পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মহদিপুর বাণিজ্য কেন্দ্রে বন্ধ পাথর রপ্তানি, কর্মহীন 3 হাজার শ্রমিক

টানা 24 দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি । কারণ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে মহদিপুর বাণিজ্য কেন্দ্রে । যার জেরে প্রতিদিন 1 লাখ 17 হাজার অ্যামেরিকান ডলার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভারত । শুধু তাই নয়, এর জেরে রুজিরুটির সমস্যা দেখা দিয়েছে মালদা জেলার কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে ।

বিক্ষোভে শ্রমিকরা

By

Published : Apr 30, 2019, 12:54 PM IST

মালদা, 30 এপ্রিল : টানা 24 দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি । কারণ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে মহদিপুর বাণিজ্য কেন্দ্র । যার জেরে প্রতিদিন 1 লাখ 17 হাজার অ্যামেরিকান ডলার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভারত । শুধু তাই নয়, এর জেরে রুজিরুটির সমস্যা দেখা দিয়েছে মালদা জেলার কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি করছেন তাঁরা । যদিও নির্বাচনের বাজারে এই নিয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।

উত্তরবঙ্গের ফুলবাড়ি, চ্যাংড়াবান্ধা, ঘোজাডাঙা, হিলি ও মহদিপুর ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবন্দর হিসেবে পরিচিত । প্রতিদিন এই পাঁচ সীমান্ত দিয়ে লাখ লাখ টাকার পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয় । ইংরেজবাজারের মহদিপুর সীমান্ত দিয়েও প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শস্য, খাদ্যসামগ্রীসহ পাথর, ফ্লাই অ্যাশ রপ্তানি করা হয় প্রতিবেশী দেশে । কিন্তু গত 24 দিন ধরে এই রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে । এর জন্য পাথর কারবারিরা দায়ি করেছেন একটি সংবাদমাধ্যমসহ প্রশাসনকে । দ্রুত এই ব্যবসা চালুর দাবিতে গতকাল তাঁরা সুস্থানি মোড় এলাকায় বিক্ষোভ দেখান ।

এবিষয়ে, গৌড় ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আরজ়াউল ইসলাম বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে পাথর রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে । ফলে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিন হাজার শ্রমিক রুজিরুটির সমস্যায় পড়েছেন । একই অবস্থা হাজার দুয়েক লরি মালিকের । পরিবহণ শ্রমিকরাও বিপর্যস্ত । আমরা কার্যত অনাহারে দিন কাটাচ্ছি । প্রশাসনসহ দুই সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, আমরা যেন কেউ অনাহারে না থাকি । আমরা সবাই যেন সুস্থভাবে বেঁচে থাকাতে পারি ।" আরজ়াউল আরও বলেন, "ভোটের আগে প্রশাসন জানিয়েছিল, 34 নম্বর জাতীয় সড়ক যানজট মুক্ত রাখতে 5 এপ্রিল থেকে এই ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে । ভোট শেষ হলে 24 এপ্রিল থেকে ব্যবসা ফের চালু করা যাবে । কিন্তু 24 তারিখ তো দূর আজও ব্যবসা চালু করা যায়নি । এরই মধ্যে গতকাল এক সংবাদমাধ্যমের তরফে বলা হয় এই ব্যবসা না কি বেআইনি । এই ব্যবসার নামে না কি বাংলাদেশে পাথর পাচার করা হচ্ছে । আমার প্রশ্ন, মহদিপুর দিয়ে যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি করা হয়, ঠিক একই পদ্ধতিতে উত্তরবঙ্গের বাকি 4টি সীমান্ত দিয়েও । তাহলে কীভাবে বাংলাদেশে তা রপ্তানি করা হচ্ছে ? এই অবস্থায় প্রশাসনসহ দুই সরকারের কাছে আমাদের একটাই আবেদন, দ্রুত চালু করা হোক বন্ধ থাকা এই রপ্তানি ব্যবসা । তাহলে শ্রমিক, গাড়িমালিকসহ আমরা সবাই প্রাণে বাঁচব ।"

এলাকায় উপস্থিত এক পাথর কারবারি রবি ঘোষ বলেন, "ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থেকে পাথর এখানে আসে । আমরা সেই পাথর কিনে এক জায়গায় মজুত করি । পরে চাহিদা অনুযায়ী সেই পাথর লরিতে লোড করে মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি করি । এখন গোটা দেশে নির্বাচন চলছে৷ । ভোটের আগে থেকেই পাথরের গাড়ির লোডিং-আনলোডিং বন্ধ রয়েছে । প্রশাসন আমাদের সেই নির্দেশ দিয়েছিল । এখন প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, ব্যবসা বন্ধ থাকায় হাজার দুয়েক লরিমালিক, হাজার তিনেক শ্রমিকসহ এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার মানুষ চরম সমস্যায় পড়েছে । কেউ স্ত্রী'র সোনা বিক্রি করে, কেউ বা বাড়ি-জমি বিক্রি করে লরি কিনেছে । এখন তারা কার্যত পথে বসতে চলেছে । তাই বন্ধ থাকা এই ব্যবসা যেন দ্রুত চালু করা হয় ।"

আজ সুস্থানি মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, পার্কিং এলাকায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এক হাজারেরও বেশি খালি লরি । সুস্থানি মোড়-মহদিপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথেও দাঁড়িয়ে রয়েছে বহু পাথরবোঝাই লরি । এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ডাঁই হয়ে রয়েছে বিভিন্ন সাইজের পাথর । কবে সেই পাথর বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে, কেউ জানে না । এদিকে গোটা বিষয় নিয়ে আজ প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হতে হয়েছে । হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনের ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের কেউই আজ দেখা করতে চাননি ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details