মালদা, 9 ফেব্রুয়ারি: ব্যাংক প্রতারণা চক্রের নয়া নকশার সন্ধান পেল মালদা সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ ৷ আর হানিট্র্যাপ কিংবা ইন্টারনেটে বিভিন্ন সামগ্রীর লোভনীয় অফার নয়, এবার ব্যাংকের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকেও ক্লোন করছে দুর্বৃত্তরা (Cyber Crime Information)৷ বিষয়টি সামনে আসতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পুলিশের ৷ সাইবার প্রতারণা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেছে মালদা জেলা পুলিশ ৷
প্রতারণা চক্রের এই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক চিকিৎসক ৷ তিনি জানান, প্রায় আট মাস আগে তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে ৷ ওই মেসেজে জানানো হয়, তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হচ্ছে ৷ মেসেজের সঙ্গে একটি ওয়েবসাইটের লিংকও দেওয়া ছিল ৷ লিংকটি হুবহু ব্যাংকের মতোই ৷ তা দেখে তিনি সেই লিংকে ক্লিক করেন ৷ সঙ্গে সঙ্গে যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্ট, সেই ব্যাংকের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম খুলে যায় ৷ সেখানে নিজের নেট ব্যাংকিংয়ের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নিজের অ্যাকাউন্ট লগ ইনও করেন ৷ পরে দেখা যায়, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে 2 লাখ 98 হাজার 500 টাকা উধাও ৷ এই নিয়ে গত 18 জুলাই মালদা সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি ৷ পরবর্তীতে পুলিশ তাঁর খোয়া যাওয়া 2 লাখ 27 হাজার টাকা উদ্ধার করে ৷
আরও পড়ুন :লটারির লোভে 200 বার টাকা পাঠান অপরাধীকে ! 72 লক্ষ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হিমাচলের বাসিন্দা
চিকিৎসকের অভিযোগ পেয়েই ঘটনার তদন্তে নামে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ (Malda Cyber Crime Police Station)৷ পুলিশের তরফে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেখা যায়, চিকিৎসকের অ্যাকাউন্ট থেকে একই ব্যাংকের ভোপাল ও মেদিনীপুর জেলার দু'টি অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে ৷ পুলিশের কথায়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ ওই দুটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয় ৷ ওই দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে 2 লাখ 27 হাজার টাকা উদ্ধারও করা হয় ৷ সেই টাকা ওই চিকিৎসককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷
ব্যাংক প্রতারণা চক্রের এই নয়া নকশা দেখে চমকে যায় সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ ৷ তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতারিত ওই চিকিৎসক দুষ্কৃতীদের পাঠানো যে ওয়েব লিংকে ক্লিক করেছিলেন, সেটি ওই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মের হুবহু ক্লোনিং ওয়েবসাইট ৷ দুটি ওয়েবসাইটের ইন্টারফেসও এক ৷ এতেই ধোঁকা খাচ্ছেন প্রতারিতরা ৷
এই নিয়ে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, "বর্তমানে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের প্রচলন খুব বেশি ৷ শুধু নতুন প্রজন্মই নয়, অনেক প্রবীণও অনলাইন পেমেন্টে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন ৷ এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে প্রতারকরা ৷ আমরা সবাইকে বলছি, অনলাইন পেমেন্ট করার আগে সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে নিন ৷ ব্যাংক, কোনও সংস্থা কিংবা অন্য কেউ মোবাইলে ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইলে সবাই যেন সেই সংস্থার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন ৷ সাইবার ক্রাইম নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে একাধিক সচেতনতা শিবির করেছি ৷ স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদেরও এনিয়ে সচেতন করা হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন :কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে সাইবার ক্রাইম, সচেতন করতে মাঠে নামলেন পুলিশ কর্তারা