মালদা, 28 জানুয়ারি: এখনও ঘোর কাটছে না পায়েলের ৷ এলাকার বিধায়ক যে এভাবে তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন, কল্পনাও করেননি তিনি ৷ অথচ অভাবের সংসারে ডাক্তারি পড়াটাই তাঁর কাছে কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ কীভাবে স্বপ্ন পূরণ করবেন, তা নিয়ে পড়েছিলেন অকূল পাথারে ৷ অবশেষে বিধায়ক এক প্রকার ত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন ৷ বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত ৷ প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে নতুন ল্যাপটপ তুলে দিয়েছেন বিধায়ক (TMC MLA helped girl student with Laptop) ৷ দিয়েছেন প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস ৷
বাড়ি রতুয়া ২ নম্বর ব্লকের মহারাজপুর সংলগ্ন কাটাহা দিয়ারা গ্রামে বাসিন্দা পায়েল রহমান ৷ বাবা মাইনুল হক পরিযায়ী শ্রমিক ৷ মা নাসিমা পারভিন গৃহবধূ ৷ অভাবের সংসারে ছোট থেকেই মেধাবী পায়েল ৷ 2015 সালে স্থানীয় কেপাতুল্লা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন ৷ ছোট থেকেই মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের কথা জানতেন অভাবি বাবা ৷ মেয়েকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন শিলিগুড়ির আল আমিন মিশনে ৷ সেখান থেকেই 2017 সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন পায়েল ৷ চিকিৎসক হওয়ার জন্য নিট প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেন ৷ বাজিমাতও করেন ৷ বর্তমানে তিনি কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ৷ আর ক’দিন পরেই তৃতীয় বর্ষে উঠবেন ৷ নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যে পরিবারের, সেখানে মেয়ের পড়াশুনার জন্য় ল্য়াপটপ কেনারও ক্ষমতা নেই মা-বাবার ৷
আর বর্তমানযুগে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ছাড়া চলাই দায় ৷ ল্যাপটপের অভাবে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি ৷ তাই গ্রামের এক দাদার সঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক আবদুর রহিম বকসির সঙ্গে দেখা করেন পায়েল ৷ পায়েলের কাছে সব জেনে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন বিধায়ক ৷ বৃহস্পতিবার রতুয়ার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে পায়েলের হাতে তিনি একটি নতুন ল্যাপটপ তুলে দেন তিনি ৷ সঙ্গে কিছু আর্থিক সহযোগিতাও করেন ৷ পাশাপাশি তিনি পায়েলকে কথা দেন, প্রতি মাসে পায়েলের অ্যাকাউন্টে তাঁর পক্ষ থেকে 5 হাজার টাকা দেওয়া হবে ৷
পায়েল বলেন, "উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি ৷ তার জন্য আমাকে এক বছর পড়াশোনা বন্ধ করতে হয় ৷ তারপর আমি নিটের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম ৷ প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে নর্থবেঙ্গল ডেন্টাল কলেজে পড়ার সুযোগও পাই ৷ কিন্তু আমার এমবিবিএস কোর্সে পড়াশোনার স্বপ্ন ৷ তাই ডেন্টাল কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ফের নিট পরীক্ষায় বসি ৷ সফল হয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পাই ৷ এবার আমি তৃতীয় বর্ষে উঠব ৷ কিন্তু আমার বাবা শ্রমিক ৷ তাঁর পক্ষে ডাক্তারি পড়ার বিপুল খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না ৷ এমনকী আমাকে তিনি ল্যাপটপও কিনে দিতে পারেননি ৷ কীভাবে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করব তা ভেবেই যাচ্ছিলাম ৷ শেষ পর্যন্ত গ্রামের এক দাদা আমাকে বিধায়কের কাছে নিয়ে যায় ৷ বিধায়ক আমাকে এককালীন কিছু সাহায্যের আশ্বাস দেন ৷ আমার কী কী প্রয়োজন তা জানতে চান৷ তিনি আমাকে একটি ল্যাপটপ দেবেন বলে জানান৷ গতকাল তিনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ৷ আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি, তিনি আমাকে সংবর্ধনা দেবেন ৷ ল্যাপটপের পাশাপাশি সঙ্গে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন ৷ সেসবই তিনি করেছেন ৷"
আরও পড়ুন:বন্যায় বিপর্যস্ত অসমের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ালেন আমির
মালতিপুর কেন্দ্রের বিধায়ক রহিম বক্সী জানান, "আমার বিধানসভা কেন্দ্র এলাকার এক দুঃস্থ ছাত্রী জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সফল হয়ে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছেন ৷ সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধে পেলেও তার বাবার পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়া সমস্যা হয়ে পড়েছিল ৷ তাঁর কাছে একটা ল্যাপটপ পর্যন্ত ছিল না ৷ তিনি আমার কাছে বিধায়ক হিসেবে সাহায্যের আবেদন করেছিল ৷ তাঁকে আমি একটা ল্যাপটপ দিয়েছি ৷ শুধু তাই নয়, তার পড়াশোনার জন্য আমার বিধায়ক ভাতার অর্থ থেকে প্রতি মাসে 5 হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে চলে যাবে ৷ যতদিন না তার এমবিবিএ কোর্স শেষ হয়, ততদিন এই টাকা তাঁকে দেওয়া হবে ৷ এরপরেও যদি তার এককালীন কোনও অর্থের প্রয়োজন হয়, আমার কাছে আসলে তাঁকে সহযোগিতা করব ৷”