মালদা, 22 জুলাই : সম্প্রতি দেশের 16টি নদীর জলকে পান এবং স্নানের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ । দুভার্গ্যের বিষয়, 16টি নদীর মধ্যে একটি হল রয়েছে মালদার মহানন্দা । মহানন্দা এখন মৃতপ্রায় । আতঙ্কের এই সময়ে মহানন্দাকে বাঁচাতে সক্রিয় হয়েছেন পরিবেশবিদরা । মহানন্দা বাঁচাতে গতকাল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের উদ্যোগে একটি সভা ডাকা হয় । উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টরা । মহানন্দাকে বাঁচাতে কী কী করণীয় তা নিয়ে আলোচিত হয় ওই সভায় ৷
এবছর উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির ফলে মহানন্দার জলস্তর এখন বিপদসীমা ছুঁইছুঁই । তবে মাস দুয়েক আগে ছবিটা ছিল একদম অন্যরকম । তীব্র গরমে মালদার মানুষের যখন হাঁসফাঁস করছে, সেই সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মহানন্দাও । জল কম থাকায় সমস্যায় পড়েন মৎস্যজীবীরা । এক হাঁটু জলে মহানন্দার বুকে ভাসমান আবর্জনা যেন নদীর কঙ্কালসার রূপটাকে প্রকট করে দিচ্ছিল । কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মহানন্দার জলকে শুধুমাত্র পানের জন্য নয়, স্নানেরও অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে । সেই মহানন্দাকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে গতকাল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের মালদা শাখার সভাঘরে একটি সভার আয়োজন করা হয় ।
সভার আহ্বায়ক, গৌড়বঙ্গের প্রখ্যাত পরিবেশবিদ, বর্তমান সময়ে নদী বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম চেনা মুখ তুহিনশুভ্র মণ্ডল বলেন, “কিছুদিন ধরে মহানন্দাকে পর্যবেক্ষণ করেছি । মহানন্দা দূষণে জর্জরিত । দিনে দিনে মহানন্দা নদীতে মাছের সংখ্যা কমছে । ফলে মৎস্যজীবীরাও সংকটে রয়েছেন । মহানন্দা নদীকে এই মুহূর্তেই বাঁচানো দরকার । মহানন্দাকে বাঁচাতে গেলে প্রশাসনকে যেমনকে এগিয়ে আসতে হবে, তেমনই পরিবেশপ্রেমী সংগঠন, সাধারণ মানুষেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে । সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের মালদা জেলার শাখা কর্তৃপক্ষের কাছে মহানন্দা বাঁচাতে জেলার সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে একটি সভার আয়োজন করার আবেদন জানিয়েছিলাম । সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষদের নিয়ে মহানন্দা বাঁচাতে কী করণীয় সেই নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে । সেপ্টেম্বরের শেষে একটি কনভেনশন করার পরিকল্পনা এই সভায় নেওয়া হয়েছে ।”
তুহিনবাবু আরও বলেন, “মহানন্দার বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। এই জায়গা থেকে মহানন্দাকে বাঁচাতে গেলে প্রশাসনকে যেমন দূষণ, নদীর চর দখল, চরের বালি চুরি রুখতে হবে, তেমনই জনগণ এগিয়ে আসতে হবে।”
প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তুহিনবাবু বলেন, “শহরের ছোটো-বড় কারখানা থেকে ক্ষতিকারক কেমিকেল ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি মহানন্দায় পড়ছে । নদীর চর দখল করে দিনের পর দিন বাড়ি ঘর গড়ে উঠছে । শহরের সমস্ত আবর্জনা নদীর তীরে ফেলা হচ্ছে । সমস্ত কিছু নিয়ে আমি কয়েকদিন আগে ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান ও জেলাশাসককে মেইল করেছি । প্রশাসন এবিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রতিক্রিয়াও দিয়েছে । মহানন্দাকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের বড়ো ভূমিকা রয়েছে । রাজ্য সরকার নদী, পরিবেশ নিয়ে বেশ কিছু ইতিবাচক ভাবনা চিন্তা করছে । আমার মনে হয়ে আমরা স্থানীয় পৌরসভা এবং প্রশাসনকে এক্ষেত্রে পাশে পাব । শুধুমাত্র প্রশাসন নয়, ছাত্রছাত্রীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতের কারিগর । সেকারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি, সমস্ত স্তরের ছাত্রছাত্রীদের আমরা এই মহানন্দা বা পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনে যুক্ত করব ।”
চেন্নাইয়ের জলশূন্যতা প্রসঙ্গে তুহিনবাবু বলেন, “গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জের ক্ষেত্রে নদীর একটা বড় ভূমিকা রয়েছে । চেন্নাইয়ের ঘটনা এখন সামনে এসেছে । তবে মালদা বা পশ্চিমবঙ্গও কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে খুব দূরে নেই । আমরাও হয়ত সেই সমস্যার সম্মুখীন হব । বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা, জল অপচয় না করা এসব দিকেও প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে ।”