মালদা, 22 নভেম্বর: নিজের জীবন দিয়ে 'দাদন' শব্দের মানে বোঝালেন মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক ৷ উত্তরাখণ্ডে কাজে যাবেন বলে ঠিকাদারের কাছ থেকে দাদন বা অগ্রিম টাকা নিয়েছিলেন তিনি ৷ কাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ কিন্তু দাদনের টাকা শোধ হয়নি ৷ তাই বারবার আর্জি জানালেও ঠিকাদার কিংবা কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়নি ৷ শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তাঁর ৷ বুধবার সকালে তাঁর কফিনবন্দি দেহ গ্রামে ফিরে এসেছে ৷ এই ঘটনায় ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসীরা ৷
40 বছর বয়সি সুজন পাহাড়িয়ার বাড়ি পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলদেওরা শিমুলডাঙা গ্রামে ৷ গ্রামটি পুরোপুরি আদিবাসী অধ্যুষিত ৷ বেশিরভাগ মানুষজন শ্রমিকের কাজ করেন ৷ তার মধ্যে অধিকাংশ ভিনরাজ্যে কাজে যান ৷ এক ঠিকাদারের কাছে দাদন অর্থাৎ অগ্রিম নিয়ে মাস তিনেক আগে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে কাজে যান সুজন ৷ দু'মাস কাজ করার পরেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷ সেখানকার এক চিকিৎসকের কাছে যান ৷ তাঁর পরামর্শমতো ওষুধও খান ৷ কিন্তু সুস্থ হননি ৷ তাই তিনি ঠিকাদার ও কোম্পানির কর্তাদের কাছে আর্জি জানান, তাঁকে যেন বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয় ৷ সুস্থ হওয়ার পর তিনি ফের কাজে যোগ দেবেন ৷ কিন্তু তখনও দাদনের টাকা পরিশোধ হয়নি বলে তাঁকে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়নি ৷
দেরাদুনের গ্রামীণ এক চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই তাঁকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল ৷ সুজনের শারীরিক পরিস্থিতি আরও জটিল হলে ঠিকাদারের তরফে তাঁর স্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয় ৷ স্বামীর অসুস্থতার খবর পেয়েই দেরাদুনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন স্ত্রী মাইডি হেমব্রম ৷ গত পরশু তিনি সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে স্বামীকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভরতি করেন ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ মঙ্গলবার ভোরে মৃত্যু হয় সুজনের ৷ গতকালই অ্যাম্বুলেন্সে স্বামীর দেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন মাইডি ৷ বুধবার সকালে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি ৷