মালদা, 3 জুন : কোরোনা আবহের মধ্যেই পুরাতন মালদার কোর্ট স্টেশন চত্বরে এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে রেল পুলিশ না মালদা থানা কে মৃতদেহটি সরাবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আর এই দ্বন্দ্বের জেরে তিন ঘন্টা কড়া রোদের মধ্যে পড়ে থাকে মৃতদেহটি। যদিও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠিয়েছে মালদা থানার পুলিশ ৷
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম ঝাঁটু মণ্ডল৷ বয়স ৪৫ বছর ৷ একসময় এই এলাকায় তার বাড়িঘর, পরিবার, সব ছিল৷ কিন্তু এখন সে ভবঘুরের জীবনযাপন করত৷ প্রতিদিন মদ্যপানের নেশা ছিল তার৷ তবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জানা যাবে৷
আজ সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দেখা যায়, কোর্ট স্টেশন চত্বরে পড়ে রয়েছে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ ৷ এলাকার সবাই তাকে চেনে৷ যেহেতু সে ভবঘুরের জীনযাপন করত, তাই তার এমন মৃত্যুতে কোরোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় ৷ কেউ মৃতদেহের সংস্পর্শে যায়নি ৷ অবশেষে খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর শিবাঙ্কর ভট্টাচার্য ৷ তিনি ওই ব্যক্তির এক আত্মীয়কে খবর দেন৷ খবর পেয়ে ছুটে আসেন সেই আত্মীয় মেনকা মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, “আমার ভাশুরপো হয় ৷ বাবা-মা অনেক আগেই মারা গিয়েছে ৷ এলাকার হোটেলগুলিতে থাকত, খেত৷ আগে কখনও রিকশা চালাত, ছোটখাটো ব্যবসা করত৷ একসময় ওর বাড়ি, বউ, দুই ছেলেমেয়ে এখানেই ছিল৷ কয়েক বছর আগে বউ ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে বাবার বাড়ি চলে যায়৷ আর সে ফিরে আসেনি৷ তবে প্রতিদিন মদ্যপান করত ৷ গতকাল রাতেও খুব মদ খেয়েছিল৷ শরীর খারাপ ছিল৷ আজ সকালে আমার ছেলে ওকে চা-বিস্কুট খাওয়ায় ৷ তারপরেই শুনি, মারা গিয়েছে৷ আমার ধারণা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে৷”
কাউন্সিলার শিবাঙ্করবাবু বলেন, "এই লোকটি এখানেই থাকত ৷ এককথায় ভবঘুরে ৷ সম্প্রতি সবজির ব্যবসা শুরু করেছিল ৷ একসময় ওর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে এখানেই থাকত ৷ তবে তারা ওকে ছেড়ে চলে যায় ৷ তারা কোথায়, তা এখনও জানা যায়নি ৷ তবে এই লোকটি অত্যাধিক মদ্যপান করত৷ আজ বেলা ১২টা নাগাদ খবর পাই, ঝাঁটু মারা গিয়েছে ৷ তার মৃতদেহ পড়ে রয়েছে ৷ সেকথা শুনে আমরা এখানে আসি ৷ মালদা থানা ও ব্লক প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয় ৷ এখন আমরাই মৃতদেহটি পুলিশের সাহায্যে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছি ৷ ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে৷”
তবে স্টেশন চত্বরে ঝাঁটু মণ্ডলের মৃতদেহ পড়ে থাকলেও তিন ঘণ্টা দেহটি সরাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি রেলপুলিশ কিংবা মালদা থানা ৷ মৃতদেহ কোন এলাকায় রয়েছে তা নিয়ে দুই পুলিশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় ৷ যদিও শেষ পর্যন্ত মালদা থানার পুলিশই দেহটি উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে ৷ রাজ্যেরই দুই পুলিশের এহেন দ্বন্দ্বে এলাকার মানুষজনের মধ্যে কৌতুহল ছড়িয়েছে ৷