মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়েছে ৷ পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে পরীক্ষার্থীদের ভালো মতো তল্লাশি করা হচ্ছে ৷ প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্র নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে ৷ কিন্তু, তবু অপবাদ ঘুচল না এই জেলার ! পরীক্ষায় নকল করতে না পেরে টুকলির চিরকুট ছড়িয়ে পথ অবরোধ, পরীক্ষাকেন্দ্রে যথেচ্ছ ভাঙচুর, এমনকী শিক্ষকদের মারধর করতেও পিছপা হল না পরীক্ষার্থীরা (Cheating Allegations in HS) ! সন্তানসম ছেলেমেয়েদের এই দৌরাত্ম্য দেখে লজ্জিত শিক্ষক সমাজ ৷
পদার্থবিদ্যা পরীক্ষায় নকল করতে দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার রতুয়া হাই মাদ্রাসায় রীতিমতো তাণ্ডব চালায় ভাদো বিএসবি হাইস্কুলের পরীক্ষার্থীরা ! শিক্ষকদের মারধর করারও অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে ৷ আরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ হল, পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক নিগ্রহে হাত লাগিয়েছিলেন তাদের অভিভাবকরাও ! এই ঘটনা নিয়ে 24 ঘণ্টা পরও জেলাজুড়ে চর্চা চলছে ৷
কিন্তু কেন পরীক্ষার্থীদের এমন ন্যক্কারজনক আচরণ ? বৃহস্পতিবার যে স্কুলের পড়ুয়ারা তাণ্ডব চালিয়েছিল, সেই ভাদো বিএসবি হাইস্কুলের টিআইসি মহম্মদ মনিরুল ইসলাম এই প্রসঙ্গে বলেন, "কয়েকদিন আগে আমাদের স্কুলের পড়ুয়ারাই নকল করতে দেওয়ার দাবিতে টুকলি ছড়িয়ে পথ অবরোধ করেছিল ! সেই ঘটনার পর আমরা রতুয়া হাইমাদ্রাসায় গিয়েছিলাম ৷ আমাদের পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম ৷ তারা নিজেদের ভুল স্বীকারও করেছিল ৷ তারা এমন কাজ আর করবে না বলেও জানিয়েছিল ৷ কিন্তু, গতকাল তারা যে কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না ৷ সেই খবর পেয়ে গতকাল ফের ওই মাদ্রাসায় যাই ৷ শুনলাম, আমাদের স্কুলের ছাত্ররা নকল করতে দেওয়ার দাবি তুলছে ! এমন দাবি প্রায় প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রেই উঠছে ! মোথাবাড়িতেও এই দাবিতে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্র ভাঙচুর করেছে ৷"
আরও পড়ুন:পরীক্ষায় নকল করতে দেওয়া হয়নি কেন ? রাস্তায় টুকলি ছড়িয়ে প্রতিবাদ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের
মনিরুল মনে করেন, এবার যারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে, করোনার জন্য তারা মাধ্যমিক পরীক্ষাতেই বসেনি ৷ ফলে পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা নেই ৷ সেই কারণেই তারা এখন নকল করতে দেওয়ার দাবি তুলছে ৷ এই ভয়ঙ্কর অবক্ষয় নিয়ে সকলের ভাবা দরকার বলে মনে করেন মনিরুল ৷ তাঁর কথায়, "সরকারকেও ভাবতে হবে ৷ পরীক্ষা নকলমুক্ত করতেই হবে ৷ প্রয়োজনে এদের কাউন্সেলিং করাতে হবে ৷ কিন্তু এখনকার পড়ুয়ারা শিক্ষকদের মানতেই চায় না ৷ এতে শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ আমরা যেন এখন সমাজে নিকৃষ্ট হয়ে গিয়েছি ৷ কোনও পড়ুয়া খারাপ কিছু করলে আমরা বাধা দেওয়ার আগে অন্তত দু'বার ভাবি ৷ কারণ, পড়ুয়াদের কাছে নিজেদের সম্মানহানির ভয় থাকে ৷ আমরা এখন ছাত্রছাত্রীদের বকুনি দিতে বা গায়ে হাত তুলতেও পারি না ৷ আমাদের স্কুলের যথেষ্ট সুনাম ছিল ৷ পরিকাঠামোও যথেষ্ট উন্নত ৷ কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাত্রের জন্য আমাদের সব সম্মান ধুলোয় মিশে গেল ৷"