মালদা, 12 অক্টোবর: চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রতারণা ৷ প্রতারিত তৃণমূলেরই কর্মী-সমর্থকরা ৷ ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে (Fraud in the Name of Giving Employment and Lone) ৷
চাকরি পাইয়ে দেবেন ৷ লোনও করে দেবেন ৷ তৃণমূলের এক রাজ্যনেতার এমন আশ্বাসে ভর করে রঙিন স্বপ্ন দেখেছিলেন এলাকার অনেক যুবক-যুবতী ৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাও ৷ শাসকদলের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সম্পাদককে (এই বোর্ড লাগানো গাড়িতেই তাঁকে ঘুরতে দেখা যেত) তাঁরা তাঁর দাবি মতো ঘুষও দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও কেউ চাকরি পাননি ৷ ব্যাংক লোনও পাননি ৷
টাকা ফেরত পেতে তাঁরা ওই 'প্রতারক' তৃণমূল নেতার খোঁজ করছিলেন ৷ গা-ঢাকা দিয়ে থাকায় অবশ্য কেউ নেতাকে দেখতে পাচ্ছিলেন না ৷ শেষ পর্যন্ত ব্যাংকে এসে আজ এক তৃণমূলকর্মীর চোখে পড়ে যান ওই নেতা ৷ খবর পেয়ে ওই ব্যাংকে চলে আসেন শাসকদলের আরও প্রতারিত কর্মী-সমর্থকরা ৷ নেতাকে ধরে নিয়ে যান স্থানীয় একটি ক্লাবে ৷ ধস্তাধস্তি তো বটেই, তাঁকে মারধরও করা হয় বলে খবর ৷ কোনওমতে 30 হাজার চেক লিখে প্রতারিতদের হাতে দিয়ে আজ সেখান থেকে পালিয়েছে ওই নেতা ৷ দ্রুত সবাইকে টাকা ফেরত না-দিলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতারিত তৃণমূলেরই কর্মী-সমর্থকরা ৷ আজ বিকেলে এই ঘটনায় তোলপাড় হরিশ্চন্দ্রপুর ৷
মালদায় চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা আরও পড়ুন:চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, মহিলার হাতে চড় খেল প্রতারক
অভিযুক্ত নেতার নাম মসিউর রহমান ৷ এলাকায় রাজ্য তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেন তিনি ৷ তিনি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মিঠাপুর গ্রামের বাসিন্দা ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, মসিউর নিজের রাজনৈতিক পরিচয় ভাঙিয়ে এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরি ও লোন করে দেওয়ার নামে কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন ৷ কিন্তু একসময় সবাই বুঝতে পারেন, তাঁরা প্রতারণার শিকার ৷ পাওনা টাকা চাইতে গেলে গা ঢাকা দেওয়া শুরু করে দেন মসিউর ৷ তবে আজ তুলসিহাটার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে এসে ধরা পড়ে যান তিনি ৷
এক প্রতারিত তৃণমূলকর্মী স্বপন আলি বলেন, "এরা তৃণমূল করে না ৷ তৃণমূলকে ভাঙিয়ে বেকারদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করে ৷ চাকরি আর লোন করে দেওয়ার নামে এলাকার প্রচুর যুবক-যুবতীর কাছে এ টাকা নিয়েছে ৷ লোন করে দেওয়ার জন্য আমার কাছেও 50 হাজার টাকা নিয়েছে ৷ আজ ওকে ধরতে পেরেছি ৷ আমি চাই, এদের মতো নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হোক ৷ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক ৷"
আরও পড়ুন:চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেফতার পার্শ্বশিক্ষক দম্পতি
হরিশ্চন্দ্রপুর 1 (বি) ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মানিক দাসের দাবি, সংবাদমাধ্যমের কাছেই বিষয়টি জানতে পারলাম ৷ খোঁজ নিয়ে দেখছি ৷ যদি এই অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে দল ব্যবস্থা নেবে ৷ উনি দলের কেউ কি না তা জানা নেই ৷ তবে মাঝেমধ্যে তাঁকে রাজ্য তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের বোর্ড নিয়ে ঘুরতে দেখেছি ৷
এনিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি৷ দলের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক রূপেশ আগরওয়ালা বলেন, "তৃণমূলের রাজ্য সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে মানুষের অনেক অভিযোগ ছিল ৷ আজ তাঁকে তুলসিহাটার একটি ক্লাবে আটক করে রেখেছে তাঁদের দলের লোকজনই ৷ কারণ, তিনি চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন ৷ মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে, টাকা দিয়ে আর চাকরি পাওয়া যাবে না ৷ তাই মানুষ এখন টাকা ফেরত চাইছেন ৷ যিনি টাকা নিয়েছেন তিনি তৃণমূলের লোক ৷ যাঁরা আটক করে রেখেছেন তাঁরাও তৃণমূলের লোক ৷"