মালদা, 22 অগাস্ট : চলতি মরশুমে প্রথমবার বিপদসীমা পেরোল গঙ্গা ৷ গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে যেমন কালিয়াচক 2 ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাঙন শুরু হয়েছে, অন্যদিকে মানিকচক ব্লকের নদীর চরগুলিতে জল ঢুকে পড়েছে ৷ বিশেষত গদাই চরের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিপজ্জনক ৷ সেখানে বানভাসি প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ।
এবছর বর্ষায় এই প্রথমবার বিপদসীমা পার করল গঙ্গা ৷ আজ সকালে নদীর জলস্তর ছিল 24.72 মিটার ৷ বিপদসীমা 24.69 মিটার থেকে 3 সেন্টিমিটার বেশি ৷ তবে এখনও চূড়ান্ত বিপদসীমা 25.30 মিটার থেকে বেশ কিছুটা নীচে বইছে গঙ্গার জল ৷ উদ্বিগ্ন জেলা সেচ দপ্তরও ৷ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে গঙ্গার আপার ক্যাচমেন্টে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে ৷ সেই জল গঙ্গা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসছে ৷ উত্তর ভারতে বৃষ্টি আরও কয়েকদিন বহাল থাকবে বলে জানা গিয়েছে ৷ ফলে, আগামী কয়েকদিন গঙ্গার জলস্তর ক্রমাগত বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ জেলা সেচ দপ্তরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত জানিয়েছেন, তাঁরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন ৷ যথাসময়েই সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ৷ তবে স্বস্তির কথা, এই মুহূর্তে জেলার অন্য দুই প্রধান নদী, ফুলহর ও মহানন্দার জলস্তর ক্রমাগত কমছে ।
এ'দিকে গঙ্গার জলে এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি গদাই চরে ৷ মালদা জেলার অন্তর্ভুক্ত এই চরের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের মাঝামাঝি জায়গায় ৷ অত্যন্ত দুর্গম জলপথে সেই চরে যেতে হয় ৷ এই মুহূর্তে ওই চরের ফুলচনটোলা, রামানন্দটোলা, শিবলালটোলাসহ বিভিন্ন গ্রামে 4 থেকে 5 ফুট জল জমে রয়েছে ৷ গ্রামবাসীরা বাঁশের মাচার উপর থাকতে শুরু করেছে ৷ মানিকচক ব্লকের হীরানন্দপুর গ্রাম-পঞ্চায়েতের অধীন ওই চরের এক পঞ্চায়েত সদস্য সুলেখা মাহাত বলেন, “পঞ্চায়েত-সহ BDO-কেও জানিয়েছি পরিস্থিতির কথা ৷ কিন্তু এখনও কোনও সরকারি ত্রাণ এলাকায় এসে পৌঁছায়নি ৷ কারও ঘরে খাবার নেই ৷ নলকূপগুলি জলের নিচে চলে গিয়েছে ৷ এভাবে চলতে থাকলে কী হবে জানি না ৷”
মানিকচকের BDO সুরজিৎ পণ্ডিত জানান, “গঙ্গার জলস্তর বাড়ায় নীচু চরগুলিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে ৷ গদাই চরে অনেক মানুষ বিপন্ন, খবর পেয়েছি ৷ পঞ্চায়েত প্রধানকে দুর্গতদের তালিকা তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে ৷ কিন্তু সেই তালিকা এখনও পাইনি ৷ তাই সেখানে সরকারি ত্রাণ পাঠানো যায়নি ৷” হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কাজল মাহাত বলেন, “গদাই চরের দুর্গতদের নামের তালিকা তৈরির কাজ চলছে ৷ সোমবারের মধ্যে তা ব্লক প্রশাসনকে দেওয়া হবে ৷ তারপর ব্লক প্রশাসনই সেখানে ত্রাণ সরবরাহ করবে ৷” যদিও বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত বানভাসি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, “গদাই চরে যে এভাবে গঙ্গার জল ঢুকে পড়েছে তা জানতাম না ৷ আমি আজই এ'নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলছি ৷ চরের দুর্গত মানুষজনের কাছে যাতে দ্রুত সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷”