পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পরকীয়ার জেরেই মালদায় যুবতিকে খুন, জানাল পুলিশ

ধর্ষণ করে খুন নয় । পরকীয়ার জেরেই খুন করা হয়েছিল যুবতিকে । মালদার ধানতলা থেকে যুবতির দগ্ধ দেহ উদ্ধারের পর পুলিশের তদন্তে এই তথ্য সামনে এসেছে । আজ মৃত যুবতির দেহ শনাক্ত করে পরিবার ।

arrested
ধৃত যুবক

By

Published : Dec 11, 2019, 6:17 PM IST

Updated : Dec 11, 2019, 8:46 PM IST

মালদা, 11 ডিসেম্বর : ধর্ষণ করে খুন নয় । পরকীয়ার জেরেই খুন করা হয়েছিল যুবতিকে । মালদার ধানতলা থেকে যুবতির দগ্ধ দেহ উদ্ধারের পর পুলিশের তদন্তে এই তথ্য সামনে এসেছে । আজ মৃত যুবতির দেহ শনাক্ত করে পরিবার । তিনি শিলিগুড়ির বাসিন্দা ছিলেন । এই ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তার নাম বাপন ঘোষ । তাকে জেরা করেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে । 14 দিনের পুলিশ হেপাজতের আবেদনের জানিয়ে ধৃতকে আগামীকাল মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হবে । আটক করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবকের স্ত্রীকেও ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : মালদায় যুবতির দগ্ধ দেহ উদ্ধার, অভিযোগ ধর্ষণের

5 ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ইংরেজবাজার ব্লকের কোতয়ালি পঞ্চায়েতের ধানতলা গ্রামে আমবাগান থেকে উদ্ধার হয় এক যুবতির অগ্নিদগ্ধ দেহ৷ যুবতির মুখ বিকৃত থাকায় তাঁর পরিচয় জানতে পারছিল না পুলিশ । যুবতির পরিচয় জানতে সোশাল মিডিয়ার সাহায্য নেয় পুলিশ । সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় ৷ দেশের প্রতিটি থানাতেও পাঠানো হয় সেই তথ্য ৷ তারই ভিত্তিতে গতকাল ওই যুবতির পরিবারের খোঁজ পায় মালদা পুলিশ ৷ গতকাল নিউ জলপাইগুড়ি থানায় ওই যুবতির মিসিং ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷ তখনই মালদা থানা থেকে পাঠানো ওই যুবতির দেহের বিভিন্ন অংশ ও অলঙ্কারের ছবি দেখে তা শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা৷ তাঁদের মালদায় নিয়ে আসা হয় ৷ পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গত রাতে আটক করা হয় বাপনকে ৷ পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় । আজ মালদা মেডিকেলের মর্গে যুবতির দেহ শনাক্ত করে পরিবার ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : ধানতলায় ধর্ষণের পরই পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে যুবতিকে, অভিযোগ স্থানীয়দের

মৃত যুবতির নাম ঝুমা দে (25) ৷ শিলিগুড়ির অম্বিকানগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন ৷ কয়েক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল অম্বিকানগরের শান্তিপাড়ার বাসিন্দা মুন্নার সঙ্গে ৷ তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে ৷ যদিও পরে ঝুমা ও মুন্নার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় ৷ ঝুমার বাবা মুকুল দে বর্তমানে কোচবিহারে থাকেন ৷ পরিবার সূত্রে খবর, 2 ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ঝুমা ৷ সেইসময় তিনি এক বন্ধুকে জানান, মালদায় ছোটনের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন তিনি ৷ ছোটনেরই ভালো নাম বাপন ৷ আগে সে ইংরেজবাজারের মিলকি এলাকায় থাকত । তবে পরবর্তীতে সে কোতয়ালি পঞ্চায়েতের শাহজালালপুর গ্রামে তারা কালী মোড়ে থাকত ৷ 4 বছর আগে ভূতনির চরের বাসিন্দা টুম্পা ঘোষের সঙ্গে ছোটনের বিয়ে হয় ৷ তাদেরও দুই সন্তান রয়েছে ৷ বছর তিনেক আগে সে শিলিগুড়িতে একটি পপকর্ন কারখানায় কাজে যোগ দেন । সেখানে কাজ করতেন ঝুমাও ৷ তখন থেকেই তাদের মধ্যে পরিচয় ৷ সেই পরিচয় থেকেই শুরু হয় প্রেম । দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর । যদিও বর্তমানে ছোটন সেই কারখানায় কাজ করে না ৷ ইদানিং সে দুধের ব্যবসা করত ৷ মাঝেমধ্যেই তার সঙ্গে দেখা করতে মালদায় আসতেন ঝুমা ৷ হোটেলে দু-একদিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন ৷ কিন্তু এবার 10 দিন হয়ে গেলেও শিলিগুড়ি ফেরেননি ঝুমা ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : প্রেমিকের থেকে মোবাইল আনতেই মালদায় গিয়েছিল ঝুমা, বলছে বান্ধবী

ঝুমার মা শিবানী দে বলেন, "2 (ডিসেম্বর) তারিখ থেকে মেয়ের কোনও খোঁজ পাচ্ছিলাম না ৷ শিলিগুড়িতে পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরি করি ৷ গতকাল পুলিশ আমাদের এখানে (মালদায়) নিয়ে আসে ৷ সে ছোটন নামে একটি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে মালদায় এসেছিল বলে শুনছি ৷ কিন্তু আমি ছোটনকে চিনি না ৷ আজ আমি মেয়ের মৃতদেহ দেখে তাকে শনাক্ত করেছি ৷ ছোটনই আমার মেয়েকে মেরেছে ৷ 2 তারিখ থেকে মেয়ে বাড়ি না ফেরায় আমি ওর এক বান্ধবীকে তার কথা জিজ্ঞেস করি ৷ সে আমাকে বলে, ছোটনের সঙ্গে দেখা করতে মালদায় গিয়েছে ঝুমা ৷" ঝুমার মাসি গৌতমী সাহা বলেন, "ছোটন কে, তার বাড়ি কোথায়, সেসব আমরা কিছুই জানি না ৷ শুধু শুনেছি, ওর সঙ্গে দেখা করতে ঝুমা মালদায় এসেছিল ৷ এখানে আসার পর ছোটন ওকে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে ৷ আমরা চাই, ছোটনকেও একইভাবে পুড়িয়ে মারা হোক ৷"

মালদায় যুবতি খুনে কী বলছে পুলিশ । ভিডিয়োয় শুনুন...
পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "আজ পরিবারের লোকজন মৃতের দেহ শনাক্ত করেছে ৷ ঝুমার সঙ্গে ছোটনের 2 বছর ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ৷ আমরা সেই যুবককে গ্রেপ্তার করেছি ৷ ছোটনের সঙ্গে দেখা করতে ঝুমা এর আগেও মালদায় এসেছেন ৷ 2 ডিসেম্বর ঝুমা ট্রেনে মালদায় আসেন ৷ স্টেশন থেকে ছোটনই তাঁকে নিয়ে যায় ৷ এরপরেই খুনের ঘটনা ঘটে ৷ এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, ঝুমা সম্প্রতি ছোটনকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন ৷ এ নিয়ে ছোটনের পরিবারে অশান্তি শুরু হয়েছিল ৷ দুই নারীর মধ্যে পড়েই ছোটন এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আপাতত আমাদের ধারণা ৷ খুনের আগে ঝুমাকে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ যে জায়গা থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার হয়েছিল সেখান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই ছোটনের বাড়ি ৷ বাগানের ভিতর দিয়ে দুই জায়গায় যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে ৷ পরিচয় লোপাট করতে মৃতার চেহারা বিকৃত করার জন্যই শ্বাসরোধ করে খুনের পর দেহটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ এ নিয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন৷ ছোটনের স্ত্রীকেও আপাতত আটক করা হয়েছে ৷ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে । ওই এলাকার CCTV ফুটেজ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে ৷"
Last Updated : Dec 11, 2019, 8:46 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details