ভোট বয়কটের ডাক হরিশচন্দ্রপুরে মালদা, 16 মে: ক’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তজমুল হোসেন দাবি করেছিলেন, তাঁর এলাকায় কোনও সমস্যা নেই ৷ শুধু কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ৷ তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হরিশচন্দ্রপুর কেন্দ্রে একাধিক সমস্যা রয়েছে ৷ আর মন্ত্রী কি না, শুধু কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটির দাবি করলেন ! ফলে তজমুল হোসেনের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ ৷ তাঁর এলাকাতেই রাস্তা ও পানীয় জলের সমস্যার অভিযোগে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের লক্ষ্মণপুরে 81 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করল স্থানীয়রা ৷ সমস্যা না-মিটিয়ে ভোট চাইতে এলে মন্ত্রীকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা ৷
প্রশাসনিক সভায় শুধু বিদ্যুতের খুঁটি দাবি করে স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েছিলেন মন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ সোশাল মিডিয়ায় ট্রোলের শিকার হন তিনি ৷ এবার তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এলাকাছাড়া করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷ জাতীয় সড়ক অবরোধকারীদের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সমস্যার সমাধান না-করলে, ভোট বয়কট করা হবে ৷
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রায় দু’দশক ধরে ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মণপুর, ঝিকোডাঙা, ডুমুরকলা, কনার, পাড়ুই-সহ একাধিক গ্রামের রাস্তা বেহাল ৷ লাল মাটির রাস্তা ছোট-বড় গর্তে ভর্তি ৷ বেহাল রাস্তার জন্য গ্রামে বড় গাড়ি ঢুকতে চায় না ৷ রোগীদের খাটিয়ায় চাপিয়ে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয় ৷ বর্ষার সময় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে ৷ সমস্যা মেটাতে একাধিকবার জেলা প্রশাসন-সহ নেতা-মন্ত্রীদের কাছে আবেদন জানানো হলেও কাজ হয়নি ৷ আর ভোট ছাড়া তো এলাকায় মন্ত্রী তথা বিধায়ককে দেখা যায় না ৷ তাই এদিন তাঁরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছেন ৷
এক বিক্ষোভকারী তসিবুল রহমানের অভিযোগ, 2001 সালে শেষবার রাস্তার মেরামতির কাজ হয়েছিল ৷ তারপর 20 বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কাজ হয়নি ৷ নেতা-মন্ত্রীরা শুধু ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ৷ এখন তাঁদের এলাকা বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী ৷ তিনি চাইলে মুহূর্তের মধ্যে রাস্তা ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা ৷ এলাকার পানীয় জলের সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, মানুষ এখনও পুকুর কিংবা স্যালো মেশিন থেকে জল তুলে তা পান করে ৷ প্রশাসনের কাছে সমস্যা নিয়ে গেলে, তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ করেছেন তসিবুল রহমান ৷ তাই তাঁদের হুশিয়ারি রাস্তা আর পানীয় জলের সমস্যা না মিটলে এবার ভোট দেবেন না কেউ ৷
আরও পড়ুন:বেহাল রাস্তা সংস্কার না-হলে ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি গ্রামবাসীদের
আরেক বিক্ষোভকারী মহম্মদ আসাদ আলিরও একই অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রাস্তা আর পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছেন ৷ কিন্তু কেউ সমস্যা মেটানোর কথা ভাবেনি ৷ ওই এলাকা থেকে মাত্র 2 কিলোমিটারের মধ্যে মন্ত্রী তজমুল হোসেনের বাড়ি ৷ কিন্তু, তিনি কোনওদিন লক্ষ্মণপুরে এসে এলাকার সমস্যা দেখেননি বলে অভিযোগ ৷ নিজেদের সমস্যা মেটাতে স্থানীয়রা জনজাগরণ কমিটি তৈরি করেছে ৷ কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাস্তা আর পানীয় জলের সমস্যা না-মিটলে এবং প্রতিশ্রুতি মতো এলাকায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি না-হলে, 30-35টি বুথের মানুষ ভোট বয়কট করবে ৷
আবার কেউ কেউ সরাসরি হুমকির সুরে জানিয়েছেন, মন্ত্রী এবার ভোট চাইতে আসলে তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়া হবে ৷ রাস্তা আর পানীয় জলের দাবিতে গত নভেম্বর মাসেও গ্রামবাসীরা বিডিও, এসডিও, জেলাশাসক এবং দুই মন্ত্রীকে গণস্বাক্ষর করা স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল ৷ তাঁদের মধ্যে তজমুল হোসেনও ছিলেন ৷ কিন্তু, কেউ কোনও গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ ৷ তাই এবার ভোটের সময় লক্ষ্মণপুরে এলে তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার কথা বলেছেন গ্রামবাসীরা ৷ যদিও, এ নিয়ে মন্ত্রী তজমুল হোসেনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি ৷