মালদা, 29 জুন : জলশূন্য চেন্নাই । অদূর ভবিষ্যতে দেশের 21 টি শহরের ভূগর্ভস্থ জলের স্তর শুকিয়ে যাবে । তেমনটাই জানিয়েছে নীতি আয়োগ । আগামীতে দেশের অনেক শহরেই জলসংকট তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা । তাই প্রমাদ গুণেছে ইংরেজবাজার পৌরসভা । ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার যাতে ফুরিয়ে না যায়, তার জন্য ইতিমধ্যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ ।
মালদা শহরের আয়তন 13.25 বর্গ কিলোমিটার । জনসংখ্যা পেরিয়েছে তিন লাখ । 151 বছরের পুরোনো এই শহরের অন্যতম সমস্যা পানীয় জল । এখনও পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করেই শহরবাসীকে তা সরবরাহ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ । তার জন্য শহরের 29 টি ওয়ার্ডে বসানো হয়েছে 59 টি সাবমার্সিবল পাম্প । এই পাম্পগুলি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ গ্যালন জল তুলে নেওয়া হয় । এর সঙ্গে গোটা শহরজুড়ে তৈরি হয়েছে কয়েকশো ফ্ল্যাট বাড়ি । অনেক ফ্ল্যাটেই পৌরসভার অনুমতি না নিয়েই অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে । ইতিমধ্যে গ্রীষ্মকালে তার ফল ভুগতে শুরু করেছে শহরবাসী। ভূগর্ভস্থ জলস্তর প্রতিবছরই নেমে যায় অনেক নীচে । ফলে সাধারণ পাম্প দিয়ে জল উত্তোলন করা যায় না ।
ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ ETV ভারতকে বলেন, "দেশজুড়ে এখন জল সংকট চলছে । অনেক রাজ্যেই মাটির নীচ থেকে এক বিন্দুও জল পাওয়া যাচ্ছে না । ইতিমধ্যে মালদা জেলার বেশ কিছু জায়গাতেও প্রবল জল সংকট দেখা দিয়েছে । এই সংকট থেকে শহরবাসীকে মুক্তি দিতে আমরা মহানন্দা নদীর জল পরিস্রুত করে শহরে সরবরাহ করার প্রকল্প গ্রহণ করেছি । সেই কাজ শুরু হয়ে গেলেও কিছু ভুল থাকায় প্রকল্প খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে । আমরা পরিবর্তিত প্রকল্প রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি । অনুমোদন হয়ে সেই প্রকল্পের টাকাও চলে এসেছে । ফলে থমকে থাকা কাজ ফের শুরু হচ্ছে । ইতিমধ্যে 11-12 টি ওয়ার্ডে নতুন পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে । পাইপ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাকি ওয়ার্ডগুলিতে সেই কাজ স্থগিত ছিল। তবে নতুন পাইপ চলে এসেছে। ফলে বাকি কাজ শুরু হচ্ছে । এটা ঠিক, শহরের বেশ কিছু ফ্ল্যাটবাড়িতে বেআইনি উপায়ে ভূগর্ভস্থ জল অনিয়ন্ত্রিতভাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে । পৌরসভাকে কিছু না জানিয়েই সাবমার্সিবল পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে । জল বিভাগের রিপোর্ট পেয়ে আমরা কয়েকটি ফ্ল্যাটবাড়িকে চিঠি দিয়েছি । সেই ফ্ল্যাটগুলির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে । প্রতিটি ফ্ল্যাটকে ভূগর্ভস্থ রিজার্ভার নির্মাণ করে সেখানে পৌরসভার সরবরাহ করা জলই ধরে রাখতে হবে । তবে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য আমরা এখনও কোনও উদ্যোগ নিতে পারিনি । বৃষ্টিও এখন আর তেমন হয় না । তবে নিজেদের বাঁচাতে গেলে মানুষকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে । জলের অপচয় রোধ করতে হবে । তা না হলে এমন দিন আসতে বেশি দেরি নেই, যেদিন মানুষের কাছে সব থাকবে, কিন্তু জল থাকবে না ।"
নীহাররঞ্জনবাবু বলেন, "আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্ততপক্ষে চারটি বড়ো প্রজাতির গাছ না লাগানো হলে পৌরসভা কোনও ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেবে না । পুকুর ভরাট রুখতে আমরা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হচ্ছি । জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর কোনও জমির পর্চা দেওয়ার আগে সেই জমির মিউটেশন যাতে বাধ্যতামূলক করে তার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা । তাতে কোনও জলাভূমি ভরাট করা হলে তা আগেই ধরা পড়বে । "
বহুতল তৈরিতে অবাধে চলছে ভূগর্ভস্থ জল তোলার কাজ পরিবেশবিদরা বলছেন, "মালদা শহরে প্রতিদিন যে পরিমাণ জল অপচয় হয়, তাতে আরেকটি ছোট শহরের প্রতিদিনের চাহিদা মিটে যেতে পারে । তার উপর একের পর এক ফ্ল্যাটবাড়ি এই অপচয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে । পৌর কর্তৃপক্ষ এসব জানে । কিন্তু রাজনৈতিক কারণে কোনও পৌরবোর্ডই জল অপচয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে না । আর নদী থেকে জল উত্তোলন করে সেই জল কবে সরবরাহ হবে কেউ জানে না । সবচেয়ে বড় বিষয়, মালদা শহরের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক মিশে রয়েছে । ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ যত কমবে, সেই জলে আর্সেনিকের পরিমাণ তত বাড়বে । এভাবে চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এই শহরের বাসিন্দাদের জলের জন্য হাহাকার করতে হবে । এটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ ।"