মাকে পাকা বাড়িতে রাখার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল মালদা, 10 মে: মায়ের পেটে থাকতেই মারা গিয়েছিলেন বাবা জুল্লুর রহমান ৷ জন্মের পর থেকে মা'ই ছিলেন রহিমের একমাত্র অভিভাবক ৷ বড় এক দিদি অবশ্য আছেন ৷ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর বিয়ে করার কথা ভাবেননি রংফুল বেওয়াও ৷ কখনও লোকের বাড়িতে কাজ করে, কখনও জমিতে মজুর খেটে মেয়ে আর ছেলেকে বড় করেছেন ৷ মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন ওভাবে ৷ মেয়ে ফতেমা খাতুনের বিয়ের পর থেকে ছেলে রহিমই ছিল তাঁর পৃথিবী ৷ আজ সেই ছেলের সঙ্গে তাঁর নাড়ির বন্ধন ছিন্ন ৷ বিষয়টি মানতে পারছেন না গ্রামের কেউ ৷
প্রতিদিনের মতো আজও গ্রামের মসজিদ থেকে ভোরের আজানের আওয়াজ ভেসে আসছিল ৷ ঠিক সেই সময় হুটার বাজিয়ে পুরাতন মালদার মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েতের কদমতলি গ্রামে ঢোকে অ্যাম্বুল্যান্স ৷ ভিতরে কফিনবন্দি 25 বছরের রহিম ৷ সেই খবর চাউর হতেই মুহূর্তের মধ্যে রহিমদের বাড়ির সামনে হাজারো মানুষের ভিড় ৷ প্রত্যেকেই একবার তাঁকে শেষ দেখা দেখতে চান ৷ অত ভিড়ে থতমত খেয়ে যান বৃদ্ধা রংফুল বেওয়াও ৷ আগেই খবর পেয়েছিলেন, ছেলে আর নেই ৷ তখন থেকেই কথাবার্তা বন্ধ তাঁর ৷ ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর ৷ তাঁর চোখে জলও দেখতে পাননি কেউ ৷ গ্রামবাসীরা জানালেন, এবার পাকা বাড়ি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রহিম ৷
আরও পড়ুন:বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখে উচ্চমাধ্যমিক দিল মেয়ে, ফিরে করল মুখাগ্নি
তাঁর খুব ইচ্ছে ছিল, মাকে দালান বাড়িতে রাখবেন ৷ বাড়ি তৈরির জন্য ইটও কিনে রেখেছিলেন ৷ ঠিক ছিল, হরিয়ানা থেকে গ্রামে ফিরে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেবেন ৷ সেই ইট থেকেই গেল ৷ গত 8 এপ্রিল হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে টাওয়ারের কাজ করতে গিয়েছিলেন রহিম ৷ গত রবিবার বিকেলে টাওয়ারের মাথায় কাজ করার সময় সেফটি বেলট ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যান তিনজন ৷ তাঁরা তিনজনই মালদার বাসিন্দা ৷ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই রহিমের মৃত্যু হয় ৷ তাঁর সঙ্গে মারা যান রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈকণ্ঠপুর গ্রামের 27 বছরের আমিরুল মিয়াঁ ৷
গুরুতর আহত হন বাহারালেরই সাহাপুর গ্রামের হুমায়ুন শেখ ৷ বুধবার রহিম আর আমিরুলের দেহ বাড়িতে নিয়ে আসা এসেছে ৷ হুমায়ুন এখনও গুরগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ রহিমের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মহম্মদ আহমাদুল্লা বলেন, "মাকে নিয়েই ছিল রহিমের সংসার ৷ খুব গরিব ওরা ৷ বাড়িতে সে ছাড়া আর কেউ উপার্জন করার মতো নেই ৷ পেটের দায়ে হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে টাওয়ারের কাজ করতে গিয়েছিল ৷ হরিয়ানা সরকারের বিদ্যুৎ দফতরের কাজই করছিল সে ৷"
আরও পড়ুন:বিয়ের তিন মাসের মাথায় আত্মঘাতী বধূ, নেপথ্যে স্মার্টফোন !
তিনি আরও বলেন, "আমরা শুনেছি, তার ছিঁড়ে তারা তিনজন উপর থেকে নীচে পড়ে যায় ৷ রহিম আর রতুয়ার একটি ছেলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৷ আমাদের এলাকায় কাজ নেই ৷ ফলে এলাকার লোকজনকে বাইরে কাজে যেতেই হয় ৷ রহিমের অকাল মৃত্যুর পর তার মায়ের জন্য উপার্জনের আর কেউ থাকল না ৷ আমরা চাই, রাজ্য সরকার এবং রহিমদের ঠিকাদার সংস্থা যতটা সম্ভব ওর মাকে আর্থিক সাহায্য করুক ৷ তাহলে ওর মা বেঁচে থাকতে পারবে ৷"