মালদা, 27 জুন: কোরোনা আক্রান্ত ফাস্ট ফুড দোকানের মালিক৷ এই অবস্থাতেই দোকান খুললেন তিনি৷ চলল বিক্রি-বাট্টাও৷ খবর প্রকাশ্যে আসতেই মুহূর্তের মধ্যে সেই দোকান ঘিরে ফেলে পুলিশ ও পৌরসভার লোকজন৷ মালদা জেলার ঘটনা৷ জানা গিয়েছে, মালদা শহরের ফোয়ারা মোড় এলাকায় ওই ব্যক্তির ফাস্ট ফুডের দোকান ছিল৷ ওই দোকানের মালিক কোরোনা সংক্রমিত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই, আতঙ্কে নিজেদের দোকান বন্ধ করার হিড়িক পড়ে যায় ওই ফুটে থাকা অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে৷ খানিক বাদেই PPE কিট পরে সেখানে হাজির এক পৌরকর্মী৷ গোটা ফুট স্যানিটাইজ্ করেন তিনি৷ খবর পেয়ে ছুটে আসেন পৌরসভার প্রশাসক নীহাররঞ্জন ঘোষও৷ যদিও তিনি দূর থেকেই সব দেখে চলে যান৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌরসভার কোভিড অ্যাম্বুলেন্স ওই সংক্রমিতকে নিয়ে যায় মালদা শহরের কোভিড আইসোলেশন সেন্টারে৷
দিনভর ফাস্ট ফুডের দোকান চালালেন কোরোনা আক্রান্ত
মালদায় কোরোনা আক্রান্ত এক ফাস্ট ফুড দোকানের মালিক ৷ এই অবস্থাতেই দিনভর দোকান চালালেন তিনি ৷
সংক্রমিত ওই ফাস্ট ফুড দোকানের মালিকের বাড়ি শহরের বালুচর এলাকায়৷ সম্প্রতি তাঁর বাড়ির পাশে এক পরিবারের দু’জনের লালারসে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ এই দোকান মালিক সেই সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁর লালারস সংগ্রহ করা হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁর মধ্যে কোরোনার কোনও উপসর্গ না থাকায় তিনি নিজের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন৷ আজ সকালেও তিনি নিজের দোকান খুলেছেন৷ সেখান থেকে অনেক লোক খাবারও খেয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে কতজন এই সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন, তার খোঁজ পেতে ঘুম উড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষের৷ ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রশাসক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “আজ মালদা মেডিকেল থেকে কোরোনার রিপোর্ট পেতে একটু দেরি হয়েছে৷ কিন্তু লালারস সংগ্রহের পর এই দোকানদার নিজের ফাস্টফুডের দোকান খুলে অন্যায় করেছেন৷ আসলে, এরা গরিব মানুষ৷ রোজগারের জন্য ঘর থেকে বেরোতে বাধ্য হচ্ছে৷ কিন্তু এতে সাধারণ মানুষেরও সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকছে৷ এই দোকানদারের খবর পেতেই আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে তাঁকে আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে গিয়েছি৷ এই এলাকা ইতিমধ্যে স্যানিটাইজ্ও করা হয়েছে৷”
উল্লেখ্য, গত 24 ঘণ্টায় মালদা জেলায় নতুন কোরোনা সংক্রমিতের সংখ্যা 42৷ গতকাল রাতে মালদা মেডিকেলের ভাইরোলজি বিভাগে এই জেলার 47 জনের লালার নমুনায় সংক্রমণের সন্ধান মিললেও তার মধ্যে 5 জনের দ্বিতীয় দফায় লালা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ নতুন সংক্রমিতদের মধ্যে মালদা শহরেই রয়েছে 20 জন৷ গত 24 ঘণ্টাতেই শহরে সবচেয়ে বেশি কোরোনা সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে৷ সব মিলিয়ে মালদা জেলায় কোরোনা সংক্রমিতের সংখ্যা হল 540৷
মেডিকেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও 829 জনের লালারসের নমুনার পরীক্ষা চলছে৷ এর মধ্যে পুলিশ, সিভিক ও সরকারি কর্মীদেরও নমুনা রয়েছে৷ এদিকে জেলা প্রশাসনের পর কোরোনা এবার হানা দিয়েছে রেল বিভাগেও৷ রেলের এক উচ্চপদস্থ কর্তার লালারসের নমুনায় কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ কয়েকদিন ধরেই তিনি জ্বর সহ অন্যান্য উপসর্গে ভুগছেন৷ আরও জানা গিয়েছে, উপসর্গ নিয়ে তিনি গতকালও দপ্তরে কাজ করেছেন৷ যদিও এনিয়ে এখনও কিছু জানাননি পূর্ব রেলের মালদা ডিভিশনাল ম্যানেজার যতীন্দ্র কুমার৷ তিনি শুধু বলেন, “আমরা গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি৷” এদিকে কোরোনা সংক্রমিত অন্যতম সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দ্বিতীয় দফার লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ফের পজিটিভ এসেছে৷ তিনি বর্তমানে পুরাতন মালদার কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ জেলা জুড়ে দ্রুতগতিতে কোরোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সমস্যায় পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগও৷ এখন যেসব আইসোলেশন সেন্টার ও কোভিড হাসপাতালে সংক্রমিতদের চিকিৎসা চলছে, সেগুলো প্রায় ভরতি হয়ে গিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে আরও আইসোলেশন সেন্টার গঠনের জন্য জায়গা দেখতে শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ৷ দপ্তরের কর্তারা আশা করছেন, আগামীকালের মধ্যেই তাঁরা নতুন আইসোলেশন সেন্টারের জায়গা চূড়ান্ত করে ফেলতে পারবেন৷