মালদা, 22 এপ্রিল : একই হাসপাতালে কোরোনা আক্রান্তদের সঙ্গে সাধারণ জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ৷ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তর মালদার BJP সাংসদ ৷ তিনি বিষয়টি নিয়ে দ্রুত জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন ৷ তবে এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি প্রশাসনের কোনও কর্তা ৷
জেলাগুলিতে কোরোনা আক্রান্ত কেউ ধরা পড়লে তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ যেন না ছড়াতে পারে, তার জন্য আলাদা কোরোনা হাসপাতাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ৷ সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাঁচল ও পুরাতন মালদা এলাকায় দুটি নার্সিংহোমকে অধিগ্রহণ করা হয় ৷ এনিয়ে ঝামেলাও হয় চাঁচলে ৷ সেখানকার মানুষ এলাকার ওই নার্সিংহোমকে কোরোনা হাসপাতাল করতে দিতে নারাজ ৷ যদিও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে সেই সমস্যা মিটে যায় ৷ তবে পুরাতন মালদার বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় যে নার্সিংহোমকে কোরোনা হাসপাতাল হিসাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাতে কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি ৷ অবশ্য সূত্রের খবর, এখনও সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি ৷ দ্রুত সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে ৷
কোরোনা মোকাবিলায় মালদা কতটা প্রস্তুত, তা দেখতে সম্প্রতি জেলায় আসেন কোরোনা নিয়ে গঠিত রাজ্য সরকারের গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি কমিটির সদস্য অভিজিৎ চৌধুরি ৷ মালদা মেডিকেলের আইসোলেশন ওয়ার্ড খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তিনি জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন ৷ বৈঠকে জানিয়ে দেন, মালদা মেডিকেল থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ড সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে অন্যত্র ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে মেডিকেলে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেসের (SARI) অর্থাৎ সাধারণ জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের চিকিৎসাও ঠিক নয় ৷ তিনি তার জন্য শহর সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি নার্সিংহোম অধিগ্রহণ করার পরামর্শ দেন ৷ এরপরই তেমন নার্সিংহোমের সন্ধানে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা ৷ এই নার্সিংহোমগুলিকেই SARI হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয়েছে ৷ যদিও এখনও পর্যন্ত সেই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি ৷
প্রাথমিকভাবে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর পুরাতন মালদার নারায়ণপুরে কোরোনা হাসপাতাল হিসাবে অধিগৃহীত নার্সিংহোমের দ্বিতীয় তলে SARI চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ সেখানে রয়েছে 30টি বেড ৷ ইতিমধ্যে SARI চিকিৎসার জন্য সেখানে কাজ চলছে জোরকদমে ৷ ওই হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলে রয়েছে আরও 70টি বেড ৷ সেগুলি কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে ৷ স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে সেই খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এখনও পর্যন্ত এই জেলায় কোরোনা পজ়িটিভ রোগীর সন্ধান না মিললেও কেউ যে কোরোনায় সংক্রমিত হবে না তা বলা যায় না ৷ সেক্ষেত্রে একই জায়গায় কোরোনা আক্রান্তদের সঙ্গে সাধারণ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট উপসর্গে ভরতি রোগীদের চিকিৎসা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কি অনেকটা বেড়ে যাবে না?
এনিয়ে জেলা প্রশাসন কিংবা স্বাস্থ্য দপ্তরের কেউ সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে রাজি নন ৷ তবে বিষয়টি জেনেই উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনি বলেন, "এই একই ভুল করায় কলকাতা-সহ দেশের বেশ কিছু হাসপাতালে কোরোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে ৷ সেই হাসপাতাল সিল করে দিতে হয়েছে ৷ আরও সমস্যায় পড়ছে সাধারণ রোগীরা ৷ একই ছাতার তলায় কোরোনা সংক্রমিতদের সঙ্গে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের চিকিৎসা হলে তার ফল বিপজ্জনক হতে পারে ৷ সংক্রমণ আরও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে ৷ আমি বিষয়টি নিয়ে দু-একদিনের মধ্যেই জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করব ৷ এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাব ৷ এই মুহূর্তে কোরোনা সংক্রমণ যাতে না ছড়াতে পারে, তার দিকেই সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত ৷"