পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

লকডাউনের মধ্যে মালদার 60টি গরিব পরিবারকে বিল ধরাল বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানি

লকডাউনের মধ্যেই মালদার প্রায় ৬০টি গরিব পরিবারকে বিল ধরাল বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানি ৷ শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর ৷ বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানির মালদা শাখার কোনও আধিকারিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি ।

malda
মালদা

By

Published : Apr 11, 2020, 10:40 AM IST

মালদা, 11 এপ্রিল : লকডাউন এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে প্রান্তিক মানুষদের ৷ আগে প্রাণ বাঁচাতে হবে । এই কথাই মনে করিয়ে দিয়ে তাঁদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে সরকার ৷ একই আবেদন বিশেষজ্ঞদেরও ৷ তাই আপাতত সব বন্ধ ৷ বন্ধ কাজ, রোজগার ৷ কিন্তু পেট চলবে কী করে ? ঘরের মজুত দিয়েই এখন কোনওরকমে দিন গুজরান করছেন তাঁরা ৷ কিন্তু এভাবে আর কত দিন ? সেগুলোও তো ফুরিয়ে যাবে খুব শিগগিরই । তাঁদের কেউ শ্রমিক, কেউ দিনমজুর, কেউবা গৃহ পরিচারিকা ৷ কতদিন তাঁদের এভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালাতে হবে কেউ জানেন না ৷ এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য থেমে থাকেনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানি ৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাতে ধরিয়ে এসেছে বিদ্যুতের আগাম বিল ৷ আর তা হাতে পেয়েই মাথায় বাজ পড়েছে এই গরিব মানুষগুলির ৷ ইংরেজবাজারের কোতোয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের নিমাসরাই গ্রামের ঘটনা ৷ যদিও ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনও কর্তার বক্তব্য মেলেনি ৷

নিমাসরাই গ্রামের প্রায় ৬০টি পরিবার বিদ্যুতের বিল হাতে পেয়ে পড়েছে প্রবল আতান্তরে ৷ এই পরিবারগুলির প্রায় সকলেই দিনমজুর ৷ বাড়ির মহিলাদের অধিকাংশ গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন ৷ লকডাউনে সবার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ পেটের চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাঁদের ৷ আর এর মধ্যেও বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানির লোকজন এলাকায় এসে সবার হাতে তিন মাসের আগাম বিল ধরিয়ে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন সবাই ৷

স্থানীয় গীতা রবিদাস বলেন, "স্বামী মারা গিয়েছে কয়েক বছর আগে ৷ ছেলেরাই এখন সংসার চালান ৷ কিন্তু লকডাউনে কাজ বন্ধ । কেউই কাজে বেরোতে পারছেন না ৷ কীভাবে খাবার জুটবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই ৷ এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কম্পানির লোক এসে হাতে 925 টাকার বিল ধরিয়ে গিয়েছে ৷ সরকার বলেছিল, তিন মাস বিদ্যুতের বিল দিতে হবে না ৷ তারপরেও কেন আমাদের হাতে বিল ধরানো হল বুঝতে পারছি না ৷ এখন বিদ্যুতের বিল দেওয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের ৷" একই বক্তব্য স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মিঠু রায়ের ৷ তিনি টোটোচালক ৷ নিজের টোটো নিজেই চালান ৷ লকডাউন ঘোষণার কয়েকদিন আগেই তিনি জামিলা খাতুন নামে এক মহিলার কাছ থেকে এলাকায় একটি বাড়ি কিনেছেন ৷ তিনি বলেন, "আমাকে যে বিল দেওয়া হয়েছে তা জামিলা খাতুনের নামেই ৷ 2014 টাকার বিল আমাকে ধরানো হয়েছে ৷ লকডাউন ঘোষণার পর টোটো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ হাতে টাকাপয়সা যা ছিল, ঘরে বসে খেয়ে প্রায় সব শেষ ৷ এই অবস্থায় বিদ্যুতের বিল কীভাবে দেব বুঝতে পারছি না ৷ সরকারের বিষয়টি একটু ভেবে দেখা উচিত ৷"

ঘটনা নিয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কম্পানির মালদা শাখার কোনও আধিকারিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি ৷ ফোন ধরেননি কেউ ৷ তবে এই ঘটনা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে BJP ও তৃণমূলের মধ্যে ৷ BJP-র মহিলা যুবমোর্চার জেলা সভানেত্রী সুতপা মুখোপাধ্যায় বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে এই গরিব মানুষগুলির হাতে বিদ্যুতের বিল ধরিয়ে দেওয়া কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না ৷ এটা মানুষগুলির উপর একপ্রকার সরকারি নির্যাতন ৷ অবিলম্বে এই বিলের টাকা জমা নেওয়া স্থগিত করা উচিত ৷" অন্যদিকে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, "বিদ্যুতের সংযোগ নিলে বিল আসবেই ৷ এতে কারও কিছু করার নেই ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিল দেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানাতেই পারেন ৷ রাজ্য সরকার নিশ্চিতভাবেই সেই আবেদন খতিয়ে দেখবে ৷ BJP কখনও মানুষের পাশে দাঁড়ায় না ৷ এই রাজ্যে BJP-র 18জন সাংসদ ৷ বিপদের এই মুহূর্তে কারও দেখা নেই ৷ শুধু রাজনীতি করতে পারেন ওঁরা ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details