দেশিকোত্তম বিধুশেখর শাস্ত্রীর ধর্মস্তম্ভ পরিদর্শনে জেলাশাসক মালদা, 26 নভেম্বর:দীর্ঘ অযত্নে প্রায় জীর্ণ অবস্থা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অবশেষে পদক্ষেপ । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শনিবার দেশিকোত্তম বিধুশেখর শাস্ত্রীর ধর্মস্তম্ভ পরিদর্শন করলেন মালদার জেলাশাসক ৷ পরিদর্শনের পর তা দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন নীতিন সিংঘানিয়া ৷
তিনি বলেন, "গড়গড়ি গ্রামে পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রীর নির্মিত একটি ধর্মস্তম্ভ রয়েছে ৷ স্তম্ভটির সংস্কার কীভাবে করা যায়, তার পুরো নকশা আজ করা হল ৷ এই কাজের জন্য এস্টিমেট তৈরি হয়ে গিয়েছে ৷ তাতে কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে ৷ আমরা দু'তিনদিনের মধ্যে নকশা অনুমোদনের জন্য পাঠাব ৷ সেই অনুমোদন পেলেই আমরা ধর্মস্তম্ভটির সংস্কারের কাজ শুরু করে দেব ৷ স্তম্ভটিকে রক্ষার জন্য পাশের পুকুরে গার্ড ওয়ালও দেওয়া হবে ৷"
জেনে নেওয়া যাক মহান এই পণ্ডিতের আলোকিত ইতিহাস...
হরিশ্চন্দ্রপুরের ভূমিপুত্র দেশিকোত্তম পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী ৷ বাবা ত্রৈলোক্যনাথ ভট্টাচার্য ছিলেন বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ৷ তাঁর কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি ৷ মাত্র 17 বছর বয়সেই কাব্যতীর্থ উপাধি পান বিধুশেখর ৷ এরপর কাশীতে বিখ্যাত পণ্ডিতদের কাছে সংস্কৃতচর্চা করেন ৷ 1906 সালে রবীন্দ্রনাথের অনুগামী ভূপেন্দ্রনাথ সান্যালের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি কাশী থেকে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন ৷ কবিগুরুর ছেলেকে সংস্কৃত পড়ানোর দায়িত্ব পড়ে তাঁর কাঁধে ৷ সংস্কৃতে তাঁর পাণ্ডিত্য নজর কেড়েছিল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের ৷ শান্তিনিকেতনের কাজে তিনি বিধুশেখরকে নিয়োজিত করেন ৷ তাঁর নির্দেশেই বিধুশেখর রচনা করেছিলেন পালি ভাষার প্রথম ব্যকরণ গ্রন্থ ৷ ধীরে ধীরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাহচর্য বাড়ে বিধুশেখরের ৷ তিনি ছিলেন ন্যায় ও আদর্শের পূজারি ৷
ন্যায়ের প্রতীক হিসাবে তিনি বিধুশেখর হরিশ্চন্দ্রপুরের গড়গড়ি গ্রামে একটি ধর্মস্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন ৷ সেই স্তম্ভের নকশা তৈরি করেছিলেন আচার্য নন্দলাল বসু ৷ ধর্মস্তম্ভে ন্যায়ের বাণী খোদ শাস্ত্রীমশাইয়ের ৷ সংস্কৃত ভাষায় সেই বাণী লিখেছিলেন তিনি ৷ তার বঙ্গানুবাদ করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ৷ এখনও সেই স্তম্ভে দুই ভাষার বাণী খোদাই করা রয়েছে ৷ তবে সময়ের সঙ্গে তা কিছুটা অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে ৷ এই স্তম্ভের উদ্বোধনে আসার কথা ছিল কবিগুরুর ৷ দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু ঠিক সেই সময়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি ৷
ফলে বিধুশেখর নিজেই ধর্মস্তম্ভের উদ্বোধন করেন ৷ সেই স্তম্ভই ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়ায় ৷ একটি পুকুরের পাশে সেই স্তম্ভটি নির্মিত ৷ পুকুরের পাড় ভাঙছে বেশ কয়েক বছর ধরেই ৷ স্থানীয় মানুষজন স্তম্ভটি রক্ষা করার জন্য একাধিকবার ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৷ কাজ হয়নি বলে অভিযোগ ৷ শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কানে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ তাঁর নির্দেশে শনিবার সেই স্তম্ভ পরিদর্শন করতে যান খোদ মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া ৷ সঙ্গে ছিলেন চাঁচলের মহকুমাশাসক-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা ৷ একই সঙ্গে জেলাশাসক এ দিন বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ৷
আরও পড়ুন:
- ইটিভি ভারতের খবরের জের, 20 বছরের শিকলবন্দি দশা কাটিয়ে চিকিৎসার পথে বরুণ !
- অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছিলেন, মুম্বই হামলার 15 বছরে সেই ছোটু চা-ওয়ালার সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত
- ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য ও আচরণের প্রতিবাদ, বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হল একাধিক হোটেল